Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাওবাদী হাত ধরে অস্ত্র পাচার শুরু করে মুন্না

ইছাপুর রাইফেল কারখানা থেকে অস্ত্র পাচারের মামলায় রবিবার পাকড়াও করা হয় মুন্নাকে। ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় এনে সোমবার তাকে আদালতে তোলা হয়। বিচারক ধৃতকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ-স্পৃহা তাকে জেলে ঢুকিয়েছিল। জেল থেকেই মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও অস্ত্র কারবারে হাতেখড়ি। রবিবার নালন্দার বিহার শরিফ থেকে ধৃত অস্ত্র কারবারি রাজেশ কুমার ওরফে মুন্না সম্পর্কে এমন তথ্যই জানাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘২০০৪-এ জেলে থাকার সময়ে বাদল ও গুড্ডু নামে দুই মাওবাদীর সঙ্গে পরিচয় হয় মুন্নার। জেল থেকে বেরিয়ে তাদের মদতেই মুঙ্গেরের অস্ত্রের ব্যবসা শুরু করে সে।’’

ইছাপুর রাইফেল কারখানা থেকে অস্ত্র পাচারের মামলায় রবিবার পাকড়াও করা হয় মুন্নাকে। ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় এনে সোমবার তাকে আদালতে তোলা হয়। বিচারক ধৃতকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এই মামলায় ইতিমধ্যেই অজয়কুমার পাণ্ডে ওরফে গুড্ডু পণ্ডিত (মাওবাদী গুড্ডু নয়) নামে আর এক অস্ত্র কারবারিকে পাকড়াও করেছে এসটিএফ।

পুলিশের দাবি, অজয়ের সঙ্গেও মুন্নার যোগ রয়েছে। ২০০৮ সালে দু’জনের পরিচয়। তার পর থেকে মুঙ্গেরের অস্ত্রের পাশাপাশি উন্নত মানের অস্ত্র পাচারে হাত পাকায় মুন্না। গত কয়েক বছরে অন্তত দশটি ইনস্যাস রাইফেল-সহ একশোরও বেশি অস্ত্র ইছাপুরের কর্মীদের কাছ থেকে কিনেছিল সে। গোয়েন্দাদের খবর, ওই সব অস্ত্র বিহারের দুষ্কৃতী ও মাওবাদীদের হাতে পৌঁছেছে।

গত ৬ এপ্রিল বাবুঘাট বাসস্ট্যান্ডের কাছে অস্ত্র পাচারের সময়ে জয়শঙ্কর পাণ্ডে, উমেশ রায় ও কার্তিক সাউকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। তাদের থেকে বাজেয়াপ্ত হয় ইছাপুর রাইফেল কারখানার সাতটি রিভলভার, কার্বাইনের মতো বাতিল অস্ত্র এবং অস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ। পরে গ্রেফতার করা হয় কারখানার দুই জুনিয়র ওয়ার্কস ম্যানেজার সুখদা ও সুশান্তকে।

এই পাচারের ঘটনা অবশ্য প্রথম নয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে একই ভাবে অস্ত্র পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল শম্ভু ভট্টাচার্য এবং দীপক সাউকে। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া কার্তিক, উমেশ এবং সেপ্টেম্বরে ধরা পড়া দীপক— তিন জনেই ইছাপুরের কারখানার ঠিকাদার। পুলিশ সূত্রের খবর, কারখানার বিভিন্ন অস্ত্র এবং যন্ত্রাংশ নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে কাগজে-কলমে বাতিল দেখাত শম্ভু, সুখদা ও সুশান্ত। পরে সেগুলি নিয়মমাফিক নষ্ট করার বদলে পাচার-চক্রের শরিক ঠিকাদারদের হাত ঘুরে পৌঁছে যেত অস্ত্র কারবারিদের কাছে। অনেক সময়েই তারা ওই সব যন্ত্রাংশ নিজেদের ডেরায় নিয়ে গিয়ে জোড়া লাগিয়ে অস্ত্র তৈরি করত।

লালবাজারের সূত্রে জানাচ্ছে, গুড্ডুর সঙ্গেও মুন্না একাধিক বার কলকাতায় এসেছে। এক দালালের মাধ্যমে অস্ত্র কারখানার কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল মুন্না ও গুড্ডুর মতো অস্ত্র কারবারিদের। সেই দালালের নাগাল এখনও পায়নি পুলিশ। লালবাজারের দাবি, ওই দালালকে ধরতে ইতিমধ্যেই কয়েকটি জায়গায় হানা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। পাশাপাশি এই চক্রে ওই কারখানার আর কোন কোন কর্মী জড়িত, তা-ও দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arms Trafficking Maoists Prison
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE