Advertisement
E-Paper

বাবা-মা বেঘর, বিষবৃক্ষের চাষে উদ্বিগ্ন হাইকোর্ট

পরিবার ক্রমেই ছোট হচ্ছে। তাতেও যদি চিড় ধরে, অতি লোভ ঢুকে যদি সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়, তা হলে গোটা সমাজের কাছেই সেটা অমঙ্গলের বার্তা বয়ে আনে। পারিবারিক বিবাদের একটি মামলার রায়ে বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়। আদালতের প্রশ্ন, সন্তান এ ভাবে শুধু নিজের সংসারে নয়, সারা সমাজে বিষ ছড়িয়ে পার পেয়ে যাবে কেন?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৯:৫৭

পরিবার ক্রমেই ছোট হচ্ছে। তাতেও যদি চিড় ধরে, অতি লোভ ঢুকে যদি সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়, তা হলে গোটা সমাজের কাছেই সেটা অমঙ্গলের বার্তা বয়ে আনে। পারিবারিক বিবাদের একটি মামলার রায়ে বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়। আদালতের প্রশ্ন, সন্তান এ ভাবে শুধু নিজের সংসারে নয়, সারা সমাজে বিষ ছড়িয়ে পার পেয়ে যাবে কেন?

বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ছেলে প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায় ও বৌমা তানিয়া মুখোপাধ্যায়। তানিয়ার অভিযোগের জেরে প্রসেনজিতের বাবা রবি ও মা শিপ্রা মুখোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যে সাত দিন জেলে কাটাতে হয়েছে। তার পরে তাঁরা নিজেদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত।

স্ত্রী, ছেলে-বৌমা, নাতি-নাতনির সঙ্গে সুখে দিন কাটাবেন বলে রবিবাবু কষ্টেসৃষ্টে নদিয়ার চাপড়া থানার জামিরডাঙা গ্রামে কিছুটা জমি কেনেন। ধীরে ধীরে নিজের খরচে সেখানে একটি বাড়িও করেন। ছেলের বিয়ে দেন। কিন্তু যে-সুখের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তা সত্যি হল না। সংসার শুরু করেই ছেলে-বৌমা দাবি জানালেন, তাঁদের নামে লিখে দিতে হবে ওই বাড়ি। রবিবাবু রাজি হননি। তার পরেই শুরু হয় অত্যাচার। প্রসেনজিৎ প্রায় প্রতি রাতেই মদ খেয়ে বাবা-মাকে পেটাতেন বলে অভিযোগ। আর শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে থানায় বধূ-নির্যাতনের অভিযোগ জানান তানিয়া। ছেলে আর বৌমার অত্যাচারের সাঁড়াশি চাপে অতিষ্ঠ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে জেলে যেতে হয়।

বাবা-মায়ের উপরে ছেলে-বৌমার অসংখ্য মামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। তিরস্কার করেছে অত্যাচারী সন্তানকে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে নির্দেশও দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকে। বাবা-মায়ের মন পাওয়ার জন্য রোজ সকালে তাঁদের প্রণামের বিধানও দিয়েছেন বিচারপতিরা। নরমে-গরমে তাঁরা ছেলেমেয়েদের বোঝানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও এই সামাজিক ব্যাধির উপশম হচ্ছে না। কুপুত্রের নানা কাহিনি নিয়মিত পৌঁছচ্ছে আদালতে। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপরে অত্যাচার চালিয়ে তাঁদের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। বার্ধক্যে শান্তির বদলে নিত্যযন্ত্রণা সইতে হচ্ছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। নিজেদের বাড়ি থাকতেও পথে পথে বা আত্মীয়-কুটুম্বের কাছে যেতে হচ্ছে আশ্রয়ের জন্য। তার উপরে কখনও কখনও জব্দ করার জন্য ছেলে-বৌমার অভিযোগে জুটছে কারাবাসের লাঞ্ছনা।

ঠিক যেমনটা হয়েছে রবিবাবুদের ক্ষেত্রে। জামিন পাওয়ার পরে রবিবাবু ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁর সম্পত্তি হাতানোর জন্য ছেলে-বৌমা কোন পথ নিয়েছেন, আবেদনে সবই তুলে ধরেন তিনি। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত জানিয়ে দেন, অবিলম্বে বাবা-মাকে বাড়িতে ফিরতে দিতে হবে। পুলিশ মনে করলে ছেলে-বৌমাকে গ্রেফতারও করতে পারে। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রসেনজিৎ-তানিয়া হাইকোর্টে আপিল করেন। এ দিন সেই আপিল মামলার শুনানিতে রবিবাবুর আইনজীবী অসিত বিশ্বাস বলেন, এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আর কত দিন বাঁচবেন? তাঁদের মৃত্যুর পরে বাড়িটা তো ছেলে-বৌমাই পাবেন। কিন্তু তাঁরা এখনই তা পেতে চান। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তাঁদের শেষ সম্বল কী ভাবে হাতছাড়া করবেন?

দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রায় দিতে গিয়ে বলে, বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে ছেলে-বৌমা আদালতে এসেছেন ভাবতেই কষ্ট হয়। এ ভাবে সম্পর্ক বিষিয়ে দিচ্ছেন কেন? বাবা-মাকে নিয়ে সকলে মিলে একসঙ্গে থাকুন। বাবা-মাকে সম্মান করুন। শ্রদ্ধা করতে শিখুন। দেখবেন, অনেক সুখ পাবেন। লোভের জন্য এই সম্পর্কগুলি ভেঙে যাবে, এটা কাম্য নয়। পরিবার আর কত ভাঙবে?

ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ওই পরিবার একই বাড়িতে একসঙ্গে থাকবে। এর পরেও ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা যদি থানায় অত্যাচারের কোনও অভিযোগ দায়ের করেন, পুলিশকে সঙ্গে সঙ্গে হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং তাঁদের শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।

prasenjit mukhopadhayay high court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy