সারদার আমানতকারীদের টাকা ফেরনোর দাবিতে এক মঞ্চে আন্দোলন হয়েছে।
ট্যাক্সি ধর্মঘটের ক্ষেত্রেও, তা হয়েছে।
এ বার রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে সিপিএমের সঙ্গে যৌথ মঞ্চ গড়তে উদ্যোগী হয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের জন্য যাঁর কৃতিত্ব প্রাপ্য হয়েছে, সেই মান্নান প্রস্তাব দিয়েছেন, অরাজনৈতিক কয়েক জন সুপরিচিত মানুষকে সামনে রেখে রাজ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি যৌথ মঞ্চ গঠন। সেই মঞ্চ থেকেই একদিকে তৃণমূল, অন্যদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। মান্নানের এই প্রস্তাবে প্রাথমিক ভাবে সায় আছে সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী, গৌতম দেব, সুজন চক্রবর্তীদের। এমনকী উত্তরবঙ্গের অন্যতম নেতা অশোক ভট্টাচার্যও মনে করেন, এই ধরনের মঞ্চ গড়ে উঠলে তৃণমূলের ‘অত্যাচার ও অগণতান্ত্রিক’ কাজকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। বস্তুত, সিপিএম-কংগ্রেস দু’দলের নেতারাই মনে করছেন, রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে এই ধরনের মঞ্চ কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে।
যাঁদের সামনে রেখে গড়ে উঠতে পারে এই মঞ্চ, তাঁদের নামও প্রস্তাব করছেন মান্নান। তাঁরা হলেন, মানবাধিক কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন প্রধান মীরা পান্ডে এবং শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহারের মতো বক্ত্যিত্ব। মান্নানের কথায়, “এঁরা প্রকাশ্যে কোনও দলের সমর্থক নন। এঁদের সামনে রেখে যদি কোনও যৌথ মঞ্চ গড়ে তোলায় যায়, তাহলে কাজের সুবিধা হবে।”
রাজ্যে ‘হিন্দু ভোট’ ব্যাঙ্ককে কাজে লাগিয়ে ২০১৬ বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। অন্যদিকে সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশের উপরে নির্ভর করে ২০১৬ সালেও ক্ষমতা ধরে রাখার স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর পাশাপাশি বিজেপিকে রুখতে এই ধরনের যৌথ মঞ্চ যে কাজে দিতে পারে, সিপিএম-কংগ্রেস দু’দলের নেতারাই তা মনে করছেন। মান্নানের এই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা ভবিষ্যই বলবে। কিন্তু নির্দিষ্ট ভাবে প্রস্তাব পেলে তাঁরা যে কথা বলতে রাজি সিপিএম নেতারা তা জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টে সারদা মামলার ব্যাপারে সিপিএমের আইনজীবী প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সহযোগিতার উল্লেখ করে মান্নান বলেন, “এখন রাজ্যের যা পরিস্থিতি তাতে কংগ্রেস, সিপিএম এক সঙ্গে আন্দোলন না করতে পারলে মানুষের পক্ষে আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়।” তাঁদেরও যে যৌথ মঞ্চ করে আন্দোলনে আপত্তি নেই, তা জানিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামলবাবু বলেন, “ট্যাক্সি ধর্মঘট-সহ পরিবহন আন্দোলন সিটু-আইএনটিইউসি এক সঙ্গে করছে। আন্দোলন সফলও হয়েছে। সিটুর অফিসে এসে নিয়মিত বৈঠক করছেন কংগ্রেস তথা আইএনটিইউসি নেতা রমেন পান্ডে। সুতরাং যৌথ আন্দোলনে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই।”
প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজনবাবুও। সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নী সংস্থায় লগ্নীকারীদের টাকা ফেরতের আন্দোলনে মান্নান, সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যর সঙ্গে এক মঞ্চে আন্দোলন করতে তাঁর কোনও অসুবিধা হয়নি জানিয়ে সুজনবাবু বলেন, ‘‘তেমন প্রস্তাব এলে নিশ্চয়ই ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই ভেবে দেখব।” যৌথ মঞ্চে আন্দোলন করলে সফল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে অশোকবাবু বলেন, “উত্তরবঙ্গের একাধিক চা-বাগানে আমরা নেতৃত্ব না দিয়ে কর্মী স্বার্থে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ মঞ্চে আন্দোলন করেছি। সফলও হয়েছি।” ২০১৬তে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, তার আগে এমন কোনও যৌথ মঞ্চ কি দিল্লি থেকে প্রকাশ কারাটরা মেনে নেবেন? জবাবে শ্যামলবাবু বলেন, “তখন কি হবে দেখা যাবে। কিন্তু এখন করলে আপত্তির কি আছে?” গৌতমবাবুর অভিমত,“বিজেপিকে আটকাতে আমরা ২০০৪ সালে কংগ্রেসকে সমর্থন করেছি। বিভিন্ন রাজ্যে যেখানে আমাদের প্রার্থী নেই, কিন্তু ৫০০ ভোট আছে, সেখানে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি হিসাবে কংগ্রসেকে ভোট দিতে বলেছি। তাহলে এমন মঞ্চে আপত্তি করা অর্থহীন।”
সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, মুসলিমদের কাছে বিজেপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি হিসাবে নিজেদের তুলে ধরতে এক মঞ্চে কংগ্রেসকে পাশে পাওয়া যথেষ্ট অর্থবহ হবে। মান্নানেরও মত তাই। তাঁর কথায়, “যদি মুসলিমরা দেখে, তৃণমূলকে বাদ দিয়ে অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দল বিজেপিকে রুখতে পারছে, তাহলে তাদের আস্থা অর্জন সম্ভব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy