Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

বিতর্ক জিইয়ে বিবৃতি, ক্ষুব্ধ সরকার

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী সোমবারই দাবি করেছিলেন, সমাবর্তন সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বিবৃতি জারি করে তাঁর ওই বক্তব্যকে সমর্থন জানাল বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্য সরকার এখন চাইছে যাদবপুরের উপাচার্য-বিতর্ক এ বার বন্ধ হোক। কিন্তু উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন সব পদক্ষেপ করছেন যে, বন্ধ হওয়ার বদলে বিতর্কের নতুন নতুন মুখ খুলছে। যেমন উপাচার্যের বক্তব্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী সোমবারই দাবি করেছিলেন, সমাবর্তন সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বিবৃতি জারি করে তাঁর ওই বক্তব্যকে সমর্থন জানাল বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজ্য সরকার এখন চাইছে যাদবপুরের উপাচার্য-বিতর্ক এ বার বন্ধ হোক। কিন্তু উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন সব পদক্ষেপ করছেন যে, বন্ধ হওয়ার বদলে বিতর্কের নতুন নতুন মুখ খুলছে। যেমন উপাচার্যের বক্তব্য। রাজ্য মন্ত্রিসভার এক বর্ষীয়ান সদস্যের কথায়, “উপাচার্যের এখনকার কাজকর্মে মনে হচ্ছে না যে, তিনি আদৌ সমস্যার সমাধান চান। সরকার যেখানে বিষয়টার নিষ্পত্তি চাইছে, সেখানে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে।” সরকারি সূত্রের খবর, আন্দোলনরত পড়ুয়া, শিক্ষক, অশিক্ষক সংগঠন এবং উপাচার্য এই তিন পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের কথা শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য যাদবপুর নিয়ে মুখ খোলননি। শাসক দলের অন্য নেতা, মন্ত্রীরাও প্রকাশ্যে মন্তব্য করা বন্ধ রেখেছেন। এ দিন মিলন মেলায় একটি অনুষ্ঠানের অবসরে ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে যাদবপুর সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, “এটা ক্লোজড চ্যাপ্টার।” তবে বর্ষীয়ান সাংসদ এবং প্রাক্তন অধ্যাপক সৌগত রায় দলের অন্দরে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিতর্ক ঠেকাতে উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু সরকার পক্ষের এখনও একই যুক্তি, এই মুহূর্তে উপাচার্যকে সরালে মনে হতে পারে পড়ুয়া এবং বিরোধীদের দাবির কাছে নতিস্বীকার করা হল।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এখন যা সংশোধন করা হয়েছে, তাতে নিয়োগ করার পরে উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে সুপারিশ করতে পারে রাজ্য সরকার। ‘অযোগ্যতা’-সহ কী কী কারণে উপাচার্যকে অপসারণ করা যাবে, তার সংস্থানও ওই আইনে আছে।

এ দিনের বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের অসন্তোষ এবং অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটানোর কিছু বিক্ষিপ্ত প্রচেষ্টা ছাড়া সমাবর্তন সফল ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, সমস্ত আধিকারিক এবং অনেক ছাত্রছাত্রীর সহযোগিতায় তা করা গিয়েছে। এ ছাড়াও ওই বিবৃতিতে দাবি, মাত্র তিন শতাংশ ছাত্রছাত্রী সমাবর্তন মঞ্চে উঠে মেডেল ও শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করেছেন। জোর করে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে সমাবর্তন ব্যাহত করার চেষ্টা হয়েছে বলেও ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ।

আন্দোলনকারীদের পাল্টা দাবি, তাঁরা অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটানোর কোনও চেষ্টা করেননি। কাউকে সমাবর্তনে যোগ দিতে জোর করে বাধাও দেননি। সেই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, যাঁদের শংসাপত্র পাওয়ার কথা, তাঁদের সকলে সমাবর্তনে যাওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করেননি। যাঁরা করেছেন, তাঁদেরও অনেকে ওই দিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না। এঁদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবল মঞ্চে উঠে শংসাপত্র-ফেরানো ছাত্রছাত্রীদের শতাংশ বিচার করছেন কেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনকারীরা।

যাদবপুরের সমাবর্তন হয়েছে গত বুধবার। উপাচার্যের বিরোধিতায় অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দেন আন্দোলনকারীরা। উপাচার্যের প্রতি এঁদের ক্ষোভ এমনই যে, আচার্যের এগিয়ে দেওয়া মেডেল-শংসাপত্র প্রত্যাখ্যান করেন কলা শাখার শ্রেষ্ঠ স্নাতক গীতশ্রী সরকার। তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। গীতশ্রী ছাড়াও অনেক পড়ুয়া মঞ্চে উঠে মেডেল-শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করেছেন। তত ক্ষণে অবশ্য আচার্যের পিছু পিছু ক্যাম্পাস ছেড়েছেন উপাচার্যও। সমাবর্তনের মাঝপথে তাঁর এই প্রস্থান নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এ সব সত্ত্বেও সোমবার অভিজিৎবাবু বলেন, “সমাবর্তন সফল।” মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষের জারি করা বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে মেডেল- শংসাপত্র নেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ২৬৬২ জন। এঁদের মধ্যে ১৯১৬ জন মঞ্চে উঠে তা নেন, আর উপস্থিত হয়েও প্রত্যাখ্যান করেন ১০০ জন।

ছাত্রছাত্রীদের অবশ্য পাল্টা দাবি, মোট ৪১০০-র কিছু বেশি পড়ুয়ার মধ্যে পিএইচ ডি, এমফিল বাদ দিলে স্নাতক স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৬০০। এঁদের মধ্যে ১৯১৬ জন মঞ্চে উঠে মেডেল-শংসাপত্র নিয়েছেন মানে প্রায় ৫০ শতাংশ পড়ুয়াই তা নেননি। একে সমাবর্তন বয়কট আন্দোলনের জয় হিসেবেই জেখছেন তাঁরা। রেজিস্ট্রার প্রদীপবাবু অবশ্য বলেন, “কোনও বছরই সব পড়ুয়া নাম নথিভুক্ত করেন না। যাঁরা করেন, তাঁদের সকলেও আসেন না। তাই এ বার আন্দোলনের জন্য ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত হননি, সে কথা ঠিক নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE