Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ফব-র বিরুদ্ধে মাওবাদী যোগের অভিযোগ

বিতর্ক উস্কে সম্মেলনের সমাপ্তি

সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগকে ঘিরে তীব্র সংঘাত দেখা দিয়েছে দুই বাম শরিকের মধ্যে। এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা ফব নেতৃত্ব। রবিবার বৈঠক করে জেলা নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দু’দলের রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি নিয়ে সুরাহা করতে হবে। পরিস্থিতির চাপে পড়ে সম্মেলনে উপস্থিত সিপিএমের জেলা থেকে রাজ্য নেতারাও কেউই ওই অভিযোগের পক্ষে সায় দেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগকে ঘিরে তীব্র সংঘাত দেখা দিয়েছে দুই বাম শরিকের মধ্যে। এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা ফব নেতৃত্ব। রবিবার বৈঠক করে জেলা নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দু’দলের রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি নিয়ে সুরাহা করতে হবে। পরিস্থিতির চাপে পড়ে সম্মেলনে উপস্থিত সিপিএমের জেলা থেকে রাজ্য নেতারাও কেউই ওই অভিযোগের পক্ষে সায় দেননি। সম্মেলন শেষে দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ঘোষণা করতে বাধ্য হন, “প্রতিবেদন সংশোধিত ও সংযোজিত হয়েছে। রিপোর্টের অংশ হিসেবে ওই বিষয়টি গৃহীত হচ্ছে না।”

বস্তুত, এতদিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে মাওবাদীদের সঙ্গে যোগসাজসের অভিযোগ তুলত সিপিএম। কিন্তু ওই খসড়া প্রতিবেদনে এই প্রথম সিপিএমের তরফে বামফ্রন্টের অপর শরিক ফব-র বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ‘আড়শা, বলরামপুর বিশেষ করে এই দু’টি ব্লকের এফবি-র কিছু কর্মীর মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আমাদের নেতা কর্মীদের খুন হওয়া ও তার তিক্ততার জের এখনও আছে। আমাদের দায়িত্ব এবং বামফ্রন্টের ঐক্যের উপর গুরুত্ব দিলেও সমস্যাটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।’

সিপিএমের জেলা নেতৃত্বের একাংশ দাবি করেছেন, রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর আগে শেষ দু’বছরে মাওবাদীদের হাতে জঙ্গলমহলে সিপিএমেরই কমবেশি ৪২ জনকে খুন হতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দলের জঙ্গলমহলের কিছু কর্মী নেতৃত্বের কাছে মাওবাদীদের সঙ্গে ফব-র কিছু কর্মীর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তা ছাড়া বিশেষত অযোধ্যা পাহাড় লাগোয়া ফব-র শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এলাকায় সিপিএমের নেতা-কর্মীরা যাতে মাথা তুলতে না পারেন, সে জন্য ফব-র একাংশ সব সময়েই সচেষ্ট ছিল। দলের সেই সব নেতা-কর্মীদের ওই অসন্তোষের কথাই এ বার প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে।

শনিবার প্রতিবেদনের ওই অংশ সম্মেলন কক্ষ থেকে বাইরে ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভ দানা বাঁধে ফব নেতা-কর্মীদের মধ্যে। যদিও ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক নরহরি মাহাতো পাল্টা দাবি করেছেন, “খুন তো শুধু সিপিএমের কর্মীরাই হননি, আমাদেরও ১৩ জন কর্মী খুন হয়েছেন। ঝালদায় একদিনে আমাদের সাতজন কর্মী খুন হয়েছেন।” তাঁর মতে, যে সময় রাজ্যে বাম ঐক্য দুর্বল সেই সময়ে বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমের রাজনৈতিক প্রতিবেদনে এ ধরনের কথা আদতে বাম ঐক্যকে আরও দুবর্ল করবে। রবিবার বিকেলে জেলা ফব নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদের পথ ঠিক করতে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠক শেষে নরহরিবাবু বলেন, “আজ আমাদের জেলা কমিটির সভা ছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিষয়টি রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষকে জানানো হবে। সেই সঙ্গে যতক্ষণ না দুই দলের রাজ্যে নেতৃত্বের উপস্থিতিতে এই বিষয়টির সুরাহা হবে, ততক্ষণ আমরা জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকে উপস্থিত থাকব না।”

শরিকের এই ক্ষোভের বার্তা পৌঁছয় সম্মেলনের ভিতরেও। সম্মেলনে উপস্থিত দলের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “ওই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে বটে, তবে এটা রাজ্যস্তরে আমাদের অভিজ্ঞতা নয়।” দলের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা বলরামপুরের দায়িত্বে থাকা কৃষ্ণপদ বিশ্বাস আবার দাবি করেন, “সম্মেলনের রাজনৈতিক খসড়া প্রতিবেদনে এ কথা লেখা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ কথা আমরা গ্রহণ করিনি। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলি থেকে যা পাঠানো হয়েছিল তার ভিত্তিতেই প্রতিবেদন পেশ হয়েছিল।”

কিন্তু তাতেও চিঁড়ে কতটা ভিজবে সংশয় রয়েছে বামকর্মীদের মধ্যে। কারণ পঞ্চায়েত কিংবা পুরসভা, যে ভোটই হোক, প্রার্থী দেওয়া নিয়ে মূলত জেলার ওই দুই বড় শরিকের মধ্যে আকচা-আকচি দেখতে তাঁরা অভ্যস্ত। কাজেই জল গড়াবে বলেই তাঁদের আশঙ্কা। আবার ওই প্রতিবেদনে এও উল্লেখ করা হয়েছে, কয়েকটি ব্লকে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা এবং কাজকর্ম নিয়েও কিছু প্রশ্ন ছিল। তা দূর করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কর্মীদের সক্রিয়তা বাড়ানো যায়নি। গত লোকসভা ভোটে পুরুলিয়ার বাম প্রার্থী ছিলেন নরহরিবাবুই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। শুধু বলতে পারি, ১৯৭৭ সাল থেকে আমরা বামফ্রন্টগত ভাবে লড়াই করছি। সব কিছু ফ্রন্টের বৈঠকে আলোচনা করেই স্থির হয়।” প্রতিবেদনে একই সঙ্গে আত্মসমলোচনার সুরে বলা হয়েছে, কিছু লোকাল থেকে জোনাল এমনকী জেলা নেতাও নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন। সদস্যদের একাংশ বিরোধীদের সঙ্গেও গোপনে যোগাযোগ রাখছে। এ প্রভাব বিগত নির্বাচনগুলিতে পড়েছে।

সম্মেলনে এ বারও ৫৫ জনেরই জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। তার মধ্যে এ দিন ৫২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে এ বার নতুন ১৫ জনকে নেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন দলের বর্ষীয়ান নেতা নকুল মাহাতো, তাঁর মেয়ে সাম্যশান্তি মাহাতো, মানবাজারের সমীর গঙ্গোপাধ্যায়, হুড়ার শশাঙ্ক মাহাতো, পুরুলিয়া শহরের সৌম্যনাথ মল্লিক, বরাবাজারের সন্তোষ মহাপাত্রের মতো নেতারা। তবে নকুলবাবু, সৌম্যনাথবাবু, সন্তোষবাবু ও শশাঙ্কবাবুকে জেলা কমিটির স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। নকুলবাবু গতবার জেলা সম্পাদকের পদ ছাড়ার পর তাঁকে সম্পাদক মণ্ডলীতে আমন্ত্রিত সদস্য রাখা হয়েছিল। এ বার জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হল। অমিয়বাবু জানান, দলের নির্দেশে ৮০ বছরের উপরে কাউকে জেলা কমিটিতে রাখা যাবে না। তবে নকুলবাবুর অভিজ্ঞতা দলের কাজে লাগবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia maoist forward bloc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE