মোটরবাইক মিছিল।
একটা, দুটো নয়। এক্কেবারে ৪২৮টি মোটরবাইক। হ্যান্ডেলে বাঁধা দলীয় পতাকা উড়ছে পতপত করে। এত লম্বা সেই বাইকের সারি যে, শেষ মাথা ঝাপসা দেখাচ্ছিল।
একসঙ্গে ওই বাইকের গর্জনে কেঁপে উঠছে পাড়া। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শিবনিবাসের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছিলেন, “কী আওয়াজ রে বাবা!” যা শুনে পাশের এক যুবকের প্রতিক্রিয়া, “আওয়াজ তো হবেই। তৃণমূলের প্রচার বলে কথা। লোকজনকে জানান দিতে হবে না?”
সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে প্রাতঃরাশ সেরে তৈরি হয়ে গিয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী সত্যজিত্ বিশ্বাস। প্রাতঃরাশ বলতে মায়ের হাতের রান্না করা ভাত আর মাছের ঝোল। হাঁসখালির ফুলবাড়ি দক্ষিণপাড়ার বাড়ি থেকে সত্যজিত্বাবু প্রচারে বেরোলেন। আগে আগে ধুলো উড়িয়ে ছুটে চলেছে বাইকের সারি। পিছনে প্রার্থীর গাড়ি। হাত জোড় করে বিনয়ের সঙ্গে ভোট চাইছেন সত্যজিত্বাবু। সঙ্গে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের নেতারা।
গাড়ি এগিয়ে চলে গ্রামের রাস্তা ধরে। আর বাড়ির সামনের নড়বড়ে বাঁশের বেড়া ধরে ভয়ের দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে দেখেন গ্রামের বধূ। ভয় কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বধূ বলছিলেন, “ভোটের এই সময় এলে আর এই বাইক-বাহিনী দেখলেই ভয় লাগে। মনে হয় এই বুঝি কখন কী ঘটে গেল!” পথে যেতে যেতে প্রার্থী নমস্কার করছেন। প্রতি নমস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন পথচলতি লোকজনও। তবে প্রার্থীর থেকেও এ দিন লোকজনের বেশি আগ্রহ ছিল মোটরবাইকের সংখ্যা নিয়ে। বাইকের আওয়াজ, মাইকের প্রচার মিলিয়ে যেতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছিলেন, “মিছিল না শক্তি প্রদর্শন বোঝা গেল না।”
এক বৃদ্ধাকে প্রণাম তৃণমূল প্রার্থী সত্যজিত্ বিশ্বাসের।
ছুটে চলেছে একটার পর একটা বাইক। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে গুনতে গুনতে কিছুক্ষণ পরেই সব গুলিয়ে যায়। কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে দুম করে প্রশ্নটা করেই বসলাম, “ঠিক কতগুলো বাইক হবে দাদা?” এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ওই নেতা সগর্বে বললেন, “কত আর? ৪২৮ টি তো বটেই।”
কী বুঝছেন? বাইক মিছিলের দিকে তাকিয়ে তৃপ্ত হাসি হেসে সত্যজিত্বাবু বলছেন, “জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই। আমরা শুধু ভাবছি ব্যবধানটা আমরা আগের থেকে ঠিক কতটা বাড়াতে পারব। সিপিএমই আমার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। লড়াই তাদের সঙ্গে।’’
আর সারদা-কাণ্ড? প্রসঙ্গটা মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিয়ে সত্যজিত্বাবু বললেন, “মানুষের কাছে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে এসব আসলে বিজেপির চক্রান্ত। মানুষ ভাবছে উন্নয়ন নিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ধারাকে আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরছি।’’
—নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy