Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
সেন্ট জেভিয়ার্সে সমাবর্তন

শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব রাজ্যপাল

বিশিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষানুরাগীদের অনেকেই বারবার বলেছেন। এ বার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও। শনিবার সেন্ট জেভিয়ার্সের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল বলেন, “ছাত্র সংসদ অরাজনৈতিক হওয়ায় এবং ছাত্র অসন্তোষ না থাকাটা এই কলেজে শিক্ষার সঠিক পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।”

পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। ছবি:সুদীপ্ত ভৌমিক

পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। ছবি:সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

বিশিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষানুরাগীদের অনেকেই বারবার বলেছেন। এ বার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও। শনিবার সেন্ট জেভিয়ার্সের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল বলেন, “ছাত্র সংসদ অরাজনৈতিক হওয়ায় এবং ছাত্র অসন্তোষ না থাকাটা এই কলেজে শিক্ষার সঠিক পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।”

সেন্ট জেভিয়ার্সে ছাত্র সংসদ থাকলেও তা অরাজনৈতিক। রাজ্যের আর কিছু অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তা-ই। যেমন, রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত কলেজগুলি। শিবপুরের আইআইইএসটি-তেও তা-ই। ধাপে ধাপে রূপান্তরিত হয়ে বর্তমানে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার আগে এক সময়ে এটি ছিল বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। বিবদমান ছাত্র সংগঠনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ সেখানে প্রায় নিত্য ঘটনা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়ে বেসু নামে পরিচিত হওয়ার পরেও ওই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-হিংসা অব্যাহত ছিল। কিন্তু ছাত্র সংসদের গা থেকে রাজনীতির রং মুছে সেই প্রতিষ্ঠানই পরে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাতেই প্রশ্ন ওঠে, রাজ্যের প্রথম সারির এতগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ গড়া যায়, তবে অন্যত্র মারামারি, হানাহানির ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলার পিছনে কী যুক্তি থাকতে পারে?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত চার মাস ধরে চলা ছাত্র আন্দোলনের জেরে ইস্তফা দিতে বাধ্য হওয়া উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী সেখানে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির জন্য সরাসরি রাজনীতিকেই দায়ী করেছেন। ক্লাসে হাজিরা কম থাকলেও তাঁদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সামিল হতে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। এই প্রচেষ্টার পিছনেও রাজনীতি রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রেরই খবর। রাজ্য জুড়ে কলেজে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষ লেগেই রয়েছে। বাইরের রাজনীতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হিংসা-রেষারেষির পরিবেশ তৈরি করছে বলেও অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রশংসা করে রাজ্যপাল অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে বার্তা দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

ছাত্র সংসদ থেকে রাজনীতির রং বাদ দেওয়ার পক্ষে বিভিন্ন প্রবীণ শিক্ষাবিদও মতপ্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, রাজনীতি হঠাতে পারলে ছাত্র অসন্তোষের ঘটনাও কমবে। কিন্তু এই ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এক প্রবীণ শিক্ষকের কথায়, “রাজনৈতিক দলগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নেতা-নেত্রী-সমর্থক তৈরির কারখানা হিসেবে দেখে। শিক্ষার মান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাল-মন্দ তাদের কাছে গৌণ।” এসএফআই, সিপি, টিএমসিপি-র মতো ছাত্র সংগঠনগুলি যে হেতু রাজনৈতিক দলগুলিরই শাখা সংগঠন, তাই তারাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি জিইয়ে রাখারই পক্ষে। এবিভিপি-র অবশ্য দাবি, তারা অরাজনৈতিক সংগঠন। তবে সরাসরি রাজনৈতিক দলের শাখা সংগঠন না হলেও তারা যে আরএসএস প্রভাবিত, রাজনীতির অলিন্দে এ কথা অজানা নয়। রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে কী বলছে ছাত্র সংগঠনগলি? এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি মধুজা সেন রায় বলেন, “দেশে যত দিন রাজনীতি থাকবে, রাজনীতিকেরা যত দিন শিক্ষানীতি ঠিক করবেন, তত দিন ছাত্রদের মধ্যেও রাজনীতি থাকবে। রাজ্যপালকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা, সম্মান জানিয়েও বলছি ওঁর মন্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত নই।” ছাত্র পরিষদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৌস্তুভ বাগচীও বলেন, “বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমাল হচ্ছে, তা থামানোর জন্য সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল যদি সচেষ্ট হতেন, তা হলে ভাল লাগত। ওঁকে যথাযথ সম্মান দিয়েও বলছি, ১৮ বছর বয়স হলে যখন ভোট দেওয়া যায়, কলেজে রাজনীতি করা যাবে না কেন?” টিএমসিপি-র সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষের কথায়, “যে বয়সে এক জন ছাত্র বা ছাত্রী প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে যুক্ত হচ্ছেন, সেই বয়সে তিনি কলেজে রাজনীতি করতে পারবেন না কেন?”

এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদার অবশ্য মনে করেন, রাজ্যপাল ঠিকই বলেছেন। ছাত্র সংগঠনের কোনও ভাবেই রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE