সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ওই সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, সাংসদ কুণাল ঘোষ বা অন্য কোনও অভিযুক্তকেই প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়া হয়নি। তাই ওই মামলায় ধৃত ইস্টবেঙ্গল-কর্তা দেবব্রত সরকার ওরফে নিতুকেও সাধারণ বন্দি হিসেবেই জেলে রাখা উচিত বলে মনে করছে কারা দফতর। এই মর্মেই আলিপুর আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে চলেছে তারা।
নিতুকে সম্প্রতি এক মাসের জন্য প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। পরে কেন তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়ে জেল-কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট তলব করেছেন আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক হারাধন মুখোপাধ্যায়। কারা দফতর তাদের রিপোর্টে আদালতকে জানাচ্ছে, এ রাজ্যে সাধারণ ভাবে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দণ্ডিতদের প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়া হয় না। এই ধরনের দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বিচারাধীন বন্দিদের ব্যাপারে এখনও আইনি পরামর্শ নিচ্ছে ওই দফতর।
বিভিন্ন রাজ্যে কারা আইন বিভিন্ন ধরনের। যেমন, বিহারে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। প্রথম শ্রেণির বন্দিরা সাধারণ বন্দিদের থেকে বাড়তি কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। পশ্চিমবঙ্গের কারা আইন অনুযায়ী যে-সব সাজাপ্রাপ্ত বা বিচারাধীন বন্দি সামাজিক পরিচয়, শিক্ষাগত বা আর্থিক কারণে আম-বন্দির থেকে ভাল থাকতে অভ্যস্ত, তাঁদের সাধারণত প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে কারা দফতর নিজেরা কখনওই কোনও বন্দিকে ওই মর্যাদা দেয় না। তা দেওয়া হয় আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতেই।
সারদা কাণ্ডে গ্রেফতারের পরে নিতুকে গত ২৯ অগস্ট সিবিআইয়ের হেফাজত থেকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। ওই দিনই তাঁর ঠাঁই হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। তখন তাঁকে সাধারণ বন্দির মর্যাদাই দেওয়া হয়েছিল। নিরাপত্তার কারণে তার কয়েক দিন পরে তাঁকে দমদম জেলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন থেকেই নিতুর আইনজীবীরা তাঁকে ডিভিশন-১ বা প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করতে থাকেন। নিতুর যুক্তি, তিনি ময়দানের একটি বড় ক্লাবের কর্মকর্তা। সারা দেশে, এমনকী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নাম রয়েছে তাঁর ক্লাবের। তাই তাঁর প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদাই প্রাপ্য।
নিতুর আবেদনের পরে কারা দফতর প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিল, আদালতের নির্দেশ পেলে তারা অবশ্যই তা মেনে চলবে। তার পরে বিশেষ সিবিআই আদালত বিষয়টি কারা দফতরের উপরেই ছেড়ে দেয়। কারা দফতরের এডিজি অধীর শর্মা অন্তর্বর্তী আদেশে এক মাসের জন্য নিতুকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, এটা বহাল রাখতে হলে এক মাসের মধ্যে ওই বন্দিকে উচ্চ আদালত থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন আনতে হবে।
তবে কারা দফতরের বক্তব্য, সাধারণ ভাবে আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িতদের প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দেওয়া হয় না বলেই সুদীপ্ত, কুণাল-সহ সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃতেরা তা পাচ্ছেন না। কারা দফতরের এক কর্তা জানান, নিতুর আর্থিক অবস্থা জানার জন্য তাঁর আয়করের সবিস্তার তথ্য চাওয়া হয়েছিল। ওই কারাকর্তা বলেন, “দেবব্রতবাবুর আয়ের হিসেব অনুসারেও তাঁর প্রথম শ্রেণির বন্দির তকমা পাওয়ার কথা নয়।” তার পরেই কারা দফতর সিদ্ধান্ত নেয়, ২২ অক্টোবর এডিজি (কারা)-র অন্তর্বর্তী আদেশের এক মাস মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে নিতুর প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তা কেড়েও নেওয়া হয়। তার পরে আদালত ওই তকমা কেড়ে নেওয়ার কারণ জানতে চায়। সেই রিপোর্ট পেশেরই তোড়জোড় চলছে।
কারা দফতরের এক কর্তা জানান, এখনও পর্যন্ত সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কেউই প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা পাননি। তাই নিতুরও সেটা পাওয়া উচিত নয়। রাজ্যের কারা আইন অনুসারেই উচিত নয়। সেটাই আদালতকে জানানো হচ্ছে। “নিতুকে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দিলে ওই মামলার সব বন্দিই তা চাইতে পারেন। সেই দিকটাও ভেবে দেখতে হচ্ছে,” বলেছেন ওই কারাকর্তা।
গত সোমবার আদালতে নিজের জামিনের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে নিতু জানান, জেলে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছেন। ২০০১ সাল থেকেই চলছে অবসাদ। তাই এখনও রোজ তাঁকে অনেক ওষুধ খেতে হয়। গত দু’দিনে অবসাদ বেড়ে গিয়েছে। নিতুর ঘনিষ্ঠ শিবিরের অনুযোগ, প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার ফলেই তাঁর অবসাদের মাত্রা বেড়েছে।
তাতে অবশ্য কারা দফতরের মনোভাব বা নির্দেশের হেরফের হচ্ছে না। আদালত পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত ওই প্রভাবশালী ইস্টবেঙ্গল-কর্তাকে আলিপুর জেলে থাকতে হবে সাধারণ বন্দি হিসেবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy