Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মুকুলে আস্থা হারিয়েই কি অস্ত্র অভিষেক

তৃণমূলে অভিষেকের ‘অভিষেক’ নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে চর্চা অব্যাহত। সারদা-রেল যোগাযোগ নিয়ে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের মন্তব্যের পর থেকেই তাঁকে নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে দলে। মুকুলকে আপাতত পিছনে ঠেলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে দিয়েছেন তাঁর ভাইপো এবং তরুণ সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

তৃণমূলে অভিষেকের ‘অভিষেক’ নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে চর্চা অব্যাহত।

সারদা-রেল যোগাযোগ নিয়ে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের মন্তব্যের পর থেকেই তাঁকে নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে দলে। মুকুলকে আপাতত পিছনে ঠেলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে দিয়েছেন তাঁর ভাইপো এবং তরুণ সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দলের অনেকেই বলছেন, “এ যেন এত দিন আহমেদ পটেলের উপর ভরসা করে দল চালানোর পরে রাহুল গাঁধীকে এগিয়ে দেওয়ার মতোই!” বৌবাজারে নির্বাচনী সভায় সোমবার দলের প্রথম সারির সব নেতার উপস্থিতিতে তৃণমূলের ‘রাহুল গাঁধী’ হিসাবেই যেন অভিষেক হয়েছে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের।

কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়ার কাছে যেমন তাঁর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ, তেমনই তৃণমূল নেত্রীর মুখ্য রাজনৈতিক মন্ত্রণাদাতা হিসাবে দীর্ঘ দিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন মুকুলই। কিন্তু সারদা-কাণ্ডে সিবিআইয়ের তৎপরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলের অন্দরের সমীকরণও প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে। নিজের পরিবারের অভিষেকই এখন তৃণমূলের অন্দরের মইয়ে দলনেত্রীর কাছাকাছি আর মুুকুল আপাতত সাপের মুখে! দলের গোটা শীর্ষ নেতৃত্বকে হাজির করে অভিষককে দিয়ে বৌবাজারে অমিত শাহের পাল্টা সভা করিয়ে মুকুলকে বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী।

এবং জল্পনা এখানেই থেমে নেই! বৌবাজারে সভার পর দিনই মঙ্গলবার শহরে তৃণমূলের ছাত্র-যুব এবং যুবার মহামিছিলে কিন্তু আসেননি অভিষেক। পূবর্র্ ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে এ দিন বসিরহাটে নির্বাচনী জনসভাতেও তিনি যাননি। দলের অন্যতম কাণ্ডারী হিসেবে মুকুল এ দিন বসিরহাটে নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি মুকুলকে এড়াতেই তৃণমূল ‘যুবা’র সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বসিরহাটের দিকে পা মাড়ালেন না? প্রশ্ন আরও বেশি করে উঠেছে বিশেষত এই কারণেই যে, আগের রাতে বৌবাজারে দলের সমস্ত নক্ষত্র নেতাদের উপস্থিতিতে অভিষেকের যখন ‘অভিষেক’ ঘটছে, তখন তাৎপর্যপূর্ণ অনুপস্থিতি ছিল একমাত্র মুকুলেরই!

অভিষেক অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর জ্বর হয়েছে বলে এ দিনের কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছে। তবে দলের মধ্যেই একাংশের ব্যাখ্যা, সারদা-কেন্দ্রিক যে সমস্ত ঘটনা এ দিন ঘটেছে, তাতে ‘কুৎসা-বিরোধী’ প্রচার-মিছিল কতটা মানুষের মনে দাগ কাটবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি ছিল বলেই অভিষেক ওই কর্মসূচি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। মিছিলের ভার ছেড়ে দিয়েছেন শঙ্কুদেব পণ্ডা, সৌমিত্র খান, সৌরভ চক্রবর্তীদের উপরেই।

আবার মুকুল-শিবির দাবি করছে, বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূল লোকসভা ভোটে প্রায় ৩৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল। তাই উপনির্বাচনে দলের জয় নিশ্চিত করতে মুকুলকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রীই। নবান্নে সোমবারই দলনেত্রীর সঙ্গে মুকুলের দীর্ঘ বৈঠকও হয়েছে। দলনেত্রীর পরামর্শ মেনেই বসিরহাটে মুকুলকে বেশি সময় দিতে হচ্ছে। তার মধ্যে সময় বার করে চৌরঙ্গিতেও প্রচারে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

দাবি, পাল্টা দাবি যা-ই হোক, সারদা-বিতর্কের জেরে তৃণমূলের অন্দরের বিভাজন এবং বিভ্রান্তি এখন স্পষ্ট। তৃণমূল নেতাদের একাংশ যেমন বলছেন মুকুল-মমতার দূরত্বের ফলে অভিষেককে রাহুলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে, তেমনই শাসক দলে এখন মুকুল ও মমতার দুই গোষ্ঠী হয়েছে বলে কংগ্রেসের নেতৃত্বও দাবি করছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, “মমতা-মুকুল গোষ্ঠীর বিভাজন আছে বলেই তো অভিষেককে অবতীর্ণ হতে হয়েছে! মুকুল তৃণমূলে সমান্তরাল সংগঠন তৈরি করছেন বলেই দলনেত্রীকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ভাইপোকে সংগঠনের শীর্ষে নিয়ে আসছেন।”

তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে দলে গৃহযুদ্ধের ছায়া দেখছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহও। তবে অভিষেককে তিনি গুরুত্বই দেননি। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের আক্রমণের জবাব দিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসরে নেমেছিলেন অভিষেক। আর তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিষেকের নাম উচ্চারণ না করেই ‘ভাইপো’, নবজাত শিশু, প্রথম বারের সাংসদ বলে তাচ্ছিল্য করেছেন সিদ্ধার্থনাথ।

অভিষেক সোমবার বলেছিলেন, “কেউ যদি দিল্লি থেকে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে চায়, তাকে আবার দিল্লি ফিরে যেতে হবে!” সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “কলকাতা দেশেরই অংশ। দিল্লি থেকে এখানে কোনও বিজেপি নেতা এলে আপত্তি উচিত নয়। আমরা তো বিদেশি নই। আমরা তো আপনাদের মতো ভোট বাড়ানোর জন্য বিদেশি, মানে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ব্যবহার করি না!” সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “আসলে প্রথম বারের সাংসদ, নবজাত শিশু ওই ভাইপো সব জানেন না! ওঁর তো ডায়াপারে থাকা উচিত! না হলে পোশাক নোংরা হবে।” রাহুল গাঁধীর সঙ্গে অভিষেকের তুলনার প্রসঙ্গ টেনে সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “রাহুল এবং তাঁর দলের যে অবস্থা লোকসভা ভোটে হয়েছে, তেমন অবস্থাই এই শিশুরও হবে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE