Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Mukul Roy

ছাঁটা দাড়ি, কালো চুল, সাদা কুর্তা-পাজামা আর জ্যাকেট, সেই পুরনো ‘অবতারে’ ফিরে যেতে মরিয়া মুকুল

সোমবার রাতে দিল্লি পৌঁছানোর পরে মুকুল রায়ের চেহারায় যে অবিন্যস্ততা, কথায় অসংলগ্নতা ছিল, তা বুধবার থেকে অনেকটাই উধাও। মুকুল বার বার প্রমাণ করতে চেয়েছেন তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ।

image of TMC leader Mukul Roy

২১ মাস তৃণমূলে কাটিয়ে পদ্মে ফেরার ‘বার্তা’ দিয়ে চেহারার ভোল বদলালেও পুরনো ‘অবতার’ হয়ে ওঠা মুকুলের পক্ষে কঠিন। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:২৮
Share: Save:

দিল্লি পৌঁছনোর পরে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলায় ‘পরিবর্তন’ চেয়েছেন তিনি। কাগজে-কলমে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায় তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ‘পরিবর্তনের’ কথা জানিয়েছেন। ভোলবদল ঘটিয়েছেন তাঁর চেহারাতেও।

সোমবার রাতে দিল্লি বিমানবন্দরে তাঁকে দেখা গিয়েছিল পাকা চুল, অবিন্যস্ত দাড়ি আর আলুথালু পোশাকে। বুধবার বিকেলে দিল্লির এক হোটেলে দেখা গেল মুকুলের মাথায় পরিপাটি করে ছাঁটা কালো চুল। চিবুক থেকে ঝুলছে সদ্য ‘ট্রিম’ করা দাড়ি। সাদা কুর্তা-পাজামার উপর বাহারি গাঢ় হলুদ স্লিভলেস জ্যাকেট। রাজনীতিকেরা যেমন পরেন। সেই পুরনো মুকুলের ‘লুক’। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, হোটেলের পার্লারে ঘণ্টা আড়াই সময় কাটিয়েছেন তিনি।

শুধু পোশাক আর চেহারা নয়, মুকুলের আচরণেও দেখা গিয়েছে আগের ‘অবতারে’ ফিরে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা। ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া এবং পারকিনসন্‌সে আক্রান্ত ৭০ বছরের নেতা প্রাণপণে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি পুরোপুরি সুস্থ। সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে উন্মুখ। বলেছেন, ‘‘আমি তো বিজেপিতেই রয়েছি। দল ‘প্রোগ্রাম’ (কর্মসূচি) দিলেই যাব।’’

২০২১-এর ১১ জুন তৃণমূলে ‘প্রত্যাবর্তন’ ঘটানোর কয়েক মাস পর থেকেই অসংলগ্ন কথা শোনা যাচ্ছিল মুকুলের মুখে। প্রশ্ন উঠেছিল তাঁর মানসিক স্থিতি নিয়ে। স্ত্রীবিয়োগ হওয়ায় তাঁর মানসিক অবস্থা ভাল নেই— এমনই বলা হচ্ছিল মুকুলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে। কিছু দিন আগে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারও হয়েছে। কাউকে না জানিয়ে মুকুল আচমকা দিল্লি চলে যাওয়ার পর ছেলে শুভ্রাংশুও প্রকাশ্যে বাবার ‘শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতার’ কথা বলেছেন। বলেছেন, সোমবার রাতে দিল্লি বিমানবন্দরে সাংবাদিকরা তাঁর আগমনের কারণ জানতে চাইলে মুকুল বলেছিলেন, ‘‘বাঃ, দিল্লি আসব না। আমি তো দিল্লির সাংসদ!’’ যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু বুধবার দেখা গিয়েছে অবিন্যস্ত চেহারা বদলের পাশাপাশি অসংলগ্ন কথাতেও রাশ টানার বিষয়ে সচেতন মুকুল।

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসে বিধায়ক হয়ে ফের তৃণমূলে ফিরে যাওয়া মুকুল এখন বলছেন, তিনি বিজেপিতেই ছিলেন। সেই সূত্রেই বাংলায় ‘পরিবর্তন’ চান বলে জানিয়েছিলেন মুকুল। সেই সঙ্গে জানিয়েছিলেন, কেন তিনি তৃণমূলে ফিরেছিলেন আর বিজেপিতে ফেরার জন্য কী ভাবে চেষ্টা করছেন। তৃণমূল অবশ্য মুকুলের এ সব দাবিকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মুকুল বিজেপিরই বিধায়ক। মুকুলের দিল্লিযাত্রা সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘‘কে কোথায় যাবেন, সেটা তাঁর অধিকার। উনি বিজেপির বিধায়ক রয়েছেন।’’

বুধবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে মুকুল বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ভাল নয়। সেখানকার বর্তমান শাসকদল তার জন্য দায়ী। বিজেপি সুযোগ দিলে রাজ্যে আমি দলকে ভাল জায়গায় পৌঁছে দেব।’’ কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মুকুল সম্পর্কে উৎসাহী নন ‘তাঁর দল’ বিজেপির রাজ্য নেতারা। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ সরাসরি মুকুলকে ‘লস্ট কেস’ বলে চিহ্নিত করে বলেছেন, ‘‘ওঁকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কারও সময় নেই।’’ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীকে দলে নিয়ে ‘কী লাভ হবে’, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়ে দিয়েছেন মুকুলকে দলে ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্য দিকে, মুকুলের বিজেপি-যোগ প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি যথেষ্ট স্বনির্ভর, এ রকম প্রত্যাখ্যাত হওয়া মানুষকে নেতা বানানোর আমাদের কোনও প্রয়োজন নেই’’

ইতিহাস বলছে, ২০২০-র সেপ্টেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার তিন বছরের মাথায় দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মুকুলকে। আর গত তিন দিনের ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে, ২১ মাস তৃণমূলে কাটিয়ে পদ্মে ফেরার ‘বার্তা’ দিয়ে চেহারার ভোল বদলালেও পুরনো ‘অবতার’ হয়ে ওঠা মুকুলের পক্ষে কঠিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mukul Roy TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE