প্রায় অর্ধ-শতাব্দী ধরে দলে তিনিই ভগবান! এখন ভগবান বৃদ্ধ হয়েছেন। তবু লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে বিস্তর গোলযোগ সইতে হচ্ছে! দলে বিদ্রোহ এবং ভাঙনের মুখে এ বার অবসরের বার্তা দেওয়ার জন্য দলেরই ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ঐতিহাসিক মুহূর্তকে বেছে নিলেন তিনি। সেই সঙ্গেই দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিলেন আগামী প্রজন্মের নেতা-কর্মীদের।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত ফরওয়ার্ড ব্লক ৭৫ বছরে পা দিচ্ছে আজ, রবিবার। স্বাধীনতার লড়াইয়ের সময় কংগ্রেস ছেড়ে সুভাষচন্দ্রের বেরিয়ে এসে নিজের হাতে গড়া দল ছোট হতে হতে ক্ষীয়মান। অন্য রাজ্যে শক্তি তো দূরস্থান, এক কালের বাম গড় পশ্চিমবঙ্গ থেকেই এ বার লোকসভায় একটিও আসন জোটেনি! এমন বিপর্যয়ের প্রহরে দলের রাজ্য নেতারা একের পর এক বিদ্রোহ ঘোষণা করছেন, জেলার নেতারা দল ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে ৭৫ তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে দলীয় মুখপত্রের বিশেষ সংখ্যায় কলম ধরেছেন ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। নিজের বয়স ৯২ পেরিয়েছে জানিয়ে ওই সংখ্যায় অশোকবাবু লিখেছেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে পার্টির সহযোগী কমরেডদের বলছি, আমায় অবসর নিতে দিন। পরিস্থিতিগত ও সাংগঠনিক আরও নানা কারণে তাঁরাই অনুমতি দেননি। তবে এ বার অনুমতি মিলেছে।’ সরে যাওয়ার কথা এ ভাবে প্রায় ঘোষণা করেই অনুজ সহকর্মীদের জন্য কিছু বার্তাও দেন রাজ্যে বামফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার অন্যতম এই কারিগর।
অশোকবাবুর যুক্তি, যে কোনও দলেই পরবর্তী কালের জন্য সবল নেতৃত্ব গড়ে তোলা কঠিন প্রক্রিয়া। তাঁর ভাষায়, ‘শুধু মাথা নয়, একটা পূর্ণাঙ্গ কাজের ক্ষেত্রে হাত, পা-ও সমান জরুরি। দেখতে হবে মাথা তাতে দাঁড়াল, না কাত হয়ে পড়ল’! শুধু তিনি পদ থেকে সরলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না, এই কথা বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। দলের অন্দরে বিক্ষুব্ধেরা অবশ্য এর পরেও প্রশ্ন তুলছেন, মস্তিষ্কই হাত-পা’কে চালনা করে! মাথা ঠিক না হলে বাকি শরীরে সমস্যা তো থাকবেই!
তাঁদের দল যে ‘রেজিমেন্টেড পার্টি নয়, বরং ‘মুক্ত মনের পার্টি’, এই সওয়ালও করেছেন অশোকবাবু। দাবি করেছেন, উপরের মত চাপিয়ে না-দিয়ে গণতান্ত্রিক পথে আলোচনা করেই দল চালানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমি একান্ত ভাবেই মনে করি, পার্টি আর মিলিটারি এক জিনিস নয়’। প্রাক্-স্বাধীনতা যুগে নেতাজির বিদেশে মহানিষ্ক্রমণের পরে ফব যে নেতৃত্বহীন হয়েও লুপ্ত হয়নি, সেই উদাহরণ টানার চেষ্টা করেছেন প্রবীণ নেতা। বলেছেন, দল একাধিক বার ভাঙলেও ধ্বংস হয়নি। নিজেকে ‘এক বৃদ্ধ পার্টিকর্মী’ বলে উল্লেখ করে সহকর্মীদের প্রতি অশোকবাবুর আবেদন, ইতিবাচক পথে ভাবুন।
রাজ্য সম্পাদকের বার্তাতেও সঙ্কট কাটার অবশ্য লক্ষণ নেই। প্রাক্তন মন্ত্রী সরল দেবকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যাঁরা দল থেকে মুখ ফিরিয়েছেন, সেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে শনিবার আলোচনায় বসেছিলেন অশোকবাবু, সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস, রাজ্য নেতা হাফিজ আলম সৈরানিরা। সেখানে বরফ গলেনি। ঠিক হয়েছে, ২৫ তারিখ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের পরে আবার মীমাংসা খোঁজা হবে। আজ প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে ফের তাল ভঙ্গ হয় কি না, আশঙ্কা আছে দলেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy