Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মন্ত্রক বণ্টনেও ব্রাত্য বাংলা

দশ বছর আগে বাংলা থেকে ১৯ জন সাংসদ নিয়ে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে শামিল হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময়ে মমতার দলকে একটি পূর্ণমন্ত্রী এবং ছ’টি প্রতিমন্ত্রীর পদ দিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী-মনমোহন সিংহেরা।

বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী।

বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৫:৫৫
Share: Save:

মন্ত্রক বণ্টনে ক্ষেত্রেও গুরুত্বের বিচারে কার্যত হতাশ হতে হল বাংলাকে। বাবুল সুপ্রিয় হলেন বন ও পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। আর এক প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী পেলেন নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব। সাধারণত, প্রতিমন্ত্রীদের বিশেষ কিছু করার থাকে না, তার উপরে দু’জনকে কেন গুরুত্বহীন মন্ত্রক দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য বিজেপির অন্দরেই।

দশ বছর আগে বাংলা থেকে ১৯ জন সাংসদ নিয়ে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে শামিল হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময়ে মমতার দলকে একটি পূর্ণমন্ত্রী এবং ছ’টি প্রতিমন্ত্রীর পদ দিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী-মনমোহন সিংহেরা। এ বার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ১৮টি আসন জয়ী হয়েছে। কিন্তু বাংলা থেকে মাত্র দু’জন মন্ত্রী হলেন। তা-ও প্রতিমন্ত্রী! বাংলা থেকে জিতে আসা এক বিজেপি সাংসদের কথায়, ‘‘গত বার দু’জন জিতেছিলেন, দু’জনেই মন্ত্রী হয়েছিলেন। এ বার আঠারো জন জিতেছেন, সামনে রাজ্য জয়ের হাতছানি। তার পরেও সংখ্যা সেই দুই। হিসেব কিছুতেই মিলছে না।’’

নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা যে ভাবে মন্ত্রক বরাদ্দ করেছেন, তা নিয়ে রাজ্য বিজেপির ভিতরেই প্রশ্ন উঠেছে— কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কি মনে করছেন বাংলার জন্য দু’টি প্রতিমন্ত্রীই যথেষ্ট? নাকি তাঁরা ধরে নিয়েছেন, দু’টি প্রতিমন্ত্রী পেয়েই খুশি থাকবে বাংলা? যেখানে অন্তত দু’টি পূর্ণমন্ত্রী ও দু’টি প্রতিমন্ত্রী পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে কেন এই বঞ্চনা তার কোনও ব্যাখ্যা নেই বঙ্গ বিজেপির নেতাদের কাছে। তাঁরা অবশ্য প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন, আগামী নভেম্বরে ফের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা। সে সময়ে নিশ্চয় বাংলার আরও প্রতিনিধি মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাবেন।

বিজেপির একটি সূত্র বলছে, প্রথম থেকেই ঠিক ছিল, বাবুল জিতলে মন্ত্রী হবেন। খোদ প্রধানমন্ত্রীও আসানসোলে গিয়ে সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিজেপির আর একটি সূত্র জানাচ্ছে, সুষমা স্বরাজ-ঘনিষ্ঠ এস এস অহলুওয়ালিয়াকে এ বার ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয় জেতার পরেই। গত বার কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন বাবুল। রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশের মতে, এ বারও বাবুলকে কার্যত গুরুত্বহীন মন্ত্রক দেওয়া হল। যদিও বাবুলের দাবি, ‘‘পরিবেশ নিয়ে অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ কমানো, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর উপর জোর দিতে হবে।’’

জ্বর নিয়েই আজ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেন দেবশ্রী। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘নারী নির্যাতনে ও নারী পাচারে প্রথম সারিতে পশ্চিমবঙ্গ। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। নারী ও শিশুকল্যাণে যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি রয়েছে, তা যেন রাজ্যে সঠিক ভাবে রূপায়িত হয়, সে দিকে নজর রাখা হবে।’’ দেবশ্রী রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণে দিলীপ ঘোষ গোষ্ঠীর কাছের লোক পরিচিত। তা ছাড়া, প্রচারে গিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আশ্বাস দিয়েছিলেন, দেবশ্রী জিতলে তাঁকে মন্ত্রী করা হবে। বিজেপির একাংশের মতে, ওই দু’টি কারণেই শিকে ছিঁড়েছে।

মাত্র দু’জনকে মন্ত্রী করা এবং মন্ত্রক বণ্টন সম্পর্কে বিজেপি নেতৃত্বের যুক্তি, ১৮ জন সাংসদের মধ্যে দু’জন ছাড়া সকলেই নতুন ও আনকোরা। এই পরিস্থিতিতে এক জনকে মন্ত্রী করা হলে অন্যেরা ক্ষুব্ধ হতেন। রাজ্যে যখন বিজেপির শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে, তখন অহেতুক কাউকে ক্ষুব্ধ করে সেই অগ্রগতি আটকানো যুক্তিযুক্ত নয়। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আশ্বাস, দ্বিতীয় বার মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সময় অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের কথা ভাবা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Debasree Chaudhuri Babul Supriyo BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE