Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মোদীকে সমর্থনের ভুল করবেন না, আর্জি বুদ্ধের

এ বারের লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে বিজেপি-র উত্থান নিয়ে চিন্তিত বাম-অবাম সব শক্তিই। বিজেপি-র ভোট বাড়তে পারে বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। দুই পর্বের ভোটের পরে এ বার সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানালেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র ‘বিপদ’কে বাড়তে না দেওয়ার জন্য।

প্রেস ক্লাবে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

প্রেস ক্লাবে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

এ বারের লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে বিজেপি-র উত্থান নিয়ে চিন্তিত বাম-অবাম সব শক্তিই। বিজেপি-র ভোট বাড়তে পারে বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। দুই পর্বের ভোটের পরে এ বার সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানালেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র ‘বিপদ’কে বাড়তে না দেওয়ার জন্য।

রাজ্যে সাংগঠনিক ভাবে বিশেষ শক্তিশালী না-হলেও বিজেপি ভোটে নেমেছে মোদী-হাওয়ায় ভর করে। বুদ্ধবাবুর দাবি, তেমন কোনও জোরালো হাওয়া রাজ্যে নেই। যে টুকু আছে, সবই কর্পোরেট, সংবাদমাধ্যমের তৈরি। তবু বিজেপি-র বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে তাদের সমর্থন না করতে মানুষের কাছে আর্জি জানান বুদ্ধবাবু। যা থেকেই স্পষ্ট, গেরুয়া বাহিনী নিয়ে বিশেষ করে ভাবতে হচ্ছে বামেদের!

নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের মডেল বা সঙ্ঘ পরিবারের হিন্দুত্বের মডেল, কোনওটিই মেনে চলার মতো নয় বলে সওয়াল করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা ভোট উপলক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাবে শুক্রবার ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে মোদীর উন্নয়ন মডেলের সমালোচনার পাশাপাশিই বুদ্ধবাবু বলেন, “আরএসএস-কর্পোরেট হাত মেলানো আর একটা দিক। আরএসএস সংবিধান মানে না। তাদের নেতাদের বক্তৃতার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। হিন্দুদের রাজত্ব হবে। বাকিরা প্রতিবাদ করলে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে!” এই সঙ্গেই বুদ্ধবাবুর বক্তব্য, “ঘোড়ায় চড়ে তলোয়ার হাতে মোদী বেরিয়েছেন যেন! পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে আর্জি, এই রাজ্যে এ ভুল করবেন না! শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতির স্বার্থে কোনও অবস্থাতেই বিজেপি-কে আনা যাবে না।”

বাংলায় সীমান্তবর্তী জেলাগুলির কিছু অংশ এবং স্থানীয় ভিত্তিতে কিছু জায়গায় বিজেপি-র কিছু জনসমর্থন আছে। কিন্তু এ বার দেশে প্রবল কংগ্রেস-বিরোধিতার হাওয়া এবং গেরুয়া শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদীর নামে বিজেপি এ রাজ্যের বহু আসনেই প্রভাব ফেলবে বলে সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে রিপোর্ট দিয়েছেন বিভিন্ন জেলা নেতৃত্ব। তিনি নিজে এ রাজ্যে মোদীর হাওয়া কতটা দেখছেন? বুদ্ধবাবু বলেন, “এ রাজ্যে মোদীর বিরাট হাওয়া নেই। যে টুকু আছে, কর্পোরেট হাউস তৈরি করেছে!” সে সঙ্গেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আক্ষেপ, “দুর্ভাগ্যজনক যে, সংবাদমাধ্যমের যারা দীর্ঘ দিন এ রাজ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার স্তম্ভ বলে পরিচিত, তারাও আত্মসমর্পণ করছে!” তবে রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যের সঙ্গে মোদীর নাম খাপ খায় না বলেও আশা করেছেন তিনি।

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহর মতে, মোদী-হাওয়া নিয়ে কংগ্রেস এত দিন যা বলছিল, এখন সে সুরই শোনা যাচ্ছে সিপিএম এবং তৃণমূলের গলায়! কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূল এক সুর, এটাই এই দশকের সেরা বিস্ময় বলে বুদ্ধবাবুর উদ্দেশে রাহুলবাবুর কটাক্ষ, “যাঁকে বাংলার মানুষ খারিজ করেছে, তাঁর আর্জির আর কী মূল্য আছে?”

তবে বিজেপি এবং সাম্প্রদায়িকতার বিপদের বিরুদ্ধে সরব হলেও আপাতত কংগ্রেসকে সমর্থনের ব্যাপারে তাঁরা যে চিন্তা করছেন না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন বুদ্ধবাবু। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র বাইরে বিকল্প শক্তি গড়ার জন্যই তাঁদের লড়াই। বুদ্ধবাবুর কথায়, “কংগ্রেসকে হারাতে চাই, বিজেপি-কে ঠেকাতে চাই। নিঃসন্দেহে কাজটা কঠিন। একটা করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, অন্যটাও করতে হবে। কংগ্রেসের তপ্ত কড়াই থেকে একেবারে বিজেপি-র উনুনে, আগুনে ঝাঁপ দিতে চাই না!” যে হেতু কংগ্রেস-বিজেপি মিলিয়ে মোট প্রাপ্ত ভোট ৫০%-এর মধ্যেই থাকে, তাই বাকি দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে বিকল্প গড়া অসম্ভব নয় বলে বুদ্ধবাবুর দাবি।

ভোটের পরে বিজেপি-কে ঠেকানোর জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার প্রয়োজন হতে পারে কি না, সেই সম্ভাবনা নিয়ে এ দিন আর কথা বলতে চাননি বুদ্ধবাবু। যদিও আক্রমণের মূল নিশানা করেছেন বিজেপি-কেই। এ রাজ্যে বিজেপি-র ভোট কতটা বাড়তে পারে? বুদ্ধবাবুর জবাব, “এখানে খুব বাড়বে বলে মনে হয় না। বাংলার মানুষ দাঙ্গা-হাঙ্গামা চান না। মিডিয়া আবার দেখাতে চাইছে, উন্নয়নের জন্য বিজেপি-কে ভোট দিন। কিন্তু ওই উন্নয়ন চাই না!”

ভোটের হাওয়ায় মোদী-প্রভাব যে তাঁদের ভাবিয়ে ছাড়ছে, তার ইঙ্গিতও এ দিন বুদ্ধবাবুর কথাতেই ধরা পড়েছে। বারাণসীতে মোদীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া উপলক্ষে বৃহস্পতিবার তাঁর রোড শো’য় বিপুল ভিড় হয়েছিল। দেশের ১১৬টি কেন্দ্রে যখন ভোটগ্রহণ চলছে, সেই সময়েই ওই রোড শো টিভিতে সম্প্রচারিত হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ তুলেই বুদ্ধবাবুর মন্তব্য, “বারাণসীর রোড শো দেখলাম। কর্পোরেট কী করতে পারে, দেখে ভয় করছে! কর্পোরেটই এই প্রচারটা চালিয়ে যাচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi buddhadeb bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE