বনগাঁর এক বাজারে প্রচারে ব্যস্ত বিজেপি প্রার্থী কে ডি বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র
মানিকচক থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা জেলায় নির্বাচনী প্রচারে মোটরবাইক মিছিল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দিল মালদহ জেলা প্রশাসন। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্ধমান জেলা প্রশাসনও। ঝামেলা এড়াতে মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনও মোটরবাইক বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিজেদের মতো করে নির্দেশিকা জারি করেছে। নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা বলেন, “ক্ষমতা প্রদর্শনে বাধা দিলেই কোথাও কোথাও কমিশনের কর্মীদের উপরে চড়াও হচ্ছেন রাজনৈতিক কর্মীরা। তাই আমরা মৌখিক ভাবে সব জেলাকেই নিজেদের মতো করে বাইক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছি।”
চলতি সপ্তাহেই মানিকচকে মোটরবাইক বাহিনীর ছবি তুলতে গিয়ে নিগৃহীত হয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা। তার জেরে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজ্যের এক মন্ত্রীর জামাইকেও। বাইক বাহিনী নিয়ে অভিযোগ এসেছে বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় ও ডায়মন্ড হারবার, উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া থেকেও। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়ম ভাঙায় অভিযুক্ত শাসক দল।
প্রচারে মোটরবাইক মিছিল ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সুনির্দিষ্ট নিয়মবিধি আছে। তাতে বলা আছে, প্রার্থীকে আগে থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রচারে মোটরবাইক ব্যবহারের অনুমতি নিতে হবে। জানাতে হবে, ক’টি মোটরবাইক থাকবে মিছিলে। সেগুলির নম্বরও আগাম জানিয়ে রাখতে হবে। কার্যক্ষেত্রে এর অন্যথা হলেই নির্বাচনী বিধি ভাঙার দায়ে পড়তে হতে পারে। সমস্যাটা হচ্ছে ঠিক এইখানেই। এক জেলাশাসকের মন্তব্য, “১০টি বাইকের নম্বর-সহ আবেদন জমা পড়ছে। তার ভিত্তিতে আমরা অনুমোদন দিচ্ছি। কিন্তু মিছিল শুরু হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, শ’খানেক বাইক চলে আসছে। নির্বাচনী বিধি ভাঙার দায়ে সেই বাড়তি বাইকগুলির ছবি তুলতে গেলেই হামলা হচ্ছে। মানিকচকে ঠিক এমনটাই ঘটেছে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন, কমিশনেরই উচিত মোটরবাইক মিছিল সংক্রান্ত নিয়ম আগেই জানিয়ে দেওয়া।
যদিও রাজ্যের দুই জেলাশাসক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই মোটরবাইক মিছিলের অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। মালদহের জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “মানিকচকের ঘটনার পর জেলায় কোথাও আর বাইক-মিছিলের অনুমতি দেওয়া হবে না। আগে থেকে যে সমস্ত মিছিলে মোটরবাইক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া আছে, সেখানে অবশ্য চলতে পারে। তবে যে ক’টি মোটরবাইককে মিছিলে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার বেশি একটিও রাখা যাবে না। কেউ নিয়ম না মানলে কঠোর হবে প্রশাসন।”
মালদহের পথেই হেঁটেই জেলায় মোটরবাইক-মিছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছেন বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে জানিয়ে দিয়েছি, বাইক নিয়ে বেরোলেই তা আটক করা হবে।” মোটরবাইকে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা না চাপালেও কড়া নিয়ম জারি করেছেন মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রত্নাকর রাও। বললেন, “এখানে ১০টির বেশি বাইক নিয়ে মিছিলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তা-ও টানা ১০টি বাইক যেতে পারবে না। একসঙ্গে তিনটি বাইক যাবে, তার পর ২০০ মিটার ব্যবধান রেখে আবার তিনটি বাইক। এই নিয়ম ভাঙলেই বাইক আটক করা হবে।”
মোটরবাইক বাহিনী নিয়ন্ত্রণের পথে হেঁটেছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরীও। উত্তর কলকাতার নির্বাচনী আধিকারিক দুর্গাদাস গোস্বামীর ব্যাখ্যা, “যদি মনে হয় ১০টি বাইক নিয়ে মিছিল হলেও যানজটে রাস্তা আটকে যাবে, তা হলেও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।”
সূত্রের খবর, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ যে দিন রাজ্য সফরে এসেছিল, সেই ৬ এপ্রিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক শান্তনু বসু মোটরবাইক বাহিনীর দাপটের কথা সবিস্তার জানিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পতকে। সম্পত তাঁদের বলেন, বাইক মিছিল বন্ধে কোনও সার্বিক নির্দেশ জারি করার দরকার নেই। কিন্তু জেলার নির্বাচনী আধিকারিকেরা যে যাঁর মতো করে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারেন। উদাহরণ দিয়ে কমিশনের ওই সূত্রটি জানান, কোনও জেলাশাসক যদি মনে করেন, তাঁর জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, তা হলে তিনি বাইক-বাহিনী নিষিদ্ধ করতেই পারেন। আবার মোটরবাইকগুলির বৈধ কাগজপত্র আছে কি না, সেগুলি ট্রাফিক আইন মানছে কি না, চালকেরা হেলমেট পরছেন কি না ইত্যাদি নিয়েও কোনও জেলা প্রশাসন নজরদারি করতে পারে। সম্পত এই বিষয়গুলির কথাই বোঝাতে চেয়েছেন বলে সূত্রটির ব্যাখ্যা।
সেই কড়াকড়ি শুরু হওয়ার পরেই মানিকচকের ঘটনা ঘটে। তার জেরে জেলাশাসকরা এখন আরও কঠোর। কারও কারও মতে, অতি সম্প্রতি কমিশনের নির্দেশে বদলি হয়েছেন এক জেলাশাসক, দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং পাঁচ এসপি। অন্য অফিসারেরা তাই ঝুঁকি নিতে নারাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy