Advertisement
E-Paper

বাবার দেহ ছাড়াই ফিরলেন ছেলেরা

অভিযোগ, বাবার দেহ পেতে ৬ এপ্রিল দিনভর তাঁদের চূড়ান্ত হয়রানি হয়েছে। সাগর ও কাকদ্বীপে ঘুরে ঘুরে সুখতলা খুইয়েও দেহ মেলেনি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৩৬
Share
Save

রেডিও পোর্টাল জোগাড় করে দিয়েছিল হাতের কয়েকটি আঙুলের ছবি, যাতে শ্বেতীর দাগ স্পষ্ট। এই সূত্র ধরেই মৃত্যুর তিন মাস পরে বাবার মৃতদেহের খোঁজ পেয়েছিলেন ছেলেরা। কাকদ্বীপের মর্গে পড়ে রয়েছে পটনার ওই বৃদ্ধের দেহ। প্রশাসনের দরজায় হত্যে দিয়েও সুরাহা না হওয়ায় শনিবার বাবাকে না নিয়েই কাঁদতে কাঁদতে পটনা ফিরে গিয়েছেন দুই ছেলে।

পুলিশ সূত্রের খবর, পটনার বাসিন্দা রামপ্রসাদ রাম রাবত (৭০) জানুয়ারি মাসে গঙ্গাসাগর মেলায় এসে নিখোঁজ হন। ছেলেরা ওই এলাকার বিভিন্ন আশ্রমে খোঁজ করছিলেন। একটি আশ্রম তাঁদের হ্যাম রেডিও-র সাহায্য নিতে বলে। তাতে লাভও হয়। হ্যাম রেডিও পোর্টালে ছবি দেখেই পরিবার জানতে পারে, কাকদ্বীপ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে রামপ্রসাদের দেহ। ৫ এপ্রিল অনেক আশা নিয়ে হাওড়া পৌঁছন ছেলেরা। বাস্তবে অভিজ্ঞতা হল সম্পূর্ণ উল্টো।

অভিযোগ, বাবার দেহ পেতে ৬ এপ্রিল দিনভর তাঁদের চূড়ান্ত হয়রানি হয়েছে। সাগর ও কাকদ্বীপে ঘুরে ঘুরে সুখতলা খুইয়েও দেহ মেলেনি। রামপ্রসাদের মেজ ছেলে প্রমোদকুমার রাবতের অভিযোগ, ৬ এপ্রিল প্রথমে তাঁরা কাকদ্বীপ হাসপাতালে যান। তাঁদের সাগর-উপকূল থানা থেকে লিখিত অনুমতি আনতে বলা হয়। অভিযোগ, থানায় ডিউটিতে থাকা এএসআই কোয়ার্টারে থাকা সত্ত্বেও প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। প্রমোদবাবুর কথায়, ‘‘অনেক কাকুতির পরে উনি স্ট্যাম্প লাগিয়ে একটা কাগজ দেন। সেটা নিয়ে বাস ধরে কচুবেড়িয়া আসি। সেখান থেকে লঞ্চ ধরে লট-৮, সেখান থেকে অটোয় ফের হাসপাতাল পৌঁছই।’’

হ্যাম রেডিও কী?

কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের ‘অ্যামেচার রেডিও স্টেশন অপারেটিং সার্টিফিকেট’ পাওয়ার পরীক্ষা দিয়ে শখের বেতার খোলার অনুমতি পাওয়া যায়। এই পরিষেবা হ্যাম রেডিও নামে পরিচিত। হ্যাম-ক্লাবের সদস্যরাই এর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন। এ দেশে মাইহ্যাম.ইন পোর্টালে যে কেউই গিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তির হদিস পেতে আবেদন করতে পারেন। হ্যাম রেডিওর সদস্যরা তথ্য বের করায় সাহায্য করবেন।

তার পর? এ বার অভিযোগ, হাসপাতালের সুপার এত কিছুর পরে বলেন, শুধু এই নথিতে হবে না। সাগর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর শংসাপত্র আনতে হবে।

প্রথমেই সে কথা জানানো হল না কেন? সুপার রাজর্ষি দাসের বক্তব্য, ‘‘সাগরমেলার পুণ্যার্থীরা কেউ হারিয়ে বা মারা গেলে, পুরো বিষয়টা দেখার কথা সাগর-উপকূল থানার। থানা যে ওঁদের ডেথ সার্টিফিকেটের কথা বলবে না, তা জানব কী করে?’’

এতেই শেষ নয়। প্রমোদবাবুরা যখন সাগর গ্রামীণ হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, তখন রেডিও স্বেচ্ছাসেবকেরা ফোন করেন জেলা উপ স্বাস্থ্যঅধিকর্তা-২ স্বাগতেন্দ্রনারায়ণ বসুকে। তিনি জানান, গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়েও সুরাহা হবে না। আগে পুলিশকে কাকদ্বীপ হাসপাতালে গিয়ে দেহ শনাক্ত করতে হবে। এর কিছু ক্ষণ পর তিনি ফের ফোন করে জানান, পদ্ধতিটি আরও জটিল। সাগরমেলার সময়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের যে অটোপ্সি সার্জন সাগরে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছিলেন, তাঁর লিখিত অনুমতি আনতে হবে সাগর-উপকূল থানার পুলিশকে। সেই নথি জমা দিতে হবে সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে। তারা মৃত্যুর শংসাপত্র দিলে সেটা জমা দিতে হবে মর্গে।

তিন মাস ধরে বাবাকে খুঁজে চলা দুই ছেলে রেডিও-পোর্টালে ছবি দেখে ভেবেছিলেন, এত দিনে অন্তত বাবার দেহটা কাছে পাবেন। কিন্তু প্রক্রিয়ার এই জটিলতা এবং পদে পদে হয়রানিতে বিধ্বস্ত হয়ে যান তাঁরা। ঠিক করেন, দেহ না নিয়েই ফিরে যাবেন। বাবার মুখটুকুও দেখার সুযোগ পাননি তাঁরা। যদিও কাকদ্বীপের সুপার কিন্তু এখনও বলছেন, পুলিশ শনাক্ত করলেই দেহ ছেড়ে দেওয়ার কথা। অটোপ্সি সার্জনের অনুমতি আনার কথা তাঁর জানা নেই।

পুরো ঘটনাটি নিয়ে সাগর উপকূল থানার ওসি দেবাশিস রায়ের বক্তব্য, ‘‘ওই এএসআইকে সতর্ক করেছি। কিন্তু বাকি নিয়ম তো নিয়মই। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।’’

হতাশ পশ্চিমবঙ্গ অ্যামেচার রেডিও ক্লাবের সচিব অম্বরীশ নাগবিশ্বাসও। বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করতেই পোর্টাল খোলা হয়। প্রশাসনের সহযোগিতার এমন নমুনা দেখে পোর্টাল বন্ধ করে দেব ভাবছি।’’

Amateur Radio Ham Radio রামপ্রসাদ রাম রাবত Kakdwip Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy