তোলা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প কিসান মান্ডি গড়ার কাজেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসকদলের আশ্রিত লোকজনের বিরুদ্ধে।
প্রথমে ফোনে ঠিকাদারকে তোলা চেয়ে হুমকি, তা দিতে না চাওয়ায় নির্মীয়মাণ মান্ডির কাজ আটকানোর অভিযোগ উঠেছে বর্ধমানের কাটোয়ায় শ্রীখণ্ড গ্রামে। বিষয়টি মৌখিক ভাবে পুলিশকে জানান ঠিকাদার। দু’দিন বন্ধ থাকার পরে মঙ্গলবার পুলিশি পাহারায় ফের কাজ শুরু হয়েছে।
গত ক’বছরে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের দাদাগিরিতে রাজ্যের বহু সংস্থায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। দুর্গাপুরে কাগজকল থেকে ইসিএলের খনির ঠিকাদার, অনেকেই জুলুমের শিকার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শ্রীখণ্ডে অবশ্য খবর পাওয়ার পরেই তৎপর হয় পুলিশ। নড়েচড়ে বসেন বিধায়ক-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও। কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “অন্যত্র নিষ্ক্রিয় থাকলেও এখানে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পে বাধা পড়ছে দেখেই পুলিশ তৎপর হয়েছে।”
রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের উদ্যোগে কাটোয়া ১ ব্লকের শ্রীখণ্ডে এই কিসান মান্ডি তৈরি হচ্ছে। দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “এই ঘটনা কেউ জানাননি। এটা যদি ঘটে থাকে, খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এটি মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব প্রকল্প। যে-ই দুষ্কর্ম করে থাক, বরদাস্ত করা হবে না। বুধবার খোঁজখবর নেব।” জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, শ্রীখণ্ডে ওই মান্ডি তৈরির বাজেট প্রায় ৬ কোটি। বরাত পেয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের একটি ঠিকাদার সংস্থা। তারা স্থানীয় নির্মাণকর্মীদের দিয়ে ৪ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করেছে। বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের ধারে কৃষি খামারের ভিতরে এফসিআই গুদামের পাশে এই মান্ডি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে কর্মীরা কাজ বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়।
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) তথা প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “সরকারি কাজে যে-ই হস্তক্ষেপ করুক, মানা হবে না। পুলিশকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। প্রয়োজনে কাজের সময়ে পুলিশি প্রহরার আশ্বাস পেয়েছি।” সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকের পাল্টা প্রশ্ন, “এক দিন না হয় পুলিশ রইল। সব সময়ে কী থাকবে? তখন কী হবে? অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেই বা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ?” পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, সরকারি কাজে সমস্যার কথা শুনেই তারা হস্তক্ষেপ করেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঠিকাদার সংস্থার অভিযোগ, কাটোয়ার কেশিয়া ও শ্রীখণ্ড এলাকার নানা দুষ্কর্মে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি আলাদা ভাবে দলবল নিয়ে এসে নানা দাবি জানায় ও হুমকি দেয়। সংস্থার কর্ণধার কমল দাস জানান, “প্রথমে শনিবার ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়। প্রকল্পের খরচের ১০% দিতে হবে বলে দাবি করে। না মানায় কাজ বন্ধের হুমকি দেয়।” সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ, মোটরবাইকে চড়ে রবিবার দু’দফায় কিছু সশস্ত্র লোক খামারে আসে। দাবি করে, মালিকের সঙ্গে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
তৃণমূলের এক সূত্রের দাবি, যারা হুমকি দিয়েছে তারা দল-ঘনিষ্ঠ। দলের মিছিল ও সভা-সমিতিতে দেখা যায়। তোলা চেয়ে ঠিকাদার সংস্থাকে দলের কেউ হুমকি দিয়েছে, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তা মানতে চাননি। শ্রীখণ্ড গ্রামের তৃণমূল নেতা সৌমেন্দ্র দে-র দাবি, “সংস্থাটি আমাদের লোকজনকে না নিয়ে সিপিএমের লোকেদের কাজে নিয়েছে। আমাদের লোকেরা তাতে আপত্তি করেন। সমস্যা মিটে গিয়েছে।” একই বক্তব্য কাটোয়া শহর তৃণমূল সভাপতি অমর রামেরও।
স্থানীয় নেতারা ব্যাপারটা উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তৃণমূলের উচ্চতর নেতৃত্ব সতর্কিত হয়েছেন। কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, “দল ও প্রশাসনিক স্তরে বিষয়টি জানিয়েছি।” বিকেলে জেলার অতিরিক্ত এসপি (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে বড় বাহিনী এলাকায় যায়। কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত পুলিশ ছিল। কমলবাবু বলেন, “সব জানিয়ে কাটোয়া থানায় অভিযোগ করব।” তবে রাত পর্যন্ত তা করা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy