রাজ্য সরকারের সদর দফতরের আশপাশে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা নতুন ঘটনা নয়। সে ব্যবস্থা মহাকরণ ঘিরে বরাবরই আছে। কাছাকাছি লালবাজার, রাজভবন, বিধানসভা ভবন, হাইকোর্ট ইত্যাদি থাকায় সেই নিষেধাজ্ঞার পরিধিও গোটা বিবাদী বাগ চত্বর জুড়ে। কিন্তু নবান্নের ক্ষেত্রে এত দিন তা ছিল চারপাশের ১০০ মিটার পর্যন্ত। এ বার তা অন্তত ছ’গুণ বেড়ে গেল। যার অনেকটাই ঘনবসতি এলাকা।
ক’দিন আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন নবান্নের চৌকাঠ পর্যন্ত। তারও আগে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের একটি সংগঠন তাদের দাবি নিয়ে নবান্ন অভিযান করলে ধস্তাধস্তি বেধে যায় পুলিশের সঙ্গে। ওই দুই ঘটনাকে সামনে রেখে কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠন যাতে ভবিষ্যতে রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতরে ঘেঁষতে না পারে, তাই নবান্নের চারপাশে ১৪৪ ধারার এলাকা বাড়িয়ে দিল হাওড়া কমিশনারেট।
এত দিন নবান্ন থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা ছিল। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডের জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে, নবান্নের উত্তরে মন্দিরতলা বাসস্ট্যান্ড, পূর্বে ক্ষেত্র ব্যানার্জি রোড ও নবীন ব্যানার্জি লেন হয়ে কাজীপাড়া মোড়, পশ্চিমে হরিলাল ব্যানার্জি রোড,দীনু মাস্টার লেন ও শেখপাড়া হয়ে ক্যারি রোডের সংযোগস্থল এবং দক্ষিণে ব্যাতাইতলা মোড় পর্যন্ত ১৪৪ ধারার আওতা বাড়ানো হল। ফলে আগের তুলনায় ছ’গুণ বেশি এলাকা ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় চলে এল বলে জানান এক পুলিশকর্তা। তবে আপাতত দু’মাসের জন্য ওই ফরমান জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে কমিশনারেটের নয়া নির্দেশে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেই সময়সীমা বাড়বে।
বস্তুত নবান্ন এমন একটি এলাকায়, যেখানে চারপাশে বসতি। সেখানকার বাসিন্দারা ওই ভবনের সামনে দিয়েই যাতায়াত করেন মন্দিরতলা বাসস্ট্যান্ডে কিংবা লাগোয়া বাজারে। স্কুলের ছেলেমেয়ারাও যায় নবান্ন ঘেঁষা রাস্তা ধরে। এ ছাড়া কার্যত অন্য কোনও পথ নেই তাঁদের। কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর যে দিন থেকে নবান্নে গিয়েছে, সে দিন থেকে কিছুটা হলেও ভোগান্তি বেড়েছে স্থানীয়দের। অনেকেই বলছেন, নবান্নে রাতদিন পুলিশ পাহারা থাকায় যত্রতত্র জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। শরৎ চ্যাটার্জি রোডের এক বাসিন্দা বলেন, “কারও বাড়িতে বিয়ে থাকলে আগে পুলিশকে জানাতে হয়। আমন্ত্রিতদের মাঝপথে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।” হরিলাল ব্যানার্জি লেনের এক প্রৌঢ় বাসিন্দার বক্তব্য, “বিকেলে নবান্নের সামনে একটা গোল-চক্করে গিয়ে বসতাম। পুলিশ এখন সেখান থেকে আমাদের হটিয়ে দিয়েছে।”
কিন্তু কেন এই পদক্ষেপ? নবান্নের এক কর্তা বলেন, “বাম আমলে পুলিশ-প্রশাসন সংক্রান্ত বহু প্রস্তাব নিচুতলা থেকে উঁচুতলায় পৌঁছত। সেই মতো সিদ্ধান্ত নিতেন মহাকরণের শীর্ষ কর্তারা। কিন্তু এই জমানায় অধিকাংশ নির্দেশই আসে উঁচুতলা থেকে। সেই নির্দেশ মোতাবেক প্রস্তাব তৈরি করে নিচুতলার কর্তারা। উঁচুতলা তাতে সিলমোহর দেয়।” ওই কর্তা জানান, এ ক্ষেত্রে নবান্নের চারপাশে ১৪৪ ধারার পরিধি বাড়ানোর নির্দেশও এসেছিল উপরতলা থেকেই। পুলিশ সেই নির্দেশ পালন করছে মাত্র। নবান্ন সূত্র খবর, ওই ভবনের চার দিকে ১৬টি পুলিশ পিকেট রয়েছে। রয়েছে একটি করে হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, কুইক রেসপন্স টিম ও বিদ্যাসাগর সেতুর উপরে একটি রুফ টপ পিকেট। এর বাইরে পুলিশের তিনটি দল হেঁটে হেঁটে দিনভর নজর রাখছে নবান্ন সংলগ্ন এলাকায়। সব মিলিয়ে প্রায় দুশো জন পুলিশকর্মী থাকেন নবান্নের পাহারায়।
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অন্য কথা শুনিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, নবান্নের চারপাশ এতটাই ঘিঞ্জি যে, মিটিং-মিছিল হলে এলাকার লোকের সমস্যা হত। যানজট হত। সেই সমস্যা সামাধানেই ১৪৪ ধারার পরিধি বাড়ানো হয়েছে।” এই ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন বিরোধীরা। অভিযোগ, নিরাপত্তার নামে এই সিদ্ধান্ত কার্যত নবান্নের চারপাশে পুলিশি ব্যারিকেড তৈরি করা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে রাজনৈতিক কর্মী, কাউকেই প্রশাসনের কাছে পৌঁছতে না দেওয়ার জন্য ১৪৪ ধারার পরিধি বৃদ্ধি করা হল বলে মনে করছে বিরোধী দলগুলো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy