প্রতীকী ছবি।
প্রায় তিন যুগ আগে হাজতে অত্যাচার বন্ধে এক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে ভারত-সহ ১৭০টি দেশ স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু ভারত-সহ আটটি দেশ এখনও এই বিষয়ে পৃথক আইন তৈরি করেনি। এত দিনে হাজতে অত্যাচার-বিরোধী একটি আইন তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে কেন্দ্রে। এবং সেই উদ্যোগ সম্পর্কে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্র এই সংক্রান্ত পৃথক কোনও আইন আনলে আন্তর্জাতিক স্তরে বন্দি প্রত্যর্পণে সুবিধা হবে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ আমলা মহল।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, হাজতে অত্যাচার রুখতে একটি আইন তৈরির প্রস্তাব দেয় কেন্দ্রীয় আইন কমিশন। প্রস্তাবিত আইনের ব্যাপারে বিভিন্ন রাজ্যের মনোভাব জানতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ইতিমধ্যে কেন্দ্রকে নিজেদের মনোভাব জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ‘‘হাজতে বন্দির উপরে অত্যাচার সমর্থন করে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কেন্দ্রকে সেই মনোভাব জানানোটাই স্বাভাবিক,’’ বলেন রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা।
আইনবিশারদদের একাংশ জানান, প্রস্তাবিত আইনে বন্দির মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখতে একাধিক ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। পুলিশ বা জেল হাজত যা-ই হোক না কেন, যে-অফিসারের নেতৃত্বে বন্দি-নিগ্রহের অভিযোগ উঠবে, তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও করা যাবে ওই আইনে। প্রশাসনের অন্দরের ব্যাখ্যা, হেফাজতে অত্যাচার রুখতে ১৯৮৪ সালে এক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করেও ভারত এই বিষয়ে পৃথক আইন তৈরি করে উঠতে পারেনি। তবে সরকারি অনেক আইনজীবীর দাবি, আইপিসি, সিআরপিসি এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু রায় হেফাজতে অত্যাচার আটকাতে এত দিন রক্ষাকবচের কাজ করেছে। কেন্দ্র এত দিনে রাজ্যগুলির মনোভাব জানতে চাওয়ায় এই বিষয়ে পৃথক আইনের জল্পনা নতুন জলবাতাস পেয়েছে।
রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, অতীতে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে, বিশেষ করে হেফাজতে অত্যাচারের বিষয়ে বারবার ধাক্কা খেতে হয়েছে কেন্দ্রকে। কিম ডেভি, বিজয় মাল্য-সহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিই বারবার আলোচনায় এসেছে। অত্যাচার-বিরোধী আইন তৈরি করা গেলে এই বাধা আর থাকবে না বলে মনে করছেন তাঁরা।
উদাহরণ দিয়ে অভিজ্ঞ আমলাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত কিম পিটার ডেভিকে হাতে পেতে ডেনমার্ক সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে কেন্দ্র। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ দেশের সংশোধনাগারে ডেভির মানবাধিকার কতটা সুরক্ষিত থাকবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে ডেনমার্ক। কারণ, নাগরিকদের মানবাধিকারের বিষয়টি সে-দেশের আইনে সুরক্ষিত। সেই সময় এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মনোভাব ও অবস্থান জানতে চেয়েছিল কেন্দ্র। রাজ্য তখনও জানিয়েছিল, সংশোধনাগারে ডেভির উপরে যাতে কোনও অমানবিক আচরণ না-হয়, সেটা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy