এনআইএ, এনএসজি-র পরে এ বার বর্ধমানে পা রাখল ইডি।
উপলক্ষ, খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ। সারদা মামলার তদন্ত চলছেই। খাগড়াগড়ের পরে এ বার জঙ্গি কার্যকলাপে ব্যবহৃত অর্থের উৎস সন্ধানে সোমবার বর্ধমানে যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র তিন সদস্যের দল। জেহাদিদের সম্পত্তি ও অর্থের উৎস খুঁজে বের করাই তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। তবে, এরই পাশাপাশি সারদার উধাও হওয়া টাকার কথা বিবেচনায় রাখা হচ্ছে বলে ইডি সূত্রের খবর।
ইডি-র অফিসারেরা এ দিন দুপুরে বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার সঙ্গে দেখা করতে যান। আধ ঘণ্টা খাগড়াগড়-কাণ্ড নিয়েই মূলত কথাবার্তা হয়। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, বিস্ফোরক তৈরিতে যে টাকা লেগেছে, তার উৎস খতিয়ে দেখছে ইডি। খাগড়াগড়ের বাড়িটি (বিস্ফোরণস্থল) থেকে যে ৪৪ হাজার টাকা মিলেছিল, তার নোটগুলি সম্পর্কে ইডি-কে বিশদে তথ্য দেন পুলিশ সুুপার। কী ধরণের বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছিল, তা-ও জানান। ওই বৈঠকের পরে ইডি-র দলটি খাগড়াগড়, বাবুরবাগ, বাদশাহি রোড, হাটুদেওয়ানবিস্ফোরণ-কাণ্ডে উঠে আসা সব ক’টি বাড়ি ঘুরে দেখে। পুলিশ সুপার বলেন, “আমাদের দিক থেকে যতটা তথ্য দেওয়া যায়, ইডি-র অফিসারদের দিয়েছি।”
শুধু বর্ধমান নয়, আরও কিছু জায়গায় গিয়ে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের কাজ করবে ইডি। প্রাথমিক তথ্য হাতে পেলে তা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন অনুসারে এফআইআর করার ইঙ্গিত মিলেছে ইডি সূত্রে। ইডি-র এক কর্তা জানান, বিস্ফোরণ-কাণ্ডে টাকার উৎস সন্ধান করতে গিয়ে সারদার উধাও হওয়া টাকার প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। সেই সূত্রেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে সারদার টাকা গিয়েছে কি না এবং গিয়ে থাকলে সেই টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে কি না, সে দিকটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই টাকার খোঁজ করতে গিয়ে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডির তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, হাওয়ালা কারবারিদের একটি তালিকাও প্রাথমিক ভাবে তৈরি করেছে ইডি। এনআইএ-রও সন্দেহ, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও বাংলাদেশ থেকে হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা ভারতে ঢুকেছে।
সোমবার ইডি যখন বিস্ফোরণের পিছনে বিপুল অর্থের উৎস খুঁজতে ব্যস্ত, এনআইএ-র গোয়েন্দারা তখন হানা দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ঘোড়ামারা গ্রামের একটি অনুমোদনহীন মাদ্রাসায়। বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া ও লালগোলার মকিমনগর মাদ্রাসার পরেই এনআইএ গোয়েন্দাদের রেডারে এসেছিল ঘোড়ামারা মাদ্রাসা।
এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ ওই মাদ্রাসায় যায় এনআইএ-র তিন সদস্যের দল। সঙ্গে জেলা পুলিশ। ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার ছেলেদের সহযোগিতায় খোলা হয় মাদ্রাসার তালা। ঘর ও মাদ্রাসার ছাদে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু ছেঁড়া কাগজ ও বই সংগ্রহ করেন গোয়েন্দারা। মাদ্রাসার জমিদাতাদের ডেকে জমির দলিল তাঁরা খুঁটিয়ে দেখেন। গ্রামের বেশ কয়েক জনের ফোন নম্বরও জোগাড় করেন তাঁরা। গ্রামবাসীদের কাছে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক-সহ তিন শিক্ষকের খোঁজও করে এনআইএ। মাদ্রাসার অন্যতম কর্মকর্তা মরজেম মণ্ডল এনআইএ-র কাছে দাবি করেন, মাস তিনেক থেকে মাদ্রাসা বন্ধ। তবে, সদ্য তৈরি হওয়া পাকা ঘর ও মজুত ইট দেখে গোয়েন্দাদের অনুমান, জোরকদমে চলছিল মাদ্রাসার নতুন ভবন তৈরির কাজ। ওই টাকার উৎস কী, তা-ও খতিয়ে দেখছে এনআইএ।
বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বাড়িতে বিস্ফোরণে মৃত শাকিল আহমেদের ঘর থেকে এক টুকরো কাগজে নাম মেলে ঘোড়ামারার এই মাদ্রাসার। পরে ধৃত শাকিলের স্ত্রী রাজিয়াকে জেরা করে ঘোড়ামারায় শাকিলের জমি কেনার কথা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। এনআইএ সূত্রের খবর, এই মাদ্রাসায় শাকিলের যাতায়াত ছিল। বর্ধমান-কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত পলাতক এক ব্যক্তির সঙ্গে ঘোড়ামারার অন্তত তিন জনের ফোনে নিয়মিত কথা হয়েছে বলেও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। এ দিনই বেলডাঙায় বড়ুয়া পাওয়ার হাউসপাড়ায় একটি বাড়িতে (এই বাড়িতে ভাড়া থাকত শাকিল) তল্লাশি চালায় এনআইএ। সেখান থেকে হাটপাড়ায় আর একটি বাড়ি (এখানে থাকত শাকিলের সঙ্গীরা) এবং বেলডাঙা ফরাজিপাড়ায় শাকিলের ভাড়া নেওয়া বোরখা কারখানার ঘরেও তল্লাশি চালায়।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অন্যতম সন্দেহভাজন, নদিয়ার থানারপাড়ার গমাখালি গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল শেখ সঙ্গে ঘোড়ামারা মাদ্রাসার সম্পর্ক ছিল। জহিরুলের বাড়ি থেকে ওই মাদ্রাসার অনুদানের লিফলেট-সহ আরও বেশ কিছু কাগজপত্র মিলেছে। তার মাধ্যমেই ওই মাদ্রাসার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে শাকিলের। ওই মাদ্রাসার পাশে শাকিলের জমি কেনা থেকে শুরু করে যাবতীয় যোগাযোগ রাখার কাজটা করত জহিরুল নিজে। এই মুহূর্তে জহিরুলকে হন্যে হয়ে খুঁজছে এনআইএ। এ দিন জহিরুলের বাড়িতে তল্লাশি চালায় এনআইএ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy