Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিয়রে হুদহুদ, তিন জেলায় ত্রাণ শিবির

পাঁচ বছর আগের আয়লার স্মৃতি এখনও টাটকা অনেকের মনেই। তাই এ বার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের হানায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সুন্দরবন-সহ দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকায় বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে প্রশাসন। শুরু হয়েছে মাইকে প্রচার। খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। ওই ঝড়ের অভিমুখ যদিও অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূল, তা সত্ত্বেও তিন জেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থায় কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না প্রশাসন।

অতি প্রবল ঘুর্ণিঝড় হুদহুদের সতর্কতায় দিঘার সমুদ্রে স্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টিও হয়। তবে, দুপুরের পরে বৃষ্টি থামে। বিকেলে ভাটা থাকায় সমুদ্র স্নানে অনুমতিও দেয় প্রশাসন। ওল্ড দিঘায় ছবিটি তুলেছেন সোহম গুহ।

অতি প্রবল ঘুর্ণিঝড় হুদহুদের সতর্কতায় দিঘার সমুদ্রে স্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টিও হয়। তবে, দুপুরের পরে বৃষ্টি থামে। বিকেলে ভাটা থাকায় সমুদ্র স্নানে অনুমতিও দেয় প্রশাসন। ওল্ড দিঘায় ছবিটি তুলেছেন সোহম গুহ।

দিলীপ নস্কর ও সামসুল হুদা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৯
Share: Save:

পাঁচ বছর আগের আয়লার স্মৃতি এখনও টাটকা অনেকের মনেই। তাই এ বার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের হানায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সুন্দরবন-সহ দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকায় বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে প্রশাসন। শুরু হয়েছে মাইকে প্রচার। খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির।

ওই ঝড়ের অভিমুখ যদিও অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূল, তা সত্ত্বেও তিন জেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থায় কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না প্রশাসন। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ১৮ হাজার লিটার তেল, ২০ হাজার টন চাল মজুত করা হয়েছে। ২৫টি লরি এবং চারটি স্পিডবোটেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে সুন্দরবন এলাকার জন্য। সোমবার পর্যন্ত দফতরের সব অফিস এবং গুদাম ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের সমুদ্রঘেঁষা চারটি ব্লক সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ এবং পাথরপ্রতিমায় ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ব্লকগুলিতে ত্রিপল ও শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছে। উপকূল এলাকায় স্পিডবোটে কয়েক দিন ধরেই টহলদারি চালাচ্ছে পুলিশ। মত্‌স্যজীবীদের দ্রুত ফিরে আসার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ফ্রেজারগঞ্জ, বালিয়াড়া, মৌসুনি দ্বীপের বাসিন্দাদের ত্রাণ শিবিরে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পঞ্চায়েতগুলিতে মাইকে প্রচার চলছে বলে জানিয়েছেন নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমন্ত মালি। একই ভাবে পাথরপ্রতিমার শ্রীধরনগর, ব্রজবল্লভপুর, জি প্লট এলাকাগুলির নদী ও সমুদ্রবাঁধ রক্ষায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। স্কুলগুলিতে ত্রাণ শিবির এবং জরুরি চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করা রয়েছে।

কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অমিত নাথ বলেন, “জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সব ব্লকের আধিকারিক ও পঞ্চায়েত প্রধানদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। শুকনো খাবার, ত্রিপল মজুত রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কিছু ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।” কাকদ্বীপের বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাও জানান, বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকায় প্রশাসনকে নজরে রাখতে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। সরকারি স্কুলগুলিতে ত্রাণ শিবির, শুকনো খাবার, ত্রিপল মজুত রাখা হয়েছে। ক্যানিং-১, ২ বাসন্তী এবং গোসাবা ব্লক এলাকার সব মত্‌স্যজীবীকে সমুদ্র এবং নদীতে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য জানান, সব ব্লকগুলিতে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সর্বত্র পর্যাপ্ত ত্রাণ মজত করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ এবং সন্দেশখালি এলাকায় শনিবার দুপুর থেকেই ভারী বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়। নদীতে জলস্তর বাড়ে। বড় কলাগাছি, ইছামতী, রায়মঙ্গল-সহ বড় নদীগুলিতে যাতে নৌকা চালাচল না করে তার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় মত্‌স্যজীবীদের মাছ ধরতে যেতে বারণ করা হয়েছে। মহকুমাশাসকের দফতরে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত তা ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে বলে জানান মহকুমাশাসক শেখর সেন।

পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকায় শনিবার সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার ছিল। দুপুরে ঝেঁপে বৃষ্টি নামে। বিকেলে সমুদ্রে ভাটা থাকায় পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নামার নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। তাই সন্ধ্যে পর্যন্ত সৈকতে স্নানে ব্যস্ত ছিলেন অনেকেই। এসডিপিও (কাঁথি) ইন্দ্রজিত্‌ বসু বলেন, “বিপর্যয় মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাইকে সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে।” দিন কয়েক আগে থেকেই হুদহুদ নিয়ে দিঘায় সতর্কতা জারি করেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। সমুদ্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকের মাধ্যমে প্রচার চালানো হয়। সমুদ্রে স্পিডবোটের মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হয়। দিঘা, শঙ্করপুর পেটুয়াঘাট মত্‌স্য বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া অধিকাংশ ট্রলার-সহ মত্‌স্যজীবীরা মত্‌স্যবন্দরগুলিতে ফিরে এসেছে বলে পেটুয়াঘাট ও শঙ্করপুর মত্‌স্যবন্দরের আধিকারিক প্রদ্যোত্‌ পাহাড়ি জানিয়েছেন। প্রয়োজনে যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নিয়ে উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য জানান, উপকূলবর্তী কাঁথি-১ ও ২, রামনগর-১ ও ২, খেজুরি-১ও ২ ব্লকে মাইকে প্রচার চলছে। আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা চালু থাকবে।

(সহ প্রতিবেদন: সুব্রত গুহ ও নির্মল বসু)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE