Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

রাহুলকে ময়দান ছাড়তে নারাজ তৃণমূলের পুরসভা

লোকসভা ভোটের আগে রাহুল গাঁধীকে এনে কর্মিসভা করার জন্য পার্ক সার্কাস ময়দান চেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু নির্বাচনী বিধির কারণ দেখিয়ে তাদের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। ভোটের মুখে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার এমন সিদ্ধান্তে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ কংগ্রেস।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৮
Share: Save:

লোকসভা ভোটের আগে রাহুল গাঁধীকে এনে কর্মিসভা করার জন্য পার্ক সার্কাস ময়দান চেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু নির্বাচনী বিধির কারণ দেখিয়ে তাদের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। ভোটের মুখে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার এমন সিদ্ধান্তে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ কংগ্রেস। শাসক দলের কর্মিসভা কী ভাবে সরকার-অধীনস্থ ময়দানে হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে তৃণমূলকে ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ বলে আক্রমণ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

পার্ক সার্কাস ময়দানে কর্মিসভা করার অনুমতি চেয়ে প্রথামাফিক পুরসভার কাছে আবেদন করা হয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে। সেই আবেদনে সাড়া দেওয়া হচ্ছে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর প্রশাসন। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী সরকারি জায়গায় ভোটের সভা, বৈঠক এ সব করতে নিষেধ করা হয়েছে। তা মেনেই কংগ্রেসকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।” তাঁদের ওই সিদ্ধান্তের কথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে মেয়র জানিয়েছেন।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, পার্ক সার্কাস ময়দানে কর্মিসভা করার অনুমতি চেয়ে ১৮ মার্চ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর কলকাতার মেয়রকে একটি চিঠি দেন। ওই মাঠ কলকাতা পুরসভার অধীনে। রাজ্য কংগ্রেস আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ মার্চ পার্ক সার্কাস ময়দানে সভা করতে চায় বলে মেয়রকে চিঠিতে লিখেছিলেন অধীর। চিঠিতে জানানো হয়েছিল, সভা চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রদেশ সভাপতির ওই চিঠি নিয়ে বুধবার পুর কমিশনার খলিল আহমেদের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসেন মেয়র। তার মধ্যেই আরও একটা চিঠি পৌঁছে যায় মেয়রের দফতরে। সেটি পাঠিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মায়া ঘোষ। তাতে লেখা হয়েছে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ১৮ মার্চ যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তার সঙ্গে আর একটি অতিরিক্ত তথ্য জানানো হচ্ছে। আগামী ২৫ মার্চ পার্ক সার্কাস ময়দানেই কর্মিসভায় হাজির থাকবেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। এবং ওই সভার জন্য ফের মেয়রের অনুমতির আবেদন জানানো হয়।

দ্বিতীয় চিঠি আসার আগেই পুর প্রশাসন পার্ক সার্কাস ময়দানে সভা করতে না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। পরের চিঠি আসার পরেও তার হেরফের হয়নি বলে পুরকর্তাদের বক্তব্য। তাঁরা অনুমতি যে পাচ্ছেন না, তা জানতে পেরে ক্ষুব্ধ অধীর দায়ী করেছেন সরাসরি তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। প্রদেশ সভাপতির অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার কর্তৃপক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই আমাদের ময়দান ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। এর থেকে সঙ্কীর্ণ আচরণ আর হতে পারে না!” অধীর প্রশ্ন তুলেছেন, “অথচ দিকে দিকে সরকার অধীনস্থ স্টেডিয়াম বা পুরসভার আওতাধীন ময়দানে নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে শাসক দল দিব্যি কর্মিসভা করছে! এটা হচ্ছে রুচিহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পরিচয়!’’ কংগ্রেসের বক্তব্য, মেদিনীপুরে যে স্টেডিয়ামে তৃণমূল প্রার্থী দেব ও সন্ধ্যা রায়কে নিয়ে কর্মিসভা হয়েছে, সেই মাঠ জেলা ক্রীড়া দফতরের অধীন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মালদহে যেখানে কর্মিসভা করেছেন, তা-ও জেলা ক্রীড়া প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। দু’দিন পরে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের যে মাঠে (সরকারি নয় অবশ্য) মুখ্যমন্ত্রীর কর্মিসভা আছে, সেই একই মাঠে আগামী রবিবার বামফ্রন্টের কর্মিসভার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। বিরোধীদের প্রশ্ন, এক এক পক্ষের জন্য আলাদা নিয়ম কী ভাবে?

রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরে সব জেলার নির্বাচনী আধিকারিকেরা (জেলাশাসকেরা) কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে যান। দক্ষিণ কলকাতা ও মালদহের নির্বাচনী আধিকারিকেরাই বলতে পারবেন, তাঁরা কেন এমনটা করলেন।” মালদহের জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী জেলা ক্রীড়া সংস্থারও সভাপতি। তিনি বলেন, “ক্রীড়া সংস্থা একটি স্বশাসিত সংস্থা। এই ধরনের সংস্থার আইনে বলা রয়েছে যে, সাধারণের ব্যবহারের জন্য এই মাঠ দেওয়া যেতে পারে।”

মেয়র বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নিয়মে বলা হয়েছে, সরকারি জায়গায় ভোটের মিটিং-মিছিল করা যাবে না। তা ছাড়া, ২৮ মার্চ পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। তার আগে মাইক ব্যবহারও নিষিদ্ধ।” এ সব বিবেচনা করে অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেয়রের বক্তব্য, “ওই ময়দানের চার পাশে লেডি ব্র্যাবোর্ণ, ডন বস্কো, মহাদেবী বিড়লা-সহ গোটা পাঁচেক স্কুল, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা, প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠানে মাইকও বাজবে।” সব কিছু ভেবেই আবেদন নামঞ্জুরের সিদ্ধান্ত বলে তাঁর ব্যাখ্যা।

অধীর পাল্টা জানান, পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে তাঁরা ময়দানে সভাস্থল ঘেরার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পার্ক সার্কাস ময়দান সংলগ্ন এলাকায় একটি বিদ্যায়তনে এক জন মাত্র ছাত্রীর অর্থনীতির একটি বিষয়ের পরীক্ষা আছে। আমরা জানিয়েছিলাম, ওই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই সভার কাজ শুরু করব। তাও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না!” ঘটনার প্রেক্ষিতে অধীরের মন্তব্য, “বাংলার মানুষকে বলব এটাই এখন বাংলার গণতন্ত্র! ভোটে এই মোতাবেক আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন।” এতদসত্ত্বেও তাঁর চ্যালেঞ্জ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই ষড়যন্ত্র করুন, বাংলার মাটিতে আমরা সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীকে এনে সভা করবই!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE