Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শীত নয়, বর্ষবরণের দৌড়ে এগিয়ে উষ্ণতা

তিন বছর আগে ইংরেজি বছরের শেষে বেমালুম হারিয়ে গিয়েছিল শীত! এমনই সেই অন্তর্ধান যে, কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি উপরে (১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস)! ততটা আশঙ্কার কথা এ বছর অবশ্য বলছেন না আলিপুর হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। তবে তাঁদের পূর্বাভাস, উত্তুরে হাওয়ার বদলে এ বার ইংরেজি নতুন বছর আসছে রীতিমতো উষ্ণতা গায়ে মেখে! এর পিছনে আছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ বার ইংরেজি নববর্ষে শুধু গরম নয়, রাজ্যের উপকূলবর্তী কোনও কোনও এলাকায় বৃৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৩
Share: Save:

তিন বছর আগে ইংরেজি বছরের শেষে বেমালুম হারিয়ে গিয়েছিল শীত! এমনই সেই অন্তর্ধান যে, কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি উপরে (১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস)!

ততটা আশঙ্কার কথা এ বছর অবশ্য বলছেন না আলিপুর হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। তবে তাঁদের পূর্বাভাস, উত্তুরে হাওয়ার বদলে এ বার ইংরেজি নতুন বছর আসছে রীতিমতো উষ্ণতা গায়ে মেখে! এর পিছনে আছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ বার ইংরেজি নববর্ষে শুধু গরম নয়, রাজ্যের উপকূলবর্তী কোনও কোনও এলাকায় বৃৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।

অথচ বাংলা নববর্ষে গা-জ্বালানো গরম আর ইংরেজি নববর্ষে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা বাঙালির বারোমাস্যায় এটাই দস্তুর। ‘‘ঋতুচক্র নিয়ম মেনে চললে এমনটাই তো হওয়ার কথা,” বলছেন হাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞানী।

কিন্তু কয়েক বছর ধরে ইংরেজি নববর্ষে তেমন হাড়কাঁপানো শীত মিলছে না বললেই চলে। বরং হঠাৎ তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত কিংবা উচ্চচাপ বলয়ের হাত ধরে তাপমাত্রা উঠে যাচ্ছে স্বাভাবিকের উপরে। ২০১১-র জানুয়ারিতে শীত পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলেছিল। তার পরের বছরগুলিতেও বর্ষশেষে তেমন শীত মেলেনি! এর জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন দায়ী কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। তার মধ্যেই এ বার মরসুমের শুরু থেকে সেজেগুজে মাঠে নেমে বেশ অবাক করে দিয়েছিল শীত। সমঝদারেরা দু’হাত পেতে নিচ্ছিলেন শীতের দাক্ষিণ্য। জম্পেশ শীতের সাহচর্যেই কেটেছে বড়দিন। এর মধ্যেই মূর্তিমান রসভঙ্গের মতো হাজির নিম্নচাপ!

সেই নিম্নচাপের কারসাজিতে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা রবিবার থেকেই বাড়তে শুরু করেছে। সোমবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি কম। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, বর্ষশেষের দিন অর্থাৎ কাল, বুধবার থেকেই কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ফের ১৪-১৫ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। উপকূলের কোনও কোনও এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। আর দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে আকাশ মেঘলা থাকারই সম্ভাবনা।

আবহবিদদের একাংশ অবশ্য শীত-রসিকদের আশ্বাস দিয়ে বলছেন, আকাশ মেঘলা থাকলে দিনের বেলা কিছুটা শীত-শীত ভাব মিলতে পারে। তবে সেই শীত তেমন গায়ে লাগবে না বলে মনে করছেন তাঁরা। অনেকের প্রশ্ন, ১৪ ডিগ্রি তো এই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা। তা হলে তাতে গরম পড়বে কেন? আবহবিদদের ব্যাখ্যা, শীতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকাটাই দস্তুর। কম থাকলেই শীত মালুম। স্বাভাবিক বা তার বেশি হয়ে গেলেই গরম।

কয়েক দিন আগে অবশ্য শীতের মেজাজে এতটা ঝিমুনি ছিল না। বরং ঘূর্ণাবর্তকে চোখ রাঙিয়ে দাপটই দেখাচ্ছিল সে। তা হলে উত্তুরে হাওয়া হঠাৎ এ ভাবে ভোল বদলাল কেন?

দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, তামিলনাড়ুর কাছে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়েছে। এবং সেটি আরও শক্তি বাড়ানোরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেই নিম্নচাপের ফলে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। তা বিস্তৃত রয়েছে পূর্ব উপকূলের উপর দিয়ে। তার প্রভাবেই জলীয় বাষ্প ও মেঘ ঢুকবে বাংলার পরিমণ্ডলে। “নববর্ষে যাঁরা দিঘা-পুরী বেড়াতে যাচ্ছেন, আবহাওয়া তাঁদের নিরাশ করতেই পারে,” বলছেন গোকুলবাবু।

তা হলে কি শীতের খোঁজে উত্তরবঙ্গে পাড়ি দেওয়া উচিত?

উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকবে বলেই পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তবে শীতের তেমন মেজাজ চড়া না-ও মিলতে পারে। কেন? হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ সংলগ্ন বাংলাদেশের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার জেরে সেখানেও জলীয় বাষ্পের আনাগোনা বাড়বে। তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। বাড়বে কুয়াশার দাপটও।

শীত-প্রেমিকদের প্রশ্ন, ফের কবে দেখা মিলবে হাড়কাঁপানো শীতের?

আবহবিজ্ঞানীরা জানান, নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি সক্রিয় থাকলে শীতের ফিরে আসা মুশকিল। এই অবস্থায় নিম্নচাপ অক্ষরেখার উইকেট কত দিন টেকে, সেটাই এখন দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE