মুখ্যমন্ত্রী যে দিন পাহাড়ে পৌঁছবেন, তার পরদিনই দার্জিলিং ছেড়ে কাঠমান্ডু যাবেন বিমল গুরুঙ্গ। গত রবিবার সন্ধ্যায় জিটিএ-এর চিফ বিমল গুরুঙ্গ জানিয়েছেন আগামী ২১ অথবা ২২ জানুয়ারি তিনি পশুপতিনাথ মন্দিরে পুজো দিতে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্ নাও হতে পারে বলে গুরুঙ্গ জানিয়ে দিয়েছেন। গত বছরের মতো এ বছরও দার্জিলিঙের ম্যালে নেতাজির জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রোটকল অনুযায়ী সেই অনুষ্ঠানে জিটিএ-এর চিফকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে থাকতে না চেয়েই গুরুঙ্গ পাহাড় ছাড়তে চাইছেন কিনা তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
গত বছর নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গকে। মঞ্চ থেকে রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করে উন্নয়নের বার্তা দিয়েছিলেন গুরুঙ্গ। পাল্টা বার্তা দিতে সে বছরের ৩০ জানুয়ারি তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশেও মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন গুরুঙ্গ। ঘটনাচক্রে সেই ব্রিগেড সভার পর থেকেই তৃণমূল-মোর্চা সম্পর্কের সমীকরণ বদলাতে শুরু করে। আলোচনা না করেই তৃণমূল একক ভাবে লোকসভা ভোটে ভাইচুং ভূটিয়াকে প্রার্থী ঘোষণা করার অভিযোগ তুলে দার্জিলিং লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করে গুরুঙ্গের দল। লোকসভা ভোটে দার্জিলিং আসনে বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া জেতার পরে গুরুঙ্গ-বিজেপি ঘনিষ্ঠতা বাড়তে শুরু করে।
পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের ধারণা, বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত থাকা এড়ানোর কৌশল নিয়েছেন গুরুঙ্গ। ইতিমধ্যে, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প স্বচ্ছ ভারত অভিযান পাহাড়ে শুরু করে, গুরুঙ্গ নিজে তাতে সামিল হয়েছেন। ঝাড়ু হাতে নিজের ছবি প্রায়দিনই নিজের ফেসবুক পেজে ‘পোস্ট’ও করছেন গুরুঙ্গ। আরএসএসের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামিল হতে দেখা যাচ্ছে গুরুঙ্গকে। বর্তমানে মোর্চার একটি প্রতিনিধি দল দিল্লিতে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁরা সাক্ষাত্ করতে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই বিজেপি নেতৃত্বের কাছে যাতে কোনও ভুল বার্তা না পৌঁছয় সে কারণেই কাঠমান্ডু সফরের পরিকল্পনা করেছেন গুরুঙ্গ। ওই নেতাদের মতে, প্রকাশ্য মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী সহযোগিতার কোনও প্রস্তাব দিলে, প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতার কারণেই গুরুঙ্গের পক্ষে তা ফেরানো সম্ভব নয়। মোর্চার আশঙ্কা, তেমন হলে রাজ্য বিজেপি নেতারা বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখবেন না। এই উভয়সঙ্কট এড়াতেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার সিদ্ধান্ত বলে মোর্চার একাংশ নেতারা জানিয়েছেন।
গত রবিবার পার্টি অফিসে গুরুঙ্গ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে স্বাগত। তিনি যখন যেখানে ইচ্ছে যেতে পারেন। তবে আমি আগামী বুধ বা বৃহস্পতিবার পুজো দিতে কাঠমান্ডু যাচ্ছি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ নাও হতে পারে, আবার হতেও পারে।” বস্তুত, গত ডিসেম্বর মাসেই কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন গুরুঙ্গ। কলকাতা থেকে ফিরে গুরুঙ্গ দার্জিলিঙে প্রকাশ্য সভায় রাজ্যের সহযোগিতা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে এলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। সেই ঘোষণার পরে গুরুঙ্গের মনোভাব বদলের কারণকে বিজেপি ঘনিষ্ঠতা বলেই মনে করছেন দলের নেতারা।
গুরুঙ্গ যে মুখ্যমন্ত্রীকে এড়াতে চাইছেন তা মেনে নিয়েছেন পাহাড়ের তৃণমূল নেতারাও। তৃণমূলের পাহাড় কমিটির সভাপতি রাজেন মুখিয়া বলেন, “কে কোন অনুষ্ঠানে থাকবেন, তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে গুরুঙ্গ সরকারি অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতে চাইছেন বলেই মনে হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ উত্সবের সূচনা সেরে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং পৌঁছবেন। আগামী বুধবার দার্জিলিঙের দালিতে হিমাল-তরাই ডুয়ার্স ক্রীড়া উত্সবের পুরস্কার বিলি করবেন মুখ্যমন্ত্রী। পরদিন লেবঙে তামাঙ্গ বোর্ডের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। ২৩ জানুয়ারি ম্যালে নেতাজি জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান সেরে মুখ্যমন্ত্রী ফিরে যেতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy