মোর্চার বন্ধে স্তব্ধ দার্জিলিং।—নিজস্ব চিত্র
আতঙ্কের রাত কাটিয়ে কোনওমতে কলকাতা ফিরলেন পর্যটকেরা। বাড়তি ভাড়া দিয়ে রাতেই পাহাড় ছেড়েছেন অনেকে। আরও ঝামেলা হতে পারে এই আশঙ্কায় রাতে পাহাড়ি পথে গাড়ি নিয়ে নামার ঝুঁকিও নিয়েছেন অনেকে।
কলকাতা থেকে লামাহাটা ঘুরে বৃহস্পতিবারই দার্জিলিং পৌঁছেছিলেন কলেজপড়ুয়াদের এটি দল। হোটেলে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। বাড়ি থেকে উৎকণ্ঠিত পরিজনদের ফোন আসতে থাকে। হোটেলে যোগাযোগ করেও গাড়ি মিলছিল না। শেষে এনজেপি থেকে আসা একটি গাড়ি মেলে। বাড়তি ভাড়া দিয়ে রাতেই নামতে থাকেন তাঁরা। পথে আলো দেখলে ভরসার বদলে ভয়ই করছিল তাঁদের। পথ আটকে কেউ বসে নেই তো! ভোররাতে এনজিপি পৌঁছন দলটি।
গুয়াহাটি থেকে এনজেপি হয়ে শিয়ালদহ আসে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। সাধারণত এনজেপি থেকে ট্রেনটি ভরে যায়। কিন্তু শশাঙ্ক অরোরার অভিজ্ঞতা আলাদা। এনজেপি থেকে খুব কম যাত্রীই উঠেছেন। পরিবারের সঙ্গে সিকিম গিয়েছিলেন শশাঙ্ক। শুক্রবার ভোরে ট্রেন ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘দার্জিলিঙের ঝামেলার খবর পেয়েই রাতের বদলে সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়ি। ভয় ছিল সেবক রোডে সমস্যা হতে পারে। এক বার ট্রেন মিস করলে আর টিকিট পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত সমস্যা হয়নি।’’
অফিসের কাজে শিলিগুড়ি গিয়েছিলেন বালির টুবাই গোস্বামী। ঠিক ছিল দার্জিলিং হয়ে গ্যাংটক যাওয়ার। বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর দেখে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানেও বিপত্তি। ট্রেনে টিকিট পাননি। বাসস্ট্যান্ডে গিয়েও দেখেন আসন নেই। অগত্যা চড়া দামে বিমানের টিকিটই কাটতে হয় তাঁকে।
শুধু টুবাইবাবুই নন, শুক্রবার রাতের ট্রেনের টিকিট থাকলেও অনেকেই বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতা ফেরার জন্য নীচে নেমে এসেছেন। তবে গোটা রাস্তায়ই তাঁদের তাড়া করে বেড়িয়েছে আতঙ্ক। আবার এক ট্রেনের টিকিট বাতিল করে অন্য ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়েও বেগ পেতে হয়েছে পর্যটকদের। শুক্রবার দুপুরে শতাব্দী এক্সপ্রেসে হাওড়ায় পৌঁছে দমদমের সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘প্রাণটা আগে। তাই অন্য ট্রেনের টিকিট থাকলেও খুব কষ্ট করে শতাব্দীর টিকিট জোগাড় করেছি।’’
এ দিন দুপুরেও লেক টাউনের বাসিন্দা সদ্য বিবাহিত এক দম্পতির চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তাঁরা জানালেন, হোটেলের সামনেই ঘুরছিলেন। আচমকাই সকলে ছোটাছুটি শুরু করে দিলেন। চোখের সামনে জ্বালিয়ে দেওয়া হল একটি জিপ। তড়িঘড়ি হোটেলে ঢুকে পড়লেও হোটেল ম্যানেজার তাঁদের জানিয়ে দিলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাহাড় থেকে নেমে যাওয়া ভাল। এর পরে রাত ১২টা নাগাদ একটি গাড়ি ভাড়া করে ফিরে আসেন তাঁরা। আর এক পর্যটক সুমিত মলহোত্রর কথায়, ‘‘সমতলে না-নামা পর্যন্ত আতঙ্ক তাড়া করছিল। তার উপরে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ করছিল না। ফলে মোবাইল থেকে আগের টিকিট বাতিল করে নতুন ট্রেনের টিকিট কাটতেও খুব অসুবিধা হয়েছে।’’
এ দিন বিকেলে পাহাড়ে বন্ধ শেষ হওয়ার পরে যাতে রাতে বাস ধরে পর্যটকেরা সহজেই কলকাতায় ফিরতে পারেন তার জন্যও ব্যবস্থা করেছেন বেসরকারি বাসমালিকেরা। যেমন, শিলিগুড়ি-কলকাতা রুটের এক বাসমালিক রমেন সাহা বলেন, ‘‘সব বাসমালিকেরাই কলকাতা থেকে যতগুলি সম্ভব খালি বাস পাঠিয়েছি। যাতে বাস পেতে পর্যটকদের অসুবিধা না হয়।’’ কলকাতার বাসমালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন শিলিগুড়ির দূরপাল্লা বাস কর্মচারী সংগঠনের সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের কাছে দার্জিলিং ও সিকিমের হোটেল বুকিংয়ের কাগজ রয়েছে তাঁরা বিনা পয়সায় সরকারি বাসে চেপে নীচে নামতে পারছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy