Advertisement
E-Paper

পিছনে বড় রাজনীতির চক্রান্ত, দাবি দু’শিবিরেই

এক ছাত্রীর যৌন হয়রানির ঘটনার তদন্তকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে উঠে আসছে এক বৃহত্তর রাজনীতির অঙ্কও। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অভিজিৎ চক্রবর্তীকে উপাচার্য নিয়োগ করা নিয়ে যাদবপুরে অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছিলই। ছাত্রী-নিগ্রহকে কেন্দ্র করে আন্দোলনেও তার আঁচ এসে পড়ে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৩

এক ছাত্রীর যৌন হয়রানির ঘটনার তদন্তকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে উঠে আসছে এক বৃহত্তর রাজনীতির অঙ্কও।

শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অভিজিৎ চক্রবর্তীকে উপাচার্য নিয়োগ করা নিয়ে যাদবপুরে অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছিলই। ছাত্রী-নিগ্রহকে কেন্দ্র করে আন্দোলনেও তার আঁচ এসে পড়ে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। খোদ উপাচার্য নিজেও দাবি করেছেন, “এটা সুপরিকল্পিত চক্রান্ত।” বিশেষত বামপন্থী শিক্ষকদের একাংশ পড়ুয়াদের আন্দোলনে উৎসাহিত করেছিলেন বলে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি। তাঁদের অভিযোগ, অভিজিৎবাবুকে সরানোর লক্ষ্যেই বামপন্থী শিক্ষকরা ছাত্র আন্দোলনকে ব্যবহার করতে চাইছিলেন। অন্য দিকে বামপন্থী শিবিরের অভিযোগ, শাসক দলের কাছে নিজের ‘যোগ্যতা ও আনুগত্যে’র প্রমাণ দিতেই অতি সক্রিয় হয়ে পুলিশ ডেকেছিলেন উপাচার্য। ছাত্র আন্দোলন দমন করে নিজের নম্বর বাড়ানোই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই বলছেন, ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের পিছনে বামপন্থী শিক্ষকদের মদত রয়েছে আঁচ করেই পাল্টা পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, নানা প্রশাসনিক টালবাহানার পরে অভিজিৎবাবু যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে কাজ করছেন। শীঘ্রই তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হবে। তবে সম্ভাব্য স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে রাজ্য তিন জন প্রার্থীর যে প্যানেল তৈরি করেছে, তাতে অভিজিৎবাবুর নাম রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, বুধবারই এই তিনটি নাম নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বাছাই-পর্বের এই শেষ লগ্নে নিজেকে ‘কড়া’ প্রশাসক হিসেবে প্রমাণ করার তাগিদ অভিজিৎবাবুর রয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, বামপন্থী মোকাবিলায় তিনি যে যোগ্যতম, মাঝরাত্তিরে পুলিশ ডেকে সেই বার্তাই দিয়ে রাখলেন অভিজিৎবাবু।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তেমন জোরালো নয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রেরই খবর, গত কয়েক মাসে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি যে ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জোরালো হয়ে উঠছিল, তাতে কিছুটা হলেও রাজনৈতিক আশঙ্কায় ভুগছিলেন উপাচার্য ও তাঁর অনুগামীরা। সে ক্ষেত্রে ছাত্রদেরও একটা কড়া বার্তা দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

সম্প্রতি ইতিহাস বিভাগের এক ছাত্রীর নিগ্রহের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ও অতিবামপন্থী ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। পড়ুয়াদের অভিযোগ ছিল, নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাসক দল সমর্থিত কর্মী সংগঠনের কয়েক জন সদস্য ঘটনায় যুক্ত থাকা সত্ত্বেও তাঁদের আড়াল করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনের (জুটা) সদস্য নেই, কিন্তু রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর মেয়েকে রাখা হয়েছে, পড়ুয়ারা তা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, উপাচার্য-বিরোধী এই আন্দোলন শুরু হতেই পিছন থেকে সমর্থন জোগাতে শুরু করেন বামপন্থী শিক্ষকদের অনেকে। মঙ্গলবার রাতে কিছু বামপন্থী শিক্ষকও পরোক্ষ ভাবে ছাত্র-আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন বলে খবর। উপাচার্যও এ দিন বলেন, “ছাত্রদের দোষ দিই না। এদের যারা তাতিয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা উচিত।” তাঁর নিজের ‘তৃণমূলপন্থী’ তকমা নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি বলেন, “এটা যারা বলছে, তারাই কালকের ঘটনার মূল চক্রী।” অর্থাৎ অভিজিৎবাবু নাম না করে বামপন্থী শিক্ষকদের প্রতিই আঙুল তুলছেন। যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন জুটা-তে বামপন্থীরাই সংখ্যাগুরু।

জুটা-র সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্তর কথাতেও কিন্তু আন্দোলনে তাঁদের সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট। নীলাঞ্জনাদেবীর কথায়, “এক দল বলছেন, আমরা ছাত্রদের মদত দিয়েছি। আর এক দল বলছেন, আমরাই মার খাইয়েছি। আমরা ছাত্রদের ঘেরাও করতে বলিনি, অবস্থান করতে বলেছিলাম।” বুধবার জুটার সদস্য-শিক্ষকরা প্রত্যাশিত ভাবেই মঙ্গলবার রাতের ঘটনার নৈতিক দায় উপাচার্যের উপরে চাপিয়েছেন। কেউ বা তাঁর পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন। এ দিন সন্ধ্যায় জুটা-র সদস্যরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন।

যাদবপুরের ছাত্র সংসদ সূত্রের খবর, এর আগে বিভিন্ন বৈঠকে ছাত্র ও শিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা উপাচার্যকে বলেছিলেন, কোনও পরিস্থিতিতেই যেন ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢোকানো না হয়। উপাচার্য তাতে সম্মত ছিলেন। “মঙ্গলবার রাতে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি পুলিশকে ব্যবহার করতে পিছপা হবেন না,” বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অনেকেরই বক্তব্য, রাজনৈতিক ক্ষমতাও ব্যবহার করেছেন উপাচার্য। তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুচরেরা পুলিশে মিশে ছাত্রছাত্রীদের মেরেছেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ও তার বাইরে বহিরাগত যুবকদের ভিড় দেখা গিয়েছে। পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের অনেকেই মুকুন্দপুর-সন্তোষপুর-কাটজুনগর-বিবেকনগর এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। তৃণমূলের একাংশ বলছেন, যাদবপুরের ছাত্র হস্টেল থেকে যাতে আরও বেশি পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারেন, তা দেখতে ওই কর্মীদের মোতায়েন করা হয়। ভিতরে যখন পুলিশ মারছে, তখন বাইরে তাঁরা পাহারার দায়িত্বে ছিলেন। যদিও শাসক দলের স্থানীয় নেতা, ১০ নম্বর বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্তর দাবি, “খোঁজ নিয়ে দেখেছি ভিতরে বা বাইরে আমাদের কেউ ছিল না। অশিক্ষক কর্মীরাই ঘোরাঘুরি করেছেন।”

jadavpur university vice chancellor clash molestation kolkata news latest news online news latest news online
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy