প্রতীকী ছবি।
যখন তিনি প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন তখন চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করে এমন কোনও জটিল শারীরিক সমস্যা পাননি যাতে প্রাণ সংশয় হতে পারে। সেই চিকিৎসকেরাই রাতে সিজার শেষ করে তড়িঘড়ি বাইরে এসে ঘোষণা করেন, প্রসূতির অবস্থা খুব খারাপ! দ্রুত কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভেন্টিলেশনে রাখতে হবে!
পেটে কোনও রকমে তাড়াহুড়ো করে করা কাঁচা সেলাই, খাবি খেতে থাকা সদ্য প্রসূতিকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দূরে শক্তিনগর ছোটেন দিশেহারা বাড়ির লোক। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। শনিবার সারারাতের লড়াইয়ের পরে রবিবার সকালে মারা যান শান্তিপুরের মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা সীমা সরকার(২৬)। তাঁর সদ্যোজাত সন্তান বেঁচে গিয়েছে, তবে তারও শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক। কৃষ্ণনগরের জেলা সদর হাসপাতালের সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে শিশুটি ভর্তি রয়েছে। মৃতার দেহ নিয়ে বাড়ি থেকে শান্তিপুর হাসপাতাল পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করেন আত্মীয়-পরিজন-পড়শিরা।
স্বাস্থ্যকর্তারা বারবার ঘোষণা করেছেন, একবিংশ শতকে পৌঁছে এক জন প্রসূতির মৃত্যুও মানা যায় না। প্রতিটি প্রসূতি মৃত্যুর কারণ তদন্ত করে দেখতে হবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ও ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে ফেলেছেন। কিন্তু তার আগেই বেশ কিছু প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে।
যেমন, শনিবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ প্রসূতিকে প্রসববেদনা নিয়ে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর স্বামী বাপি সরকারের দাবি, সেই সময় হাসপাতালের এক চিকিৎসক সীমাকে পরীক্ষা করে দেখেন রক্তচাপ বেশ বেশি। সেই অবস্থায় দু’ঘণ্টার বেশি তাঁকে ফেলে রাখা হয়। তত ক্ষণে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে সীমার। স্বাস্থ্যকর্তারা এর আগে অসংখ্য বার জানিয়েছেন, আসন্নপ্রসবার রক্তচাপ বেশি থাকলে এবং শ্বাসকষ্ট শুরু
হলে তাকে ‘হাইরিস্ক প্রেগনেন্সি’
বলে ধরা হবে এবং তৎক্ষণাৎ তাঁর সিজার করতে হবে। কেন তা সীমার ক্ষেত্রে হয়নি?
যে চিকিৎসক সীমার সিজার করেছিলেন সেই অমিতবরণ মন্ডলের বক্তব্য, “ওঁর রক্তচাপ ঠিক করে নিয়ে তবে ওটিতে ঢুকিয়েছিলাম। তা ছাড়া, উনি বিকেল চারটের সময় খেয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার ঝুঁকির হয়ে যেত। উনি ঠিকই ছিলেন। কোনও সমস্যা ছিল না।”
তা হলে আচমকা সিজারের সময় সমস্যা তৈরি হল কেন? চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছিল?
অমিতবরণের উত্তর, “আসলে আমরা আগে থেকে কিছুই বুঝতে পারিনি। সিজার করার সময়ই হঠাৎ রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।’’ শান্তিপুর হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত বিশ্বাসের কথায়, ‘‘অ্যানাস্থেশিয়া করার সময় স্পাইনাল শক থেকে এমন হতে পারে। ময়নাতদন্ত করলে বিষয়টি জানা যাবে।’’ কিন্তু প্রশ্ন থাকছেই, যে হাসপাতালে সিজার হয় সেখানে মায়েদের জন্য সিসিইউ এবং সদ্যোজাতদের জন্য এসএনসিইউ কেন নেই? কেন জটিল পরিস্থিতিতে অন্য হাসপাতালে ছুটতে হবে? এর কোনও যুতসই জবাব মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy