Advertisement
E-Paper

লাঠির ‘জোরে’ রতন চান বলিউড জিততে

হাতে একটা মোটা বাঁশের লাঠি। সেই লাঠিই যেন তাঁর ডান পা। সেই ‘ডান পা’ দিয়েই তাক লাগিয়ে দিলেন বছর আঠাশের যুবক রতনকুমার মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৪৭
অনুষ্ঠানের মঞ্চে রতনকুমার মণ্ডল। সোমবার, ধর্মতলায়।    ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

অনুষ্ঠানের মঞ্চে রতনকুমার মণ্ডল। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

হাতে একটা মোটা বাঁশের লাঠি। সেই লাঠিই যেন তাঁর ডান পা। সেই ‘ডান পা’ দিয়েই তাক লাগিয়ে দিলেন বছর আঠাশের যুবক রতনকুমার মণ্ডল। সোমবার সকালে ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে বলিউডের গান ‘‘কিউ কি তুম হি হো’’ -র সঙ্গে রতনের নাচ দেখে মুগ্ধ সবাই। কে বলবে রতন পোলিয়োতে আক্রান্ত। তাঁর ডান পা পুরোপুরি অকেজো। রতনের স্বপ্ন মুম্বই গিয়ে তিনি বলিউডের কোরিওগ্রাফার হবেন।

রতন অবশ্য তাঁর ডান পায়ের এই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তাঁর দু’চোখে স্বপ্ন অনেক দূর পথ চলার। নাচের শেষে স্টেজের পিছনে দাঁড়িয়ে রতন বলেন, ‘‘বলিউডের এক জন সফল কোরিওগ্রাফার হতে চাই। রেমো ফার্নান্ডেজ আমার গুরু। রাত জেগে ওঁর ভিডিও দেখে নাচ শিখি। শ্যামনগরে ও ইছাপুরে নাচের স্কুল চালাই। ওই স্কুলে বলিউডের নাচের প্রশিক্ষণ দিই।’’

জলপাইগুড়ির রাজবাড়িপাড়ায় বাড়ি রতনের। কিন্তু কলকাতায় চলে এসেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। তার পর থেকে শ্যামনগরে থাকেন। রতন বলেন, ‘‘আমার পাঁচ বছর বয়সে পোলিয়ো ধরা পড়ল। ধীরে ধীরে ডান পা অকেজো হয়ে গেল। ছোট থেকেই নাচতে খুব ভালবাসি। পোলিয়ো হওয়ার পরে প্রথমে মনে হয়েছিল জীবন থেমে গেল। আর কোনও দিন নাচতে পারব না।’’

কিন্তু এই হতাশা কাটিয়ে উঠতে বেশি দিন লাগেনি। রতন জানান, একটা মোটা বাঁশকে তিনি ডান পায়ের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করে ফের ধীরে ধীরে নাচ শুরু করেন। প্রশিক্ষণ নেন এক স্থানীয় শিক্ষকের কাছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে থাকেন।

রতনের কথায়, ‘‘ নাচের কোনও প্রতিযোগিতা হলে আমি সব সময় সংগঠকদের জানিয়ে দিই আমি প্রতিবন্ধী বলে যেন দয়া দেখানো না হয়। আমি যদি ভাল নাচি তাহলেই আমাকে পুরস্কৃত করবেন।’’ শুধু স্থানীয় নাচের অনুষ্ঠানেই পুরষ্কার পেয়েছেন এমন নয়, টিভির একটি জনপ্রিয় নাচের প্রতিযোগিতায় রতন ২০১৪ সালে রানার্স হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই পুরস্কার আমাকে আরও বেশি স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করেছে।’’

ইছাপুর ও শ্যামনগরে রতন যে নাচের স্কুল খুলেছেন, সেখানে অসংখ্য কচিকাঁচার ভিড়। স্কুলে রতনের সঙ্গে অবশ্য আরও কয়েক জন শিক্ষক রয়েছেন। রতন বলেন, ‘‘আমি নাচের সঙ্গে বাচ্চাদের শেখাই যে, মনের জোর আর স্বপ্ন দেখতে জানলে সব প্রতিবন্ধকতাই জয় করা যায়। আমার বাঁশের লাঠিটাই যে আসলে আমার ডান পা, সেটা দেখিয়েই ওদের মনের জোর বাড়াই।’’

এ দিন রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মেলনে উঠে আসে একাধিক দাবি। সারা রাজ্য থেকে আসা কয়েক হাজার প্রতিবন্ধী এই সম্মেলনে যোগ দেন। রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সাধারণ সম্পাদক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই রাজ্যে এখনও প্রতিবন্ধী আইন কার্যকরী হচ্ছে না। এই আইন দ্রুত কার্যকরী না হলে আমরা মার্চ মাসে আইন অমান্য করব।’’ জমায়েত হওয়া প্রতিবন্ধীদের অভিযোগ, তাঁরা প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়মিত পাচ্ছেন না। তাঁরা সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনেরও দাবি জানান এ দিন।

specially Abled man Bollywood Choreographer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy