Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পরিকল্পনা-ব্যয় দেখিয়ে অন্য সুরের প্রচারে মমতা

বিরোধীদের আক্রমণের মোকাবিলায় এ বার তাঁর সরকারের আর্থিক বুনিয়াদকে প্রচারে তুলে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় দ্বিতীয় দফার ভোটের প্রাক্কালে বুধবার ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে পরিকল্পনা খাতে টাকা খরচের হার এক বছরে ৩৫% বেড়েছে। এটাই এ রাজ্যে পরিকল্পনা খাতে বৃহত্তম অর্থ খরচের নজির বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:০০
Share: Save:

বিরোধীদের আক্রমণের মোকাবিলায় এ বার তাঁর সরকারের আর্থিক বুনিয়াদকে প্রচারে তুলে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় দ্বিতীয় দফার ভোটের প্রাক্কালে বুধবার ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে পরিকল্পনা খাতে টাকা খরচের হার এক বছরে ৩৫% বেড়েছে। এটাই এ রাজ্যে পরিকল্পনা খাতে বৃহত্তম অর্থ খরচের নজির বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি।

ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে পরিকল্পনা খাতে যেখানে ১৮ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল, সেখানে ২০১৩-১৪’য় সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল সরকার নিজেদেরই রেকর্ড অতিক্রম করে গিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। বাম জমানার রেখে যাওয়া আর্থিক দায়ভার সামলে এই কৃতিত্ব যথেষ্ট উৎসাহজনক বলেই মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন। বাজেট বরাদ্দের নিরিখে মূলধনী ব্যয়ও ৪৮% বেড়েছে ওই এক বছরে। জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীই।

তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, গত পঞ্চায়েত ও কয়েকটি উপনির্বাচনের মতো এ বার লোকসভা ভোটেও উন্নয়নের খতিয়ান নিয়ে আসরে নেমেছিল শাসক দল। কিন্তু গত কয়েক দিনে সারদা-কাণ্ড নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের ঝড়ে সে সব অনেকটাই পিছনে চলে গিয়েছে। বিরোধীদের মোকাবিলায় পাল্টা আক্রমণ করে, কখনও রক্ষণাত্মক হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে তৃণমূলকে। এই অবস্থায় রাজ্যের আর্থিক সুস্বাস্থ্যের তথ্য পেশ করে ‘ইতিবাচক’ প্রচারের সুর বাঁধতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী। যে কারণে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করেছেন, “বাংলা এখন তৃণমূলের আশাবাদের কাহিনি এবং বাম-সহ বিরোধীদের নেতিবাচক কাহিনির লড়াই দেখছে! আমাদের বিরোধীরা মরিয়া হয়ে উঠেছে!” আর্থিক বিষয় নিয়ে

ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকারকেও তুলোধোনা করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

মমতার সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা বহির্ভূত ব্যয় নিয়েই বারংবার সরব হয়েছে বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রী তাই পরিকল্পনা খাতে খরচ দেখিয়েই তার পাল্টা বক্তব্য তুলে ধরতে চেয়েছেন। তার জবাবে এ দিন রাজ্য সিপিএম আবার তাদের টুইটার অ্যাকাউন্ট মারফত এই কটাক্ষই ফিরিয়ে দিয়েছে যে, “উৎসব আয়োজন করতে যত পারো ধার করো! এই সরকারের বাংলা মডেল মানে আর কিছুই না!”

মুখ্যমন্ত্রী ফেসবুকে দাবি করেছেন, তাঁর সরকার আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে বলেই রাস্তা, সেতু, উড়ালপুল, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল, পানীয় জলের মতো পরিকাঠামো বেশি বেশি করে তৈরি হয়েছে।

তার পাশাপাশি, রাজ্যের ৬৩টি দফতর সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি ও উপজাতি এবং ওবিসি-সহ সব অংশের মানুষের সামাজিক মানোন্নয়নে বিস্তর পরিশ্রম করেছে।

তবে মুখ্যমন্ত্রী এমন দাবি করলেও তার বাস্তবতা নিয়ে সংশয় অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। সরকারি আধিকারিকদেরই একাংশের বক্তব্য, পরিকল্পনা খাতে যে টাকা অর্থ দফতর বিভিন্ন দফতরকে বরাদ্দ করেছে, তা বাস্তবে কতটা খরচ হয়েছে তার কোনও হিসেব এখনও আসেনি। তাঁদের ব্যাখ্যা, উন্নয়ন খাতে অর্থ দফতরের বরাদ্দকৃত টাকা জেলাশাসক এবং অন্যান্য অধিগৃহীত সংস্থায় চলে গেলেই তা খরচ বলে ধরা হয়। কিন্তু সেই টাকা প্রকৃত অর্থে উন্নয়নের কাজে লেগেছে, নাকি জেলাশাসকদের পার্সোনাল লেজার (পিএল) অ্যাকাউন্টে বা অধিগৃহীত সংস্থাগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য অর্থ দফতরের কাছে আসেনি। দফতরের এক কর্তা বলেন, “ট্রেজারি থেকে টাকা বেরিয়ে গেলেই আমাদের হিসেবে তা খরচ হয়ে গিয়েছে। টাকা যদি পড়ে থাকে, তা হলে অডিটের সময় ধরা পড়ে।” পি এল অ্যাকাউন্টে টাকা পড়ে থাকার এই সূত্র ধরেই বিধানসভায় বিগত বাজেট-বিতর্কে রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক তথা লোকসভার প্রার্থী সুখবিলাস বর্মা।

অর্থ দফতরেরই এক সূত্রের খবর, অধিগৃহীত সংস্থার কর্তা এবং জেলাশাসকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে মোটা টাকা পড়ে থাকায় প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল (পিএজি)-এর অফিস থেকে বেশ কয়েক বার সতর্ক-বার্তা এসেছে। কিন্তু তার পরেও উন্নয়নের কাজে সেই টাকা লাগেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

annual expenditure mamata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE