Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩
Sukanta Majumdar

ভোটের পর দিলীপ-বাহিনী ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’! আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে না পারায় ক্ষমাপ্রার্থী সুকান্ত

বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের স্বীকারোক্তি, ‘‘সে সময় কর্মীদের পাশে যে ভাবে দাঁড়ানো উচিত ছিল, আমরা সে ভাবে দাঁড়াতে পারিনি। আমি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’’

দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার।

দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৩৯
Share: Save:

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের কাছে পরাজয়ের ধাক্কা খাওয়ার পর দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বাধীন রাজ্য বিজেপি ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ হয়ে পড়েছিল। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ শো ‘অ-জানাকথা’য় এমন মন্তব্যই করলেন রাজ্য বিজেপির বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

Advertisement

গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যে রাজনৈতিক অশান্তির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। বিজেপি কর্মীদের উপর আক্রমণের অভিযোগ ওঠে বাংলার শাসকদলের বিরুদ্ধে। সে বিষয়ে আপাতত আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত চলছে। সম্প্রতি সেই মামলায় তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পালকে ডেকে জেরা করেছে সিবিআই। সেই মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডলও। কিন্তু বিজেপি কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ভোটের ফলপ্রকাশের পর ‘আক্রান্ত’ বিজেপি কর্মীদের পাশে দাঁড়ায়নি ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেন (রাজ্য বিজেপির সদর দফতর)। এই প্রসঙ্গে দলের কর্মীদের কাছে আবার ‘ক্ষমা’ চাইলেন সুকান্ত।

বস্তুত, শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব লাইভ ‘অ-জানাকথা’য় সুকান্তকে ওই বিষয়ে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। তাতে ক্ষোভের সুর স্পষ্ট। তার জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘রাজ্য সভাপতি হিসাবে প্রথম বক্তব্য দেওয়ার সময় বলেছিলাম, যে ভাবে আমাদের কর্মীদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে, তাতে দলের যাঁরা নেতা ছিলেন, তাঁরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন। এ ধরনের অশান্তি আমরা অনুধাবন করতে পারিনি। বলা ভাল, আমাদের কোনও প্ল্যান-বি ছিল না।’’ এর পরেই বিজেপি রাজ্য সভাপতির স্বীকারোক্তি, ‘‘সে সময় কর্মীদের পাশে যে ভাবে দাঁড়ানো উচিত ছিল, আমরা সে ভাবে দাঁড়াতে পারিনি। আমি এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’’

তবে পাশাপাশিই সুকান্তের অভিযোগ, বাংলায় ‘রাজনৈতিক হিংসা’ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে কোচবিহারে গিয়েছিলাম। আমার এক কর্মী প্রায় দু’বছর পর বাড়ি ফিরেছেন। তিনি ঘরছাড়া হয়ে অসমে ছিলেন। বাড়ি ফিরে আসার পরেও অত্যাচার শুরু হয়েছে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। এ ধরনের বর্বরতা গণতন্ত্রে মেনে নেওয়া যায় না। মধ্যযুগীয় বর্বরতার সময় কোনও ক্রীতদাসের সঙ্গেও এ ধরনের আচরণ করা হত কি না সন্দেহ!’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ‘অভাবনীয়’ উত্থানের পর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পদ্মশিবির। শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের কাছে দুরমুশ হতে হয় বিজেপিকে। তিন অঙ্কেও পৌঁছতে পারেনি তাদের আসনসংখ্যা। ২ মে ভোটের ফলপ্রকাশে সেই ‘ধাক্কা’র পরেই বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ কার্যত উধাও হয়ে যান! রাজ্য বিজেপির তদানীন্তন পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কেও দেখা যায়নি। যদিও ভোটের ফলপ্রকাশের পর দিন, ৩ মে কলকাতায় এসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এক দিন থেকেই তিনি কলকাতা ছাড়েন। বিজেপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই তখন একে একে দিল্লি ফিরে যান। ফলে ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনা কী ভাবে প্রতিরোধ করা হবে এবং দলের কর্মীদের মনোবল বাড়াতে কী ভাবে পাশে দাঁড়াতে হবে, সে ব্যাপারে দলীয় নেতৃত্ব সঠিক দিশা দেখাতে পারেননি বলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ ক্ষুব্ধ হন।

২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দিলীপের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পরও ওই প্রসঙ্গে দলের কর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন সুকান্ত। কিন্তু তদানীন্তন দলীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ যে এখনও যায়নি, তা প্রশ্নের ধরনেই বোঝা গিয়েছে। ঘটনাচক্রে, পরের বছরই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পর ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। দু’টি নির্বাচনই রাজ্য বিজেপির কাছে ‘পরীক্ষা’। যেমন পরীক্ষা সভাপতি সুকান্তের কাছেও। রাজ্য বিজেপি সভাপতি জানেন, কর্মীরা অতীতের ঘটনা মনে রাখলে ভোটের সময় এবং তার পর তাঁদের মাঠে-ময়দানে পাওয়া যাবে না। সেই কারণেই তিনি সরাসরি ক্ষমা চেয়ে ক্ষোভ প্রশমনে উদ্যোগী হয়েছেন বলে রাজ্য বিজেপির একাংশের অভিমত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.