Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শাসনে বাড়ি ফিরে গ্রেফতার মজিদ মাস্টার

তিক্ত পরিস্থিতি এড়াতে ৪ বছর ৩৫৩ দিন যাননি বাড়িতে। ৩৫৪ দিনের মাথায় বাড়িতে ফেরার অভিজ্ঞতাও তেতো হয়ে রইল সিপিএম নেতা মজিদ আলি ওরফে মজিদ মাস্টারের কাছে। এক সময়ে উত্তর ২৪ পরগনার শাসন প্রায় যাঁর ‘খাসতালুক’ ছিল, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সেই সদস্য শাসনের বাড়িতেই আক্রান্ত হলেন।

পুলিশের গাড়িতে সস্ত্রীক মজিদ মাস্টার।—নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের গাড়িতে সস্ত্রীক মজিদ মাস্টার।—নিজস্ব চিত্র।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শাসন শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৫
Share: Save:

তিক্ত পরিস্থিতি এড়াতে ৪ বছর ৩৫৩ দিন যাননি বাড়িতে। ৩৫৪ দিনের মাথায় বাড়িতে ফেরার অভিজ্ঞতাও তেতো হয়ে রইল সিপিএম নেতা মজিদ আলি ওরফে মজিদ মাস্টারের কাছে। এক সময়ে উত্তর ২৪ পরগনার শাসন প্রায় যাঁর ‘খাসতালুক’ ছিল, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সেই সদস্য শাসনের বাড়িতেই আক্রান্ত হলেন।

পুলিশের সামনেই মজিদকে ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ। পরে বাড়িতে ভাঙচুর চালায় জনতা। যদিও এলাকায় ঢুকে গণ্ডগোল পাকানোর অভিযোগে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় মজিদকেই। হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় মজিদ পাল্টা অভিযোগ করেননি পুলিশের কাছে। তবে ভাঙচুরের ঘটনায় ফোনে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সাধারণ ডায়েরি করে তদন্ত করছে পুলিশ।

এ দিন মজিদকে হেনস্থার ঘটনায় সামনের সারিতে ছিলেন মহিলারা। ‘মজিদ শাসনে ঢুকলে এলাকার মেয়ে-বৌয়েরা আঁশবঁটি নিয়ে তৈরি আছেন’ বলে আগেই হুমকি দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি এ দিনও বলেন, “বেশ হয়েছে। গণ্ডগোল পাকাতেই তো গিয়েছিল (মজিদ)। যাদের ছেলেদের মজিদ খুন করেছে, সেই মা-মেয়েরা ছেড়ে দেবে? যারা এমনটা করেছে, তাদের আমি সাধুবাদ জানাই।” মন্ত্রীর সংযোজন, “বর্ধমান-কাণ্ডে এখন তদন্ত করছে এনআইএ। মজিদ যে বাংলাদেশ থেকে কত দুষ্কৃতীকে এ পারে ঢুকিয়েছিল, তার ইয়ত্তা নেই। এর থেকে অনেক বেশি অস্ত্র মজুত মজিদের ভাঁড়ারে।”

কী বলছেন মাস্টার নিজে?

এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতার চেহারা, কথাবার্তায় হতাশা ছাপ চোখ এড়ায় না।

বললেন, “আমার হিসেবে ৪ বছর ৩৫৩ দিন বাড়ি যাইনি। এ রাজ্যে আমার নিজের বাড়িতে যাওয়াটাই যেন অনধিকার প্রবেশ।”

এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ছেলে মনিরুলকে নিয়ে বারাসতের কাজিপাড়ার বাড়ি থেকে শাসনে পৌঁছন বছর সত্তরের মজিদ। রাজ্যে তৃণমূলের উত্থান-পর্বে মারধর করে মজিদকে এলাকা ছাড়া করা হলেও শাসনের বাড়িতে থেকে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের কয়েক জন। মাঝের পাঁচটা বছর মাস্টার কখনও খুনের অভিযোগে জেল-হাজতে ছিলেন। কখনও বারাসতে সিপিএমের পার্টি অফিসে থেকেছেন।

মাস্টার বাড়ি ফিরেছেন শুনে এ দিন প্রতিবেশীরা ভিড় করতে থাকেন। কাউকে ডেকে বিজয়া, ঈদের শুভেচ্ছা জানান মজিদ। কেউ কেউ মজিদকে নিজের বাড়িতেও ডেকে নিয়ে যান। এ ভাবেই কাটে ঘণ্টাখানেক। ততক্ষণে অবশ্য মজিদের বাড়ির অদূরেই শাসন বাজারে লোক জড়ো হতে শুরু করেছে। যাদের বেশির ভাগই মহিলা।

বেলা ১১টা নাগাদ মজিদের বাড়িতে আসে পুলিশ। তাদের পিছু পিছু জনতা। পুলিশকে না জানিয়ে মজিদ কেন শাসনে ঢুকেছেন, তা জানতে চায় পুলিশ। তর্কাতর্কি বাধে। পিছন থেকে মজিদের বিপক্ষে তখন সুর চড়াতে শুরু করেছে জনতা। পরিস্থিতি তেতে উঠছে দেখে পুলিশ মজিদকে গাড়িতে উঠতে বলে। গাড়িতে তোলার সময়ে মজিদকে ধাক্কা দেয় কিছু মহিলা-পুরুষ। টেনে নামানোর চেষ্টা হয়। শেষমেশ মজিদ ও তাঁর স্ত্রী আসফনূরি বেগমকে গাড়িতে তুলে নেয় পুলিশ। পিছনেই নিজের গাড়িতে ছিলেন ছেলে মনিরুল। সেই গাড়ি তাক করে ইট ছোড়ে জনতা। গাড়ির কাচ ভাঙে। মজিদের ক্ষোভ, “ওরা পুলিশের সামনেই জামা ধরে টানাটানি করে! ধাক্কা মারতে-মারতে গালাগাল দিতে থাকে।” মজিদ যখন থানায়, তখনই তাঁর মেয়ে ফিরোজা বেগম টেলিফোনে জানান, তাঁদের বাড়িতে তাণ্ডব চালাচ্ছে এক দল লোক। জানা যায়, পুলিশের গাড়ি বেরিয়ে যেতেই বাড়িতে ঢুকে শুরু হয় ভাঙচুর। গিয়ে দেখা গেল, গোটা বাড়িটাই লন্ডভন্ড। টেবিল ফ্যান, শো-কেস, ড্রেসিং টেবিল, আলনা ভেঙে টুকরো টুকরো।

ফিরোজা বলেন, “বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পরে ভয়ে ঘরে তালা দিয়ে মাঠে চলে যাই। তালা ভেঙে জিয়াউল হক, ইমান আলির নেতৃত্বে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।” টিভি-ফ্রিজ সহ বেশ কিছু মালপত্র লুঠ হয় বলেও দাবি। থানায় অবশ্য এ সব লিখিত ভাবে জানাননি মজিদ। বলেন, “পুলিশের সামনেই তো হল ঘটনাটা। কার কাছে অভিযোগ করব? করে কী হবে...!” মজিদকে ধরা হল কেন? উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের জবাব, “এলাকায় গিয়ে গণ্ডগোল পাকানোর অভিযোগে।” পরে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পান তিনি। তাঁকে কাজিপাড়ায় পৌঁছে দেয় পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shasan majid master arunakhsya bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE