বাড়ির পাশে বোমা বিস্ফোরণে আগেই নাম জড়িয়েছে তৃণমূল উপপ্রধানের। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বীরভূমে শাসক দলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে একটি নাইন এমএম পিস্তল, তাজা বোমা-সহ ছয় তৃণমূল নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বীরভূমের খয়রাশোল থানার সারসা এলাকা থেকে তাদের ধরা হয়। প্রত্যেকেই শাসক দলের প্রাক্তন খয়রাশোল ব্লক সভাপতি নিহত অশোক মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে পরিচিত। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া অঞ্চলের তৃণমূল নেতা রাজীব পান, হজরতপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য প্রলয় ঘোষ রয়েছেন। শেখ সেলিম, শেখ টিটু, শেখ জমিরউদ্দিন, শেখ আফজল নামে বাকি ধৃতেরা এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত। শনিবার দুবরাজপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক পাঁচ জনকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আর ধৃত শেখ টিটুর দু’দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই এলাকায় রাস্তায় নজরদারি চালানোর সময় একটি সুমো গাড়ির গতিবিধি পুলিশের কাছে সন্দেহজনক লাগে। কতর্ব্যরত পুলিশ কর্মীরা সেটিকে আটকাতে চাইলে গাড়িটি গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন বেশ খানিকটা ধাওয়া করে পুলিশ গাড়িটিকে আটকায়। পুলিশের দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে একটি নাইনএমএম পিস্তল এবং বারোটি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। তবে, শেখ মানা নামে এক তৃণমূল নেতা পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ দিকে, শুক্রবার বিকেলেই ইলামবাজারের বিলাতি পঞ্চায়েতের মেটেকোনা গ্রামে একটি বোমা বিস্ফোরণে একাধিক ব্যক্তি জখম হয়েছিলেন। বোমা বাঁধার সময় স্থানীয় বিলাতি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা এক্রামুল হকের বাড়ি লাগোয়া জমিতে ওই বিস্ফোরণ হয় বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর। ওই ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। বুধবার রাতে ইলামবাজারের ধরমপুরে গুলিতে খুন হন এনামুল শেখ নামে এক বিজেপি কর্মী। ওই ঘটনায় তৃণমূল ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম-সহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বিজেপি-র অভিযোগ, এলাকা দখলের জন্য তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যেই উপপ্রধানের বাড়িতে বোমা বাঁধা-সহ তৃণমূল এমন অপরাধমূলক কার্যকলাপ শুরু করেছে।
পরপর এই ধরনের ঘটনায় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব যথেষ্টই অস্বস্তিতে। তবে, শনিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সাফ বলেন, “খয়রাশোলে পুলিশ কাকে এবং কেন ধরেছে, তা আমি জানি না। যা জানার পুলিশকে জিজ্ঞাসা করে জানুন।” অনুব্রত এড়িয়ে গেলেও ধৃতেরা যে দলেরই নেতা-কর্মী, তা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়। উল্টে তাঁর দাবি, “নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে পুলিশ ভিত্তিহীন অভিযোগে ওঁদের গ্রেফতার করেছে। রাজনীতি করছে পুলিশ।” কিন্তু যে বীরভূম পুলিশের বিরুদ্ধে বরাবর শাসক দলের নির্দেশ মেনেই কাজ করার অভিযোগ, তারা হঠাৎ করে কেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘রাজনীতি’ শুরু করবেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি মলয়বাবু। এ দিকে, তৃণমূল নেতার এমন অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় মুখ খুলতে রাজি হননি জেলার পুলিশ কর্তারা। ফোন ধরেননি বীরভূমের এসপি অলোক রাজোরিয়া। এমনকী, এসএমএস-এরও উত্তর দেননি। অন্য দিকে, ইলামবাজারে বিজেপি কর্মী এক্রামুল শেখ খুনে ধৃত তৃণমূল কর্মী হালিম শেখকে শনিবার বোলপুর আদালত পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy