Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নবিকে বলই বাড়াচ্ছেন না ঘাসফুলের সতীর্থরা

খেলার মাঠে বিপক্ষের তেকাঠি তিনি চিনতে ভুল করেন না। অনায়াসে জালে বল জড়িয়ে দেন। ময়দানে তিনি পরিচিত ‘ইউটিলিটি প্লেয়ার’ হিসেবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাণ্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৬
Share: Save:

খেলার মাঠে বিপক্ষের তেকাঠি তিনি চিনতে ভুল করেন না। অনায়াসে জালে বল জড়িয়ে দেন। ময়দানে তিনি পরিচিত ‘ইউটিলিটি প্লেয়ার’ হিসেবে।

কিন্তু ঘাসফুলে ছাওয়া এই মাঠে তিনি আনকোরা। বিপক্ষের জোট-হাওয়া তো রয়েছেই, তাঁকে থামাতে এখন এককাট্টা দলেরই চার যুযুধান নেতা! বিধানসভা ভোটে টিকিট পাওয়া নিয়ে এই সে দিন পর্যন্ত তাঁদের আকচা-আকচি চলছিল প্রবল ভাবে। কিন্তু তাঁর নাম ভেসে উঠতেই চার নেতা ভোল বদলেছেন। তাঁরা চাইছেন, তাঁদের কাউকে প্রার্থী করা হোক।

কিন্তু রাজনীতির বাইরে কাউকে নৈব নৈব চ।

চার যুযুধান নেতা যাঁর টিকিট পাওয়া আটকাতে এত মরিয়া, তিনি পাণ্ডুয়ার ভূমিপুত্র, তারকা ফুটবলার রহিম নবি। আর এই পাণ্ডুয়া বিধানসভা কেন্দ্রেই কে তৃণমূলের টিকিট পাবেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। দল এখনও কোনও নাম ঘোষণা করেনি। কিন্তু পাণ্ডুয়ায় নবিকেই সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অনেকে ভাবতে শুরু করেছেন।

পাণ্ডুয়ায় এই মুহূর্তে শাসকদলের টিকিটের দাবিদার চার নেতা— আনিসুল ইসলাম, অসিত চট্টোপাধ্যায়, বাদশা আলম এবং সঞ্জয় ঘোষ। প্রত্যেকেই দলের রীতিমতো পরিশ্রমী এবং পরিচিত মুখ। রাজ্যের আর পাঁচটা এলাকার মতোই পাণ্ডুয়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও কারও অজানা নয়। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও তা মাথাব্যথার কারণ। কিন্তু এই সময় চার জনকেই এখন এক সরলরেখায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন ফুটবলার নবি। কী ভাবে?

চার নেতাই বলছেন, ‘‘আমরা বছরভর সংগঠনের ছেলেদের সঙ্গে ভালয়-মন্দয় মিশে থাকি। যিনি রাজনীতিই কোনও দিন করলেন না, তিনি এ সবের কী বুঝবেন? তাই আমাদের কাউকে টিকিট দেওয়া হোক। কিন্তু রাজনীতির বাইরের কাউকে নয়। তাতে বামেরা বাড়তি অক্সিজেন পাবে।’’

বস্তুত, হুগলি জেলার মধ্যে গোঘাট বাদ দিলে এই পাণ্ডুয়াতেই এখনও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে বামেরা। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই দু’টি কেন্দ্রেই তৃণমূলকে হারতে হয়েছে বামেদেরে কাছে। ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে সিপিএম ২৫ হাজার ভোটে জেতে। ২০১১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল জোট করেছিল কংগ্রেসের সঙ্গে। দলের গোষ্ঠী-রাজনীতি এড়াতে তৃণমূলের তরফে প্রার্থী করা হয়েছিল বহিরাগত এক মহিলাকে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সিপিএম প্রার্থী ৩৯৭ ভোটে হারিয়ে দেন তৃণমূল-কংগ্রেস জোট প্রার্থীকে।

এ বার বিরোধী জোটের হাওয়া যখন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে, তখন নিজেদের দ্বন্দ্ব ভুলে শাসকদলের নেতারাই ‘সম্ভাব্য প্রার্থী’কে আটকাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। আর তাতেই সরগরম হয়ে উঠেছে পাণ্ডুয়া।

তৃণমূল নেতা বাদশা আলম বলেন, “সারা বছর মানুষ যাঁদের এলাকায় দেখেন, মাটি কামড়ে যাঁরা পড়ে থাকেন, সাধারণ মানুষ কিন্তু তাঁদেরই চাইছেন। আমি টিকিট না পেলেও দুঃখ নেই। অসিত বা আনিসুল পাক। দরদ দিয়ে খেটে দলকে জেতাব।” অপর নেতা

সঞ্জয় বলেন, “এক সময় এখানে থাকলেও এখন পাণ্ডুয়ার সঙ্গে নবির যোগাযোগ ক্ষীণ। তিনি কলকাতাতেই বেশি থাকেন। পাণ্ডুয়ায় কোনও কাজেই তাঁকে পাওয়া যায় না। খেলার মাঠেও নয়। সংগঠনের কেউ টিকিট পেলে দলগত ভাবে সবাই এককাট্টা হয়ে নেমে পড়বে।” প্রায় একই বক্তব্য অন্য দুই নেতারও। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁরা দলের জেলা নেতাদের কাছে দরবার করাও শুরু করেছেন।

আর নবি কী বলছেন?

সম্প্রতি কলকাতায় তৃণমূল ভবনে এসে তৃণমূলে যোগ দেন নবি। তাঁর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকেই পাণ্ডুয়ায় প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ভাসতে থাকে। নবি অবশ্য বলছেন, ‘‘এখনও প্রার্থী-তালিকা ঘোষণা হয়নি। আমি সদ্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। আগে আমার নাম ঘোষণা হোক। সমস্যা তো হতেই পারে। তবে শেষ কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

তবু পাণ্ডুয়ায় তৃণমূলের অবস্থা দেখে বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে বামেরা। তারা বলছে, তৃণমূলের নিজেদের কোন্দল মেটাতে মেটাতেই ভোট এসে যাবে। তার পর আর কখন ঘর গোছাবে তারা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rahim nabi pandua tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE