তাঁর উত্তরবঙ্গ সফরের মধ্যে তিস্তা এবং রাম্মাম নদীর উপরে চারটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোট ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পগুলি নির্মাণের কথা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনএইচপিসি-র। কিন্তু শিল্প নেই বলে এমনিতেই যে রাজ্যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত, যেখানে একের পর এক বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) বাতিল করছে রাজ্য, সেখানে নতুন করে বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার ঘোষণায় বিস্মিত শিল্পমহল ও প্রশাসনের একাংশ। তাদের বক্তব্য, গত কয়েক বছরে গৃহস্থ ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারের বড় কোনও ক্রেতা পাচ্ছে
না মমতার সরকার। ফলে রাজ্যের নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎই পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আরও বিদ্যুৎ তৈরি হলে তা কোন কাজে লাগবে, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
ক্ষমতায় আসার পরের তিন বছরে সরকারের ‘সাফল্য’ বলে যা দাবি করে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী, তার প্রথম দিকেই থাকে বিদ্যুতের কথা। রাজ্যে যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত, গর্বের সঙ্গেই তা জানান তিনি। বলেন, “আমরা এখন বিদ্যুৎ ব্যাঙ্ক করেছি।” রাজ্যে বিদ্যুতের কোনও অভাব নেই বলে বিভিন্ন শিল্প সম্মেলনেও দাবি করেন মমতা। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিটি অন্তত পুরোপুরি সঠিক। রাজ্যের এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার যে অনুপাত, তার ভিত্তিতে খুব সম্প্রতি সরকার বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি (এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি) বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হওয়ার মূল কারণ যে শিল্পে খরা সেই সত্যটা বলছেন না মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি তথ্য বলছে, নতুন সরকারের আমলে কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে। কয়েকটি শিল্পে সম্প্রসারণের জন্য বিনিয়োগ হয়েছে। এর বাইরে নতুন কোনও শিল্প, বিশেষত উৎপাদন শিল্পে কার্যত খাতা খুলতে পারেনি এই সরকার। উল্টে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, অনেকের আধমরা অবস্থা। এই অবস্থায় রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ার পরিবর্তে এক ঝটকায় অনেকটা কমে গিয়েছে। সরকার এই সত্যটাকে আড়াল করে পশ্চিমবঙ্গকে ‘বিদ্যুৎ-উদ্বৃত্ত’ রাজ্য বলে গর্ব করে প্রচার করছে।