এলাকায় র্যাফ ও দমকল। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে প্রাণ গেল এক যুবকের। এই সংঘর্ষ থামাতে গিয়েই বোমার আঘাতে গুরুতর জখম হলেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সদর) অরিন্দম দত্তচৌধুরী। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটে রানিগঞ্জে।
অরিন্দমবাবুকে দুর্গাপুরে বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর চিকিৎসার জন্য তিন সদস্যের ‘মেডিক্যাল টিম’ (অস্থি, ভাস্কুলার, প্লাস্টিক সার্জেন) গঠন করা হয়েছে। বোমার আঘাতে তাঁর ডান হাতে ‘মাল্টিপল ফ্র্যাকচার’ হয়েছে। কব্জির ‘টিস্যু’ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাত ৮ টা নাগাদ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার পার্থ পাল বলেন, ‘‘এখনও অস্ত্রোপচার চলছে।’’
এ দিন হাসপাতালের ভিতরে যখন পুলিশ আধিকারিক ভর্তি, বাইরে তখন ছড়িযে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার পুলিশ কর্মীরা। সকলের মুখেই দুশ্চিন্তার ছাপ। নিজেদের মধ্যে কেউ কেউ বলাবলি করছেন, ‘‘বোমার আঘাত তত জোরালো নয়, এই যা ভরসা!’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ রানিগঞ্জের হিলবস্তি থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। কোনও একটি বিষয় নিয়ে রাজারবাধ মোড়ে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে শোভাযাত্রায় থাকায় যুবকদের প্রথমে বচসা বাধে। পরে তা সংঘর্ষের রূপ নেয়। রানিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় দোকানে ভাঙচুর, লুঠপাট ও অগ্নিসংযোগ। এরই মধ্যে রাজারবাধে হামলা ঠেকাতে গিয়ে অরিন্দমবাবুর ডান হাতে বোমা লাগে। সাহেববাঁধ মোড়ের কাছে এসিপি (সেন্ট্রাল) এবং ওসি চোট পান।
দুপুরে আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি হিলবস্তি এলাকায় গেলে ঘেরাও-এর মধ্যে পড়েন। শোভাযাত্রায় সামিল যুবকেরা থানা ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। বিকেল তিনটে নাগাদ আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় হিলবস্তি এলাকায় যেতে গেলে, তাঁর পথ আটকায় পুলিশ। বাবুল বলেন, “১৪৪ ধারা জারি থাকায় ঘটনার কেন্দ্রস্থলে যেতে পারিনি।’’ তবে তিনি বিকেলে হাসপাতালে যান। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ অফিসারের হাত যে ভাবে জখম হয়েছে, আমি আর কী বলব! পুলিশকর্মীরা নিজেদের চাকরি বাঁচাতে গিয়ে যে ভাবে বিপদের মুখে পড়ছেন, কিছু বলার নেই।’’
মেয়রের পাল্টা দাবি, ‘‘পুরো ঘটনাই পূর্ব পরিকল্পিত।” রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্ত বলেন, “রানিগঞ্জের শান্ত পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারল না পুলিশ। ওই একই জায়গায় এ বছর দীপাবলির সময় গোলমাল বেধেছিল। তারপরেও উত্তেজনা প্রবণ ওই এলাকায় যথেষ্ট নিরাপত্তা বলয় তৈরি না করাতেই এই বিপত্তি।”
পুলিশ সূত্রে খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে নামাতে হয় র্যাফ। আসে দমকলবাহিনী। বাইরে থেকে আনতে হয় আরও পুলিশ। বিকেল চারটে নাগাদ জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি, মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে শহরের উত্তেজনা প্রবণ এলাকা পরিদর্শনে যান পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা। পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে থানায় বৈঠকে বসেন বাবুল, মেয়রও।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ-সহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ জখম হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাইরে থেকেও পুলিশ আনা হয়েছে। উপযুক্ত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy