Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিক্ষোভেও শাস্তি নয়, আরও সুযোগ ছাত্রনেতাকে

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখানোয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র নেতা সৌরভ অধিকারীকে টেলিফোন করে ধমক দিয়েছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী। তা সত্ত্বেও ওই ছাত্রনেতাকে কোনও শাস্তি দিচ্ছেন না টিএমসিপি-র নতুন রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। সৌরভকে আরও সুযোগ দিতে চান তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখানোয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র নেতা সৌরভ অধিকারীকে টেলিফোন করে ধমক দিয়েছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী। তা সত্ত্বেও ওই ছাত্রনেতাকে কোনও শাস্তি দিচ্ছেন না টিএমসিপি-র নতুন রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। সৌরভকে আরও সুযোগ দিতে চান তিনি।

এক গুচ্ছ দাবিতে গত সোমবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা ভবনের দোতলায় সেনেট হলের সামনে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান টিএমসিপি-র এক দল নেতা-কর্মী-সমর্থক। বিক্ষোভকারীদের সেই দলে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বেশ কিছু বহিরাগতও ছিলেন। এবং ওই বিক্ষোভ-কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন সৌরভ অধিকারী। সংগঠনের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও অশোকবাবু ওই কর্মসূচির কথা জানতেনই না। রাজ্য সভাপতিকে না-জানিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে এমন বিক্ষোভ-কর্মসূচি কী ভাবে নেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তো উঠেছেই। একই সঙ্গে এই প্রশ্নটাও বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে, সংগঠনের অন্য নেতারা কি তা হলে অশোকবাবুকে শীর্ষ নেতা হিসেবে মানতে চাইছেন না?

ক্ষমতায় এলে শিক্ষার আঙিনাকে রাজনীতিমুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁরা ক্ষমতায় আসার পরে কার্যক্ষেত্রে সেই আশ্বাসের প্রতিফলন দেখা যায়নি। শঙ্কুদেব পণ্ডা শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। চলতি বছরে খাস কলকাতা-সহ সারা রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি-সহ বিভিন্ন বিষয়কে ঘিরে ছাত্র-তাণ্ডব তুঙ্গে উঠেছিল। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের দিকে।

‘পরিবর্তন’-এর সরকার শেষ পর্যন্ত অশোকবাবুকে দলের ছাত্র শাখার নতুন প্রধান করায় আশা করা হচ্ছিল, শিক্ষাঙ্গনে জঙ্গিপনায় ছেদ পড়বে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবারের বিক্ষোভের পরে সেই আশাও সংশয়ের কবলে। যদিও ওই কর্মসূচিতে অশোকবাবু ছিলেন না। কিন্তু বড় হয়ে উঠছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তাঁর নরম মনোভাব। এ ভাবে বিক্ষোভ দেখানো যাবে না, নিছক এই বার্তা পাঠিয়েই থেমে গিয়েছেন তিনি। সৌরভদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেননি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা বা আন্দোলনের নামে জঙ্গিপনা বরদাস্ত করা হবে না। দাবিদাওয়া থাকলে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দাবিপত্র পেশ করা যেতে পারে। প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেও দলের ছাত্র সংগঠনের প্রধান অশোকবাবু বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে হাত গুটিয়ে আছেন কেন?

টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতিকে না-জানিয়ে কেন সোমবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখানো হল, তা জানতে চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার সৌরভকে ফোন করেছিলেন বলে তৃণমূল ভবন সূত্রের খবর। ওই সূত্রেই জানা গিয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না-ঘটে, সে-কথা বলে ওই ছাত্রনেতাকে সতর্কও করে দেন মন্ত্রী।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলনে সামিল হয়েছেন রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের ছাত্রনেতা সৌরভ। এমনকী ক্লাস চলাকালীন ভিতরে ঢুকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। শারীরবিদ্যার শিক্ষিকা রোশেনারা মিশ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অন্যতম নেতা এই সৌরভ। গত জুলাইয়ে রাজাবাজার ক্যাম্পাসের ভিতরে হাততালি দিয়ে রোশেনারার বিরুদ্ধে তারস্বরে স্লোগান দেন তিনি। মূলত সৌরভ এবং তাঁর দলবলের দাপাদাপির জেরে ক্যাম্পাসে ‘নিরাপত্তা’র অভাবে টানা এক সপ্তাহ ক্লাস করেননি শারীরবিদ্যার পড়ুয়ারা।

এ-হেন বিতর্কিত নেতা, যাঁকে খোদ শিক্ষামন্ত্রী টেলিফোনে ধমকেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্র সংগঠন কোনও ব্যবস্থা নেবে না কেন?

টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোকবাবুর জবাব, “শিক্ষামন্ত্রী ওঁর কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন ওই দিন বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি ওঁকে দলের নীতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ফের যেন এই ধরনের ঘটনা না-ঘটে।” এই অবস্থায় ওই ছাত্রনেতাকে আরও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান অশোকবাবু।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন-তখন ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখানো যাবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু। টিএমসিপি-র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জানিয়েছিলেন, কোনও বক্তব্য থাকলে বড়জোর পাঁচ জনের প্রতিনিধিদল প্রতিষ্ঠান-কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতি নিয়ে তা জানাতে যেতে পারে। তা সত্ত্বেও সোমবার তিনি বিক্ষোভ দেখাতে গেলেন কেন?

জবাবে সৌরভ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কিছুই বলবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE