ট্যাক্সিচালকদের ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।
রাত পোহাতেই বদলে গেল ছবিটা।
সরকারকে চাপে রেখে মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ২১ জন ট্যাক্সিচালকের জামিন আদায় করে নিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। লড়াইয়ের প্রথম ধাপে জিত হয়েছিল তাঁদের। ভাবা গিয়েছিল, বুধবার দু’পক্ষের বৈঠকে ট্যাক্সিচালকদের অন্য দাবিগুলিরও সুরাহা হবে। সে বৈঠক হল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্য সরকার ফের অনড় অবস্থান নেওয়ায় নিষ্ফলা হল তা। ফলে কলকাতার ট্যাক্সি পরিষেবা নিয়ে ফের অচলাবস্থা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, না-বলে দু’দিন ট্যাক্সি বন্ধের চাপে কার্যত বেসামাল সরকার প্রথম দফায় পিছু হটেছিল। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সিপিএম এই আন্দোলন থেকে ‘ফসল’ তুলছে। তার পরেই সরকারকে কড়া অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন মমতা। এ দিন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে ট্যাক্সি চালকদের ছ’টি ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকের শুরু থেকেই তাই কড়া অবস্থান নেন পরিবহণ মন্ত্রী। বৈঠকও ভেস্তে যায়। তার পর মদন মিত্র জানিয়ে দেন, যাত্রী-প্রত্যাখ্যানের অভিযোগে ৩০০০ টাকা জরিমানা লঘু করা হবে না। সরকারের এই অবস্থান ইউনিয়নগুলি না মানায় ধৃত ট্যাক্সিচালকদের জামিন খারিজের জন্য হাইকোর্টে যাবেন তাঁরা।
পুলিশি জুলুম বন্ধ, যাত্রী প্রত্যাখ্যান করলে তিন হাজার টাকা জরিমানার নতুন বিধি রদ ও ধৃত ট্যাক্সিচালকদের মুক্তি মূলত এই দাবিগুলিকে সামনে রেখে সপ্তাহের প্রথম দু’টি কাজের দিনে কলকাতার রাস্তায় গাড়ি বের করেননি ট্যাক্সিচালকেরা। পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দেখে গত কাল আদালতে ধৃতদের জামিনের আবেদনের বিরোধিতার পথ থেকে সরে আসে সরকার। ফলে চালকেরা সকলেই জামিন পেয়ে যান।
পরিবহণ মন্ত্রীর বৈঠকের পরে ইউনিয়ন নেতারা বলেন, সরকার কোনও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয় কি না দেখতে তাঁরা তিন দিন অপেক্ষা করবেন। না হলে ফের ট্যাক্সি বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাববেন চালকেরা। সিটুর এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আমরা এখনও ধর্মঘট ডাকিনি। কিন্তু সরকার যা অবস্থান নিল, তা পরিবর্তন না হলে ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য হব।” আজ, বৃহস্পতিবার সিটুর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক। তার পরেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বাকি শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে বলে জানান এক নেতা।
চালকদের পাশে দাঁড়িয়েছে ট্যাক্সি মালিকদের সংগঠনগুলিও। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিমল গুহ এ দিন বলেন, “চালকদের উপরে পুলিশি জুলুম যে দিন-দিন বাড়ছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রয়োজনে আমরা চালকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামব।”
বৈঠকে হাজির সিটু নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অনাদি সাহু, এআইটিইউসি-র নওলকিশোর শ্রীবাস্তব এবং আইএনটিইউসি-র রমেন পাণ্ডে বলেন, “সরকার নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না-করলে আমরা যৌথ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।” শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য, “আমরাও যাত্রী প্রত্যাখ্যানের বিরোধী। কিন্তু আমরা বলেছি, নির্দিষ্ট শুনানির পরেই অভিযুক্ত ট্যাক্সিচালকের তিন হাজার টাকা জরিমানা করুক সরকার। মন্ত্রী তা মানতে নারাজ। ২১ জন ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও সরকার খারিজ করে দিয়েছে। তাই ফের আন্দোলন ছাড়া রাস্তা খোলা রইল না।”
পরিবহণ মন্ত্রীও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও অবস্থাতেই শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবির সঙ্গে সরকার আপস করবে না। ট্যাক্সিচালকদের গুন্ডামির বিরুদ্ধেও সরকার কড়া অবস্থান নেবে। তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই ২১ জন ট্যাক্সিচালককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমরা তাদের জামিনের বিরোধিতা করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভেবেছি।”
ক’দিন বাদেই ২০ অগস্ট থেকে ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছেন বাস মালিকেরা। ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলির সঙ্গে সরকারের এ দিনের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার বাস মালিকরা তাঁদেরও ধর্মঘটে সামিল হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। তবে এখনই বাস-মালিকদের সঙ্গে একযোগে ধর্মঘটে যাচ্ছেন না বলেই জানিয়েছেন ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy