সান্দাকফুর পথে। ছবিটি তুলেছেন রবিন রাই।
অশান্তি আপাতত অতীত। টানা পাঁচ বছর পর এ বার পুজোর মরশুম থেকে দার্জিলিং পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়বে বলে আশা করছেন উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে পুজোর সময় থেকে নভেম্বর মাস অবধি রমরমিয়ে পাহাড়ে পর্যটকেরা পুজোর বুকিং শুরু করেছেন। মূলত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝ বরাবর থেকে নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ অবধি পাহাড়ের শীতের পর্যটন মরসুম ধরা হয়।
২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল অবধি দার্জিলিং পাহাড়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের জেরে পর্যটন-সহ সমস্ত ব্যবসা কার্যত মুখ খুবড়ে পড়ে। ঘনঘন বন্ধ, অবরোধ, মিছিলে জেরবার হয় পাহাড়। এর জেরে পাহাড়মুখী পর্যটকদের সংখ্যা এক লাফে কমে যায়। সিকিম এবং ডুয়ার্সের পর্যটনের উপর নির্ভর করে সেই সময় এলাকায় পর্যটন ব্যবসা চলছিল। ২০১১ সালে সিকিম এবং দার্জিলিং জেলায় ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের প্রভাবে পর্যটন ব্যবসা মার খায়। বহু বাড়ি, হোটেল, লজে ফাটাল-সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। বহু হোটেল সেই সময় সংস্কারের জন্য বন্ধও রাখা হয়।
২০১২ সালে মাঝে পর্যটন ব্যবসার সামান্য কিছু উন্নতি হলেও গত বছর ফের সমস্যা দেখা দেয়। সে বছরের জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বর অবধি দফায় দফায় পাহাড়ে বন্ধ হয়। সেই তুলনায় এবার অনেকটাই শান্ত, স্বাভাবিক শৈলশহর। সেই সঙ্গে সমস্ত আন্দোলন দিল্লিমুখী হওয়ার কথাও ঘোষণা করে দিয়েছে পাহাড়ের শাসক দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এমনকী, সেই আন্দোলনও নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের পরেই হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর জেরেই সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই আগামী মরশুমের জন্য প্রায় ৬৫ শতাংশ হোটেল পাহাড়ে বুকিং হয়ে গিয়েছে হলে পর্যটন সংস্থাগুলিই জানিয়েছে।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল সদস্য সম্রাট সান্যাল বলেন, “নানা কারণে পাঁচ বছরে পাহাড়ে এই সময়ের পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসা একেবারেই মার খেয়েছে। এবার পুরো উল্টো ছবি। ইতিমধ্যে যে গতিতে বুকিং শুরু হয়েছে, তাতে ঘর মিলবে কি না তা নিয়ে আমরাই দুশ্চিন্তায় আছি। এ এলাকার পর্যটনের বিকাশের জন্য এটা সত্যিই ভাল লক্ষণ।” তিনি জানান, পাহাড়কে বন্ধের আওতার বাইরে রাখার আবেদন করা হয়েছে। এটা কার্যকর হলে কোনও সময়ই পর্যটকদের ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
দার্জিলিং পর্যটন সংস্থাগুলির সংগঠন দ্য দার্জিলিং অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ লামা বলেন, “দীর্ঘদিন পর পাহাড়ের এই অবস্থায় খুশি সকলেই। আমরা শুধু নয়, এতে হোটেল, গাড়ি-সহ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বহু মানুষ উপকৃত হবেন।” তিনি জানান, পুজোর সময় থেকে অক্টোবর অবধি বুকিং প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। মূলত এ রাজ্যের পাশাপাশি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত থেকে এবার প্রচুর মানুষ আসছেন। একই কথা বলেছেন দার্জিলিঙের একটি হোটেলের মালিক রাজেশ রজক। তিনি বলেন, “আমার ৬০টা ঘর রয়েছে। অক্টোবর অবধি প্রায় প্রতিদিনই ঘরগুলি বুকিং রয়েছে।” পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং ছাড়াও সান্দাকফু নিয়েও এ বার অনেকে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। অনেক বুকিংও হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৬৩৬ মিটার উচ্চতায় থাকা সান্দাকফুর দূরত্ব দার্জিলিং থেকে ৬১ কিলোমিটার। মূলত জানুয়ারি থেকে মার্চ অবধি এলাকায় বরফও পড়ে। এ বছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে সান্দাফু বরফে ঢাকা ছিল। সেই সময় ঠান্ডাকে উপেক্ষা করেও কিছু পর্যটক এসেছিলেন। পাহাড়ে এই পরিস্থিতিতে বসে নেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পরিচালিত গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও (জিটিও)। পাহাড় জুড়ে প্রায় ১৫০টি পর্যটন প্রকল্প হাতে নিয়েছে জিটিএ-র পর্যটন দফতর। টুরিস্ট লজগুলির সংস্কার ছাড়াও ছোট ছোট বিভিন্ন স্পটকে সাজার কাজও করা হচ্ছে। জিটিএ-র পর্যটন দফতরের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর সোনাম ভুটিয়া বলেন, “আমরা অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এই মরসুমের সেগুলির কাজ অনেকক্ষেত্রেই শেষ হবে না। আগামী গরমের মরসুমের মধ্যে তা যাতে হয়, সেটা দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy