Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পরদেশে ঘর খুঁজে ফিরছেন তারকারা

এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত... সুরেলা প্রশ্নটা ছিল মায়ের লিপে। সামনে উত্তমকুমার। বসন্তের রোদ্দুরে এখনই যথেষ্ট আঁচ। দু’দিন বাদে তিষ্ঠোনো দায় হবে। লালমাটির রুক্ষ দেশে ঠা-ঠা দুপুরে অনন্ত পথ যে মোটেই সুখের হবে না, কে না জানে! কলকাতা-বাঁকুড়া ডেলি প্যাসেঞ্জারি করাও কি সম্ভব? তাই খোঁজ পড়েছে ঘরের।

মালদহে চললেন তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র রায়। ট্রেনে গুছিয়ে রাখছেন ব্যাগ। সোমবার হাওড়ায় সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

মালদহে চললেন তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র রায়। ট্রেনে গুছিয়ে রাখছেন ব্যাগ। সোমবার হাওড়ায় সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৫
Share: Save:

এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত...

সুরেলা প্রশ্নটা ছিল মায়ের লিপে। সামনে উত্তমকুমার।

বসন্তের রোদ্দুরে এখনই যথেষ্ট আঁচ। দু’দিন বাদে তিষ্ঠোনো দায় হবে। লালমাটির রুক্ষ দেশে ঠা-ঠা দুপুরে অনন্ত পথ যে মোটেই সুখের হবে না, কে না জানে! কলকাতা-বাঁকুড়া ডেলি প্যাসেঞ্জারি করাও কি সম্ভব? তাই খোঁজ পড়েছে ঘরের।

গোটা কতক গামছা কিনে মুনমুন তো বাঁকুড়া চললেন বলে। তবু তিনি একা হলে হতো। কিন্তু রিয়া-রাইমাও তাঁর সঙ্গে আসবেন বলে খবর। সব সময় না হলেও, কখনও-সখনও তো বটেই। তারকাদের কি আর যেখানে-সেখানে রাখা যায়?

মুনমুন ইতিমধ্যে বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, পরিচ্ছন্ন নিরিবিলি ঘরই তাঁর পছন্দ। হোটেলে তেমন পরিবেশ পাওয়া মুশকিল। জেলা তৃণমূলের নেতা অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা বাইপাস এলাকায় বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কথা ভাবছি।” তবে নিরাপত্তা নিয়েও তাঁরা চিন্তিত। বিশেষত, মুনমুন-রাইমাদের দেখতে লোকে যখন ভিড় করে আসবেই।

নিরাপত্তারক্ষী থাকায় হোটেল সে সব ঝামেলা কম। বাঁকুড়া শহরে ভাল হোটেল হাতে গোনা। গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার কংগ্রেস প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এসে তারই একটিতে টানা ছিলেন। হোটেলগুলির তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থা করতেও তারা প্রস্তুত।

আর এক তারকা প্রার্থী শতাব্দী রায় বীরভূম কেন্দ্রে লড়ার জন্য গত বারই রামপুরহাটের নিশ্চিন্তপুরে ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে দু’বার চুরি হওয়ায় তিনি আর নিশ্চিন্ত থাকতে পারেননি। কাছেই অন্য একটি বাড়িতে উঠে যান। গত বার কৃষ্ণনগরের ক্ষৌণীশ পার্কের কাছে বাড়ি ভাড়া নিয়ে জেতেন তাপস পাল। তাঁর কথায়, “বাড়িটা আমার পয়া। মালিকও চেনা। তাই সেটাই ফের ভাড়া নিয়েছি।”

বীরভূম কেন্দ্রে এ বার বিজেপি-র টিকিটে শতাব্দীর মুখোমুখি অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও দু’মাসের জন্য রামপুরহাটে ঘর নিচ্ছেন। জয় বলেন, “একতলা দু’কামরার ঘর খুঁজতে বলা হয়েছিল। কর্মীরা মনে হয় পাননি। তাই একটি ফ্ল্যাটবাড়ির একাংশ নেওয়া হয়েছে। ১৩ মার্চ যাচ্ছি।”

মেদিনীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী সন্ধ্যা রায় কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে চাপে জেলা নেতৃত্ব। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, কোনও বড় হোটেলে ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু নেতাদের একাংশের তাতে আপত্তি। তাঁদের মতে, ঘর ভাড়া করাই ভাল। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “আমরা দু’টি ঘর দেখেছি। কলকাতা থেকে প্রার্থীর পরিজনেরা এসে পছন্দ করবেন।” জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি যোগ করেন,“দু’টো ঘরেরই পরিবেশ ভাল। বারান্দাও রয়েছে। ওঁদের নিশ্চয়ই ভাল লাগবে।”

বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর ডেরায় হানা দিতে যাওয়া গায়ক ইন্দ্রনীল সেনের জন্য লালদিঘির কাছে পারিজাত আবাসনে দু’কামরার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে তৃণমূল। বারাসত ছেড়ে জঙ্গিপুরে সরতে হওয়া সাংসদ নুরুল ইসলাম তো মুর্শিদাবাদের উমরপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে আস্ত একটা ছোট হোটেলই ভাড়া করেছেন। ভূমি-র সৌমিত্র রায়ের নিজের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুরে। সেখান থেকেই তিনি মালদহ উত্তর কেন্দ্রে জোড়াফুলের ধ্বজা ওড়াবেন বলে ঠিক করেছেন।

রায়গঞ্জের মিলনপাড়ায় নিজের বাড়ি রয়েছে অশীতিপর অভিনেতা নিমু ভৌমিকের। বাড়ির একাংশ ভাড়া দেওয়া থাকলেও তাঁর জন্যও কয়েকটি ঘর রাখা আছে। সেখান থেকেই তিনি প্রচার চালাবেন, জানান বিজেপি-র প্রবীণ প্রার্থী। তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহম্মদ সেলিম থাকছেন রায়গঞ্জেই উত্তর দিনাজপুর জেলা সিপিএম অফিসে। সেখানে নেতাদের থাকার জন্য তিনটি ঘর আছে। বালুরঘাটের প্রার্থী, নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের জন্য গঙ্গারামপুরের দুর্গাবাড়ি এলাকায় নিজের পাড়ায় বাড়ি ভাড়া করেছেন তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রার্থী দাঁড় করিয়ে কড়া ডিফেন্স দিলে কী ভাবে ড্রিবল করবেন, ছক হয়তো কষছেন ভাইচুং ভুটিয়া। কিন্তু তাঁর নিজের ঘর এখনও গোছানো হয়নি। দার্জিলিং ও শিলিগুড়িতে বাড়ি খুঁজছেন তিনি। শিলিগুড়িতে ক্লাব টাউনে একটি ফ্ল্যাট পছন্দও হয়েছে। তবে কিছু চূড়ান্ত হয়নি। যেমন, ঠিক হয়নি ঘাটালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পতাকা তুলতে এসে দেব কোথায় থাকবেন। কেশপুরের পৈতৃক বাড়ি থেকে রোজ যাতায়াত সম্ভব নয়। তাঁর মতো তারকার থাকার উপযুক্ত লজ, হোটেল, গেস্ট হাউসও ঘাটালে নেই। আপাতত তাই মেদিনীপুর শহরেই বাড়ি দেখা চলছে।

তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও ডায়মন্ড হারবারে ঘর নেননি। বিজেপি-র পি সি সরকারও না। স্ত্রী আর মেয়েদের নিয়ে বালিগঞ্জের বাড়ি থেকেই আপাতত তিনি বারাসতে আসা-যাওয়া করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। হোটেল তাঁর লাগবেই বা কেন? লহমায় যিনি তাজমহল ভ্যানিশ করে দিতে পারেন, আপদে-বিপদে ধাঁ করে এক-আধটা তাজ হোটেল হাজির করা তাঁর কাছে কী?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

soumitra roy loksabha election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE