Advertisement
E-Paper

গোঁজের গুঁতোয় জেরবার তৃণমূল

‘নির্দল’ মারতে গিয়ে তাঁর হাত-গন্ধ হয়েছিল। বেশি দিনের কথা নয়। ভুলে যাওয়ার কথা তো নয়ই। মোটে বছর তিনেক আগে, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘নির্দল’ (পড়ুন, বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) প্রার্থীদের বোমা মারতে বলে তিনি নাম কুড়িয়েছিলেন। তৃণমূলের সেই বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলেরই সম্পর্কিত বেয়াই পুরভোটে টিকিট না পেয়ে বোলপুরে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৩১

‘নির্দল’ মারতে গিয়ে তাঁর হাত-গন্ধ হয়েছিল।

বেশি দিনের কথা নয়। ভুলে যাওয়ার কথা তো নয়ই। মোটে বছর তিনেক আগে, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘নির্দল’ (পড়ুন, বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) প্রার্থীদের বোমা মারতে বলে তিনি নাম কুড়িয়েছিলেন।

তৃণমূলের সেই বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলেরই সম্পর্কিত বেয়াই পুরভোটে টিকিট না পেয়ে বোলপুরে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। অনুব্রত দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা থেকে তাঁকে আটকাতে পারেননি। বরং বলেছেন, ‘‘এর জন্য ওঁর সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্কে ভাটা পড়বে না।’’

তবে যতই পারিবারিক সুসম্পর্ক বজায় রাখুন, এই নির্দল ওরফে ‘গোঁজ’ প্রার্থী নিয়ে কোনও গোলমাল পাকলে যে দলনেত্রী তাঁকে ছেড়ে কথা বলবেন না, অনুব্রতর তা ভালই জানা আছে। তাই এটাও যোগ করে দেন—‘‘মা-মাটি-মানুযের বিরুদ্ধে যখন ভোটে দাঁড়িয়েছেন, উনি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বটেই। তবে বোলপুরে ২০টা ওয়ার্ডেই আমরা জিতব। তাই এ নিয়ে ভাবছি না।’’

অনুব্রত না ভাবলেও, তৃণমূলের তাবড় নেতারা চিন্তিত। কারণ শুধু বোলপুর নয়, রাজ্যের যে ৯১টি পুরসভায় শনিবার ভোট হতে যাচ্ছে, তার প্রায় সবগুলিতেই প্রার্থিপদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতারা ‘নির্দল’ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়়েছেন। এঁদের অনেকেই এলাকায় জনপ্রিয়। কেউ বিদায়ী কাউন্সিলর, কেউ প্রাক্তন জেলা নেতা। জিততে যদি না-ও পারেন, নিজের নাক কেটে তৃণমূলের যাত্রাভঙ্গ করার ক্ষমতা এঁদের অনেকেরই আছে।

যেমন, শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়ছেন বছরখানেক আগেও তাঁর একান্ত অনুগামী বলে পরিচিত অরবিন্দ ঘোষ ওরফে অমু। বামফ্রন্টের মেয়র পদপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য যেখানে দাঁড়িয়েছেন, সেই ১৬ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূলের পথের কাঁটা গোঁজ। পুরুলিয়ায় ‘নির্দল’ তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় নিজেই। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতির এক মাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ‘নির্দল’। বাম, বিজেপি, কংগ্রেস— তিন বিরোধী দল তাঁকেই সমর্থন করছে।

আজই, বৃহস্পতিবার পুরভোটের প্রচার শেষ। অথচ এই শেষবেলাতেও বিরোধীদের টক্কর নেওয়ার বদলে গোঁজ সামলাতে জেরবার তৃণমূল। গোঁজ প্রার্থীদের ব্যক্তিগত পরিচিতি বা তৃণমূল পরিচয় যাতে ভোটারদের ‘বিভ্রান্ত’ না করে, তার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

নেতাদের অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করছেন, যাঁরা ‘গোঁজ’ হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের অনেকেই নিজের এলাকা হাতের তালুর মতো চেনেন। এত দিন দলে থাকার সুবাদে তৃণমূল কী ভাবে ভোট করে আর কী ভাবে তা ভেস্তে দিতে হয়, সেই ব্যাকরণও তাঁদের জানা। মুখ দেখে ভোট হলে তাঁদের আটকানো মুশকিল।

বিপদ আরও বেড়েছে এই গোঁজ প্রার্থীদের অনেকেই জোড়াপাতা প্রতীক নেওয়ায়। যেমন, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ৪০৬টি ওয়ার্ডে ২১৬ জন নির্দল প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। তাদের বেশির ভাগেরই প্রতীক জোড়াপাতা। জোড়াফুলের সঙ্গে গুলিয়ে দিতেই যে এই কৌশল তাতে সন্দেহ নেই। শুধু প্রতীক নয়। স্লোগান থেকে দেওয়াল লেখা, সবই হুবহু তৃণমূলের কায়দায়। অনুব্রত যতই ‘মা-মাটি-মানুষ’ ছাপ্পা নিয়ে বড়াই করুন, বহু জায়গাতেই গোঁজ প্রার্থীদের ব্যানারে-ফ্লেক্সে লেখা হয়েছে— ‘মা-মাটি-মানুষ সমর্থিত নির্দল প্রার্থীকে জোড়াপাতা চিহ্নে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।’’

পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো যে, সোমবার নদিয়ার তাহেরপুরে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সামনে রেখে ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করতে হয়েছে জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে। তাতে কল্যাণী, শান্তিপুর ও বীরনগরের চার জনের নাম করে বলা হয়েছে, তাঁরা দলের কেউ নন। বীরনগরের নন্দদুলাল রায় ও গোবিন্দ পোদ্দার বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর। এ বার তাঁরা টিকিট না পেয়ে ‘নির্দল’ হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।

তমলুক পুরসভায় ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডেই লড়ছেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা। পুরাতন মালদহে দলের প্রাক্তন ব্লক ও টাউন সভাপতি, সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন সভাপতি ও টিএমসিপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি-সহ পাঁচ জন গোঁজ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বনগাঁ শহর তৃণমূলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, গোবরডাঙায় প্রাক্তন যুব তৃণমূল সভাপতি নির্দল হয়েছেন। বাঁকুড়া এবং খড়্গপুরেও পাঁচটি করে ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী দাঁড়িয়ে গিয়েছে।

না হলে কি ক’দিন আগে বাঁকুড়ায় সভায় শুভেন্দুকে বলতে হয়— ‘‘চটের আড়ালে প্রার্থীর নাম না দেখে, তৃণমূলের প্রতীক দেখে ভোট দেবেন!’’

Anubrata Mandal Mamata Bandopadhyay trinamool tmc rebel candidate BJP congress Ashok Bhattacharya CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy