পুড়ে যাওয়া সোহরাবের বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) ও তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠল নিহত তৃণমূল নেতার দাদা ও অনুগামীদের বিরুদ্ধে। রবিবার সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে সাদাইপুর থানা এলাকার সাহাপুরে। আগুন লাগানোর আগে লুঠপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় নিহত নেতা আবুল কালামের দাদা শেখ ফজল, তাঁর আত্মীয় শেখ কারিবুল, শেখ হাবুল, শেখ এনামুল, শাহাজাহান-সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতি থেকে মোটরবাইকে করে সাহাপুরে বাড়িতে ফিরছিলেন তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ আবুল কালাম। নিরাময় যক্ষা হাসপাতালের কাছাকাছি দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলি করে। মারাত্মক জখম অবস্থায় সিউড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে মৃত্যু হয় তাঁর। ওই দাপুটে নেতা খুনে বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাত, ব্যক্তি আক্রোশ, না কি গোষ্ঠী কোন্দল এই নিয়ে ধন্দ্ব থাকলেও দাদা শেখ ফজল দুবরাজপুর থানায় পরের দিন যে আভিযোগ করেন, তাতে নাম ছিল সাহাপুর পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্য (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) শেখ সোহরাব আলি, তাঁর ভাই শেখ আনার ও খুড়তুতো ভাই কবীর হোসেন, নবির হোসেন এবং শেখ বাবলু ও শেখ গিয়াস-সহ ৬ জনের। অভিযোগের পরের দিনই নিহত নেতার অনুগামীরা শেখ বাবলু ও শেখ গিয়াসকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও বাকি অভিযুক্তেরা এলাকা ছাড়েন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ দিন সোহরাবের বাড়িতে দেখা গিয়েছিল নবির হোসনকে। তার পরই সোহরাবের বাড়ি ঘিরে ফেলেন নিহত নেতার লোকজন। সোহরাব আলির স্ত্রী ফতেমা বিবি এবং আনারের স্ত্রী সানহার বিবিদের অভিযোগ, “সকালে বোমা-বন্দুক নিয়ে আচমকা হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। প্রথমে তারা আমাদের স্বামী কোথায় আছে জানতে চায়। কাউকে না পেয়ে বাড়ি ও গোয়ালঘরে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।” সোহরাবের খুড়তুতো ভাই শেখ জাকির ও শেখ জাহাঙ্গীরদের দাবি, “ওখানে হামালা চালিয়ে এখানে এসে আমাদের বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেয় নিহত কালামের লোকেরা। সেই সময় বাড়িতে আমাদের দুই বোন, মা এবং বৌদি ছিলেন। তখন দুষ্কৃতীরা রান্নাঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। দমকল, পুলিশ আসার আগে সব পুড়ে শেষ।”
এ দিনের ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তৃণমূলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্রের দাবি, “নেতা খুনে এখনও চার অভিযুক্তকে পুলিশ ধরতে পারেনি। এ দিন এক অভিযুক্তকে এলাকায় দেখা গিয়েছিল। গ্রামের মানুষ যখন তাকে ধরবে বলে ঠিক কেরে তখনই পালানোর জন্য নিজেরাই সেই আগুন লাগিয়েছে।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতির এই যুক্তি মানতে নারাজ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলি। তাঁদের দাবি, “এমনিতেই মিথ্যা মামলায় আমাদের ফাঁসানো হয়েছে। অথচ ঘর ছেড়ে বাইরে থাকতে হচ্ছে। তার উপর নিজেদের বাড়িতে আগুন লাগাতে যাব কেন?” এলাকা ও পুলিশ সূত্রের খবর, শেখ সোহরাব আলির সঙ্গে মিহত আবুল কালেমের বিবাদ দীর্ঘদিনের। বিরোধের আরও কারণ, তৃণমূল করলেও দলের টিকিট না পাওয়ায় বিক্ষুব্ধ তৃণমূল হিসেবে লড়ে সাহাপুর পঞ্চায়েতে ১৩টি আসনের পাঁচটি দখল করেন সোহরাবরা। যাঁদের মধ্যে অনিতা দাস, রকেয়া বিবি, মমতাজ বিবি নামে তিন জন মহিলা সদস্য ছিলেন। তবে শেখ জামরুল নামে এক সদস্য কিছুদিন আগে মারা গিয়েছেন। অভিযোগ, নির্বাচিত সদস্য হিসেবে কেউ পঞ্চায়েতে যেতে পারতেন না মূলত কালামের দাপটেই। এমনকী পঞ্চায়েতে শপথ নিতেও যেতে হয়েছিল দুবরাজপুর ব্লক অফিসে। এই নিয়ে জল বহুদূর গড়িয়েছিল। বর্তমানে সকলেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক রামকৃষ্ণ রায়ের দাবি, “আমাদের দলে যোগ দেওয়ার কারণে এখন আক্রমণ আরও তীব্র হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy