Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
যাদবপুর

পড়ুয়ারা এসো, দরজা তো বন্ধ নয়: শিক্ষামন্ত্রী

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা কী, তাঁদের কাছ থেকেই বারবার তা শুনতে চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আলোচনায় বসার জন্য মঙ্গলবার আবার ওই পড়ুয়াদের আহ্বান জানালেন তিনি। পড়ুয়াদের সমস্যা ঠিক কোথায়, কী নিয়েই বা তাঁদের ক্ষোভ সব কিছুই তাঁকে জানাতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। যাদবপুরের পঠনপাঠন, গবেষণার মান বজায় রাখার ব্যাপারে প্রবীণ অধ্যাপকদের অনেকেই বারবার সংশয় প্রকাশ করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা কী, তাঁদের কাছ থেকেই বারবার তা শুনতে চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আলোচনায় বসার জন্য মঙ্গলবার আবার ওই পড়ুয়াদের আহ্বান জানালেন তিনি। পড়ুয়াদের সমস্যা ঠিক কোথায়, কী নিয়েই বা তাঁদের ক্ষোভ সব কিছুই তাঁকে জানাতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

যাদবপুরের পঠনপাঠন, গবেষণার মান বজায় রাখার ব্যাপারে প্রবীণ অধ্যাপকদের অনেকেই বারবার সংশয় প্রকাশ করেছেন। পার্থবাবুও এ দিন বিকাশ ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “কোনও একটি ঘটনার সূত্র ধরে যাতে সামগ্রিক ভাবে পড়াশোনার মানের অবনমন না-হয়, আমি সেটাই দেখার চেষ্টা করব। মান বাঁচানোর চেষ্টা করব।”

তবে যাঁদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রীর এই আহ্বান, সেই ছাত্রছাত্রীদের দিক থেকে সাড়া দেওয়ার উদ্যোগ বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। পড়ুয়াদের বক্তব্য, যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের কী সমস্যা, কী তাঁদের দাবি, তা তো শিক্ষামন্ত্রীর অজানা নয়। কিন্তু সেই দাবিতে তিনি এ-পর্যন্ত কর্ণপাত করেননি। তাই তাঁর আলোচনার ডাকে তাঁরা মোটেই উৎসাহিত নন বলে পড়ুয়াদের একাংশ এ দিন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের ধারণা, আগামী ২৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন যাতে নির্বিঘ্নে হয়, আসলে সেই লক্ষ্যেই আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছেন মন্ত্রী। যাদবপুরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেও এমনটাই মনে করছেন।

সমাবর্তন নিয়ে সমস্যাটা কী?

সমস্যা একটা নয়, অনেক। এবং সব ক’টির মূলেই আছে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর প্রতি পড়ুয়া ও শিক্ষকদের বড় অংশের বিমুখতা। আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এই উপাচার্যের হাত থেকে শংসাপত্র নেবেন না। ক্যাম্পাসে সমাবর্তন হলে গোলমালের আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষই। রাজ্য সরকার অভিজিৎবাবুকে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে তিনি এখনও কার্যত কোণঠাসা। ছাত্র ও শিক্ষকদের বড় অংশ তাঁর পদত্যাগের দাবিতে অনড়। এই পরিস্থিতিতে সমাবর্তন কোথায় হবে, কী ভাবে হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আন্দোলনকারীরা সে-দিন কোনও কর্মসূচি নেবেন কি না, আছে সেই প্রশ্নও। বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দির বাইরে কোনও প্রেক্ষাগৃহে সমাবর্তন হতে পারে বলে জোর জল্পনা চলছে। টেলিফোনে বা মোবাইলে এসএমএস মারফত চেষ্টা করেও উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাই এই ব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

আজ, বুধবার আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করার কথা অভিজিৎবাবুর। সেই বৈঠকে সমাবর্তন-প্রসঙ্গ উঠতে পারে বলেও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। ১৬ সেপ্টেম্বর পড়ুয়াদের ঘেরাও হটাতে উপাচার্য পুলিশ ডাকেন। তার পরে ছাত্রছাত্রীদের উপরে পুলিশি পীড়নের প্রতিবাদে ব্যাপক কলরব হয়েছে। সব মিলিয়ে যাদবপুরে যে-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, উপাচার্যের পক্ষে তা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না দেখেই শিক্ষামন্ত্রী তাঁর পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে বলা হয়, মন্ত্রী সেই জন্যই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে পড়ুয়াদের ক্ষতে মলম লাগাতে চাইছেন। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলেন, “যাদবপুর যাতে উৎকর্ষের উচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারে, সেই জন্যই ছাত্রছাত্রীদের বলছি তোমরা এসো। আলোচনার দরজা তো বন্ধ নয়!”

শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনায় বসার আহ্বান নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ যথেষ্ট সন্দিহান। আন্দোলনকারী ছাত্রী অরুমিতা মিত্র বলেন, “এত দিন বাদে, সমাবর্তনের ঠিক আগে শিক্ষামন্ত্রী কেন আমাদের সমস্যা জানতে চাইছেন, তা স্পষ্ট নয়। তা ছাড়া আমাদের দাবি তো ওঁর অজানা নয়।” তবে অম্লান হাজরা নামে এক ছাত্র বলেন, “মন্ত্রী যদি সরাসরি ছাত্রছাত্রীদের কাছে আলোচনার ডাক দেন, তা হলে সেটা নিশ্চয়ই ভেবে দেখা হবে।” তবে এঁদের সকলেই জানিয়েছেন, এগুলি তাঁদের ব্যক্তিগত মত। সাধারণ সভার বৈঠকে আলোচনা না-করে সাংগঠনিক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত জানানো যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE