Advertisement
E-Paper

পথের বাধা দখলদারি, বলেই খালাস মদন

মেট্রোর প্রকল্প থেকে রাস্তা সম্প্রসারণ— সব ক্ষেত্রেই এ শহরে প্রধান বাধা রাস্তা দখলমুক্ত করা। অনেক ক্ষেত্রে ভোটব্যাঙ্ক রক্ষায় জবরদখলকারীদের হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ান শাসক দলের নেতারাই। রাস্তার এই জবরদখল নিয়ে জেরবার হওয়ার কথা এ বার কার্যত স্বীকার করে নিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯

মেট্রোর প্রকল্প থেকে রাস্তা সম্প্রসারণ— সব ক্ষেত্রেই এ শহরে প্রধান বাধা রাস্তা দখলমুক্ত করা। অনেক ক্ষেত্রে ভোটব্যাঙ্ক রক্ষায় জবরদখলকারীদের হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ান শাসক দলের নেতারাই। রাস্তার এই জবরদখল নিয়ে জেরবার হওয়ার কথা এ বার কার্যত স্বীকার করে নিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। বৃহস্পতিবার কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই)-এর একটি সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, শহর ও শহরতলিতে রাস্তা বাড়ানো এবং চওড়া করার পথে প্রধান বাধা জবরদখল। কিন্তু জবরদখল হটিয়ে রাস্তা চওড়া করতে সরকার কোনও ইতিবাচক ভূমিকা নেবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করেননি তিনি।

মদনবাবু এ দিন বলেন, “ছোটবেলা থেকে পড়ে এসেছি, যে কোনও দেশে বা রাজ্যে ন্যূনতম ৩০% রাস্তা থাকা প্রয়োজন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে দেখলাম, এ রাজ্যে শুধুমাত্র ৪% রাস্তা রয়েছে। বাকি সব জায়গায় দখলদার। এ জন্য শহরে শুধুমাত্র ৪% রাস্তা নিয়েই আমাকে কাজ করতে হয়েছে।”

বস্তুত, বাম আমলেই কলকাতা ও শহরতলি এলাকার ফুটপাথ কিংবা রাস্তার দু’ধার দখল হয়ে গিয়েছে। ১৯৯৬ সালে ‘অপারেশন সানশাইন’ নাম দিয়ে রাস্তা দখলমুক্ত করার কাজে নেমেছিলেন সিপিএমের কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসের বাধায় তা শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি। পরে বর্তমান পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কলকাতা পুরসভার মেয়র থাকার সময়েও শহরের ২১টি প্রধান রাস্তা চিহ্নিত করা হয় দখলমুক্ত করার জন্য। কিন্তু দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপে শেষমেশ তা বাস্তবায়িত করতে পারেননি সুব্রতবাবু।

এ দেশে কলকাতার চেয়ে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইয়ের মতো শহরে রাস্তার পরিমাণ অনেকটাই বেশি। দিল্লিতে রাস্তা ২০ শতাংশ। মুম্বই-চেন্নাইয়ে তার চেয়ে কম হলেও এ শহরের তুলনায় তা ঢের বেশি। বাস্তবে রাস্তা দখলমুক্ত করা না গেলে উন্নয়ন যে সম্ভব নয়, তা এ দিনের বক্তৃতায় কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। রাস্তা দখলমুক্ত যে করার কোনও উপায় নেই, তা-ও কার্যত এ দিনের বক্তব্যে স্বীকার করে নেন তিনি। তাঁর মতে, “অনেকেই আমাকে বাস, ট্যাক্সির জন্য রাস্তায় পৃথক জায়গা করার পরামর্শ দেন। কিন্তু যে ভাবে রাস্তা জবরদখল হয়ে রয়েছে, তাতে তা সম্ভব নয়। তা-ও যতটুকু জায়গা রয়েছে, তার মধ্যেই আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।” মদনবাবুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে রাজ্য প্রশাসনের একাংশের কর্তারা স্বীকার করে নিচ্ছেন, রাস্তা দখলমুক্ত করতে না-পারায় পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে না। ফলে এ রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশও তৈরি করা যাচ্ছে না।

২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে অনেকেরই ধারণা হয়েছিল, রাস্তা দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে সদর্থক ভূমিকা নেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ক্ষমতায় আসার পরে পৃথক হকার নীতি তৈরি হবে বলে ঘোষণাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে তিন বছর পরেও এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি সরকার।

রাজ্য পূর্ত দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এর ফলে ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক (যশোহর রোড) কার্যত পুরোটাই দু’পাশ দিয়ে দখল হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। মধ্যমগ্রাম, দোলতলা বা হাবড়ার মতো কোথাও কোথাও অবস্থা এমন যে তিন কিলোমিটার পথ পেরোতেই ঘণ্টা দুই সময় লেগে যায়। সেই রাস্তা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে মূল বাধা হকারদের সংগঠন। বর্তমানে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র ছত্রচ্ছায়াতেই রয়েছেন হকারদের সিংহভাগ।

বিমানবন্দর থেকে বারাসত পর্যন্ত যশোহর রোড সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছিলেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। সেই কাজের জন্য বেশ কিছু গাছও কাটা হয়। বছর খানেক আগে রাজ্যের পূতর্মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারও জানিয়েছিলেন, কিছু দিনের মধ্যেই রাস্তা চওড়া করার কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তা আজও শেষ হয়নি। এ ব্যাপারে স্থানীয় বাধাই কারণ বলে জানাচ্ছেন পূর্ত দফতরের কর্তারা।

একই হাল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজের। গত চার বছরে এই নিয়ে ১২ বার বাধা পেয়ে ফিরে এসেছেন সরকারি কর্মীরা। অথচ কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের ডালখোলা পর্যন্ত ৪৫৩ কিলোমিটার লম্বা রাস্তার প্রায় পুরোটাই চার লেনের তৈরি হয়ে গেলেও কেবল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙায় কয়েকটি এলাকায় বাধার জন্য গোটা রাস্তাটি থমকে রয়েছে। ২০০৯ সালে এ জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে এর জন্য ২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ২০০৯ সাল থেকে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও হয়েছে প্রায় ২০ বার। কিন্তু সুরাহা কিছুই হয়নি। আগে ওই রাস্তার কাজ আটকে গিয়েছিল তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের বাধায়। এখনও শাসক দল তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই সে কাজে সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ।

শুধু এই দুই রাস্তাই নয়, ই এম বাইপাস সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্প, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পেও বহু জায়গার কাজই আটকে রয়েছে রাস্তা ও তার দু’পাশ দখলমুক্ত করতে না-পারার কারণে।

road occupancy operation sunshine madan mitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy