সোমবার সন্ধ্যায় পুরভবনে হঠাৎ শ্রীকান্ত মোহতা। ছবি: রণজিৎ নন্দী
লেক মলের নির্মাণ সংস্থাকে ‘বিশেষ সুবিধা’ দিতে লিজ চুক্তি দু’ভাগ করার বিষয়টিকে কয়লা খনি বণ্টন কেলেঙ্কারির সঙ্গে তুলনা করল বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে পুজোর পরেই পুরোদস্তুর ময়দানে নামা, এমনকী প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে তারা। বামেরাও এ নিয়ে আইনি পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বসে নেই কলকাতা পুরসভা। ওই চুক্তির রেজিস্ট্রি যাতে কোনও ভাবে আটকে না যায়, সে জন্য এ দিনই তড়িঘড়ি ভেঙ্কটেশ কর্তাকে পুরভবনে ডেকে সইসাবুদ করিয়ে নেয় পুর প্রশাসন।
কেন পুরসভার তরফে ওই তৎপরতা?
পুরসভার এক আমলা জানান, আজ, মঙ্গলবার থেকে পুজোর ছুটি পড়ছে। ছুটির পর প্রথম দিনেই যাতে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলা যায়, এ দিন তার ব্যবস্থা করে রাখা হলো। চুক্তিটি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা এড়াতেই এই তৎপরতা বলে জানান তিনি।
১৯৮৭ সালে হওয়া লিজ চুক্তি যে ভাবে শর্ত ভেঙে দু’ভাগ করা হয়েছে, তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি এবং বামেরা। রাহুলবাবু সোমবার বলেন, “৩০ বছর পরে আরও ৩০ বছরের চুক্তি পুরসভা এখন করতে পারে না। ৩০ বছর পরে কে কোথায় থাকবে, কে কী করবে, কিছুই এখন নিশ্চিত করে বলা যায় না। তা হলে ৩০ বছর পরের চুক্তি কেমন করে এখন করা সম্ভব? সুতরাং, দ্বিতীয় পর্বের চুক্তি বেআইনি। তার মানে প্রথমটাও অবৈধ!” রাহুলবাবু জানান, দলের আইনজীবী সেলকে তিনি পুরো চুক্তি খুঁটিয়ে পড়ে আইনি পরামর্শ দিতে বলেছেন।
প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, পুরসভা যে ভাবে চুক্তি ভেঙে দু’ভাগ করেছে, তা করা যায় না। তা অনৈতিক এবং অন্যায়। নয়া চুক্তি আটকাতে তাঁরা আইনের পথে হাঁটবেন বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন মেয়র।
বিরোধীদের এই বক্তব্যের সূত্র ধরেই প্রশ্ন উঠেছে, পুরসভা কি এ ভাবে চুক্তি ভাগ করতে পারে?
এ নিয়ে পুরসভার তরফে একাধিক ব্যাখ্যা মিলেছে। পদস্থ এক আমলার কথায়, “এটা আইনসম্মত নয়। চুক্তি ৬০ বছরের। কারও সুবিধার জন্য তার খেলাপ করা ঠিক নয় জেনেও চুপ করে থাকতে হয়েছে। কারণ এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত।” পুরসভারই অন্য এক অফিসারের আবার বক্তব্য, “লিজ চুক্তির সময়সীমা দু’ভাগে ভাগ করায় সরকারি কোষাগারের ক্ষতি হবে এটা সত্য, তবে ভাগ করার বিষয়টা নিয়মবিরুদ্ধ নয়।”
পুরসভা সূত্রের খবর, গত ১১ সেপ্টেম্বর মেয়র পারিষদ বৈঠকে ভেঙ্কটেশ ফাউন্ডেশনের দেওয়া লিজ চুক্তি দু’ভাগ করার প্রস্তাব অনুমোদন করেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এ দিন আনন্দবাজারে সেই খবর প্রকাশিত হতেই চুক্তি রেজিস্ট্রি করার জন্য বয়ান তৈরির কাজে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। বিকেলেই মেয়র-সহ প্রায় সব মেয়র পারিষদ অফিস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে সন্ধ্যায় পুরসভার বাজার ও আইন দফতরের অফিসারদের থাকতে বলা হয়। এমনকী রেজিস্ট্রেশনের বয়ানে বাজার দফতরের অফিসারদের সইসাবুদও করিয়ে রাখা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ভেঙ্কটেশের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতা পুরসভায় আসেন। তখন অবশ্য বাজার দফতরের তিন অফিসারের মধ্যে মাত্র এক জন উপস্থিত ছিলেন। ওই অবস্থাতেই ভেঙ্কটেশের কর্ণধার সইসাবুদ সেরে দ্রুত বেরিয়ে যান।
পুরসভার একটি সূত্রের অভিযোগ, লেক মলের মালিক কাগজে-কলমে কলকাতা পুরসভা হলেও বাজারটির কোন জায়গা কাকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, তা জানেনই না পুরকর্তারা! জানা গিয়েছে, ভেঙ্কটেশ ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যেই একাধিক সংস্থার কাছ থেকে প্রচুর টাকা সেলামি নিয়ে লেক মলে তাদের জায়গা দিয়েছে। এমনকী তাদের সাব লিজও দিয়েছে। অথচ পুর নিয়ম অনুসারে, অন্য কোনও সংস্থাকে সাব-লিজ দিতে গেলে পুরসভাকে তা আগাম জানাতেই হবে। জানাতে হবে, কত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে তা-ও। অথচ ভেঙ্কটেশের ক্ষেত্রে কোনও নিয়মই মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেন পুরসভার এক কর্তা।
কেন এমনটা হচ্ছে? ওই কর্তার মন্তব্য, “লেক মল নিয়ে কোনও প্রশ্ন করবেন না। ওই মলের যা কিছু সিদ্ধান্ত সবই উপরতলা থেকে আসছে।” পুরকর্তারা সবই জানেন। তা সত্ত্বেও ভেঙ্কটেশ সংস্থার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির ব্যাখ্যা, পুরভোটের আগে দলের নির্বাচন লড়ার টাকা জোগাড়ের জন্য তড়িঘড়ি ভেঙ্কটেশ ফাউন্ডেশনকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে পুরসভা। রাহুলবাবুর কথায়, “সামনে পুরভোট। তৃণমূল জানে, সোজা পথে তারা পুরভোটে জিততে পারবে না। তাই এখন ক্লাবকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সুদীপ্ত সেন তো জেলে! তা হলে টাকা আসবে কোথা থেকে? নতুন এক সুদীপ্ত সেনের খোঁজ পেয়েছে তৃণমূল। সেই অর্থে পুরভোট জেতার পরিকল্পনা করেছে তারা।” ৬০ বছরের চুক্তিকে দু’ভাগে ভাগ করার প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুজোর পরে লেক মলের সামনে ‘ঘেরাও অভিযান’ শুরু করবে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy