বিপর্যয়ের পরে নেতৃত্ব বদলের দাবি রোজই জোরালো হচ্ছে। দলের অন্দরে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব পরাজয়ের দায়ও স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু দায় কবুল করার পরে সংগঠনে রদবদল আনতে সম্মেলন প্রক্রিয়া কবে শুরু করা হবে, তা-ই নিয়ে আবার নতুন টানাপড়েন তৈরি হয়েছে সিপিএমে!
নির্ধারিত সূচি মানলে সিপিএমের পরবর্তী পার্টি কংগ্রেস হওয়ার কথা আগামী বছর এপ্রিলে। নিচু তলার সম্মেলন শুরু হয়ে যাওয়ার কথা চলতি বছরের শেষের দিকে। কিন্তু একেবারে সাধারণ বাম সমর্থক থেকে কিছু কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পর্যন্ত যে ভাবে নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবিতে সরব হয়েছেন, তার প্রেক্ষাপটে দলের বড় অংশই চাইছে সম্মেলন-প্রক্রিয়া কিছুটা এগিয়ে আনতে। তাতে কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ খানিকটা সামাল দেওয়া যাবে। আবার কমিউনিস্ট পার্টির নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেই জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত রদবদল যা করার, করা যাবে। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর্যালোচনা করার জন্য ডাকা আলিমুদ্দিনে দলের রাজ্য কমিটি এবং দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ইতিমধ্যেই সেই দাবি উঠেছে। কিন্তু নিজে বসে থেকে সেই দাবি শোনার পরেও সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট এখনও সম্মেলন এগিয়ে আনতে রাজি নন। দিল্লিতে পলিটব্যুরো সদস্যদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাতেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সম্মেলন নির্ধারিত সময়েই হবে! প্রশ্ন উঠেছে, কারাটের উত্তরসূরি ঠিক করতে বিভ্রাটই কি আসলে বিলম্বের কারণ?
সিপিএম সূত্রের খবর, সম্মেলন এগোতে কেরলে দলের বিশেষ কোনও আপত্তি নেই। ত্রিপুরা জানিয়েছে, তাদের রাজ্যে জুলাইয়ে পঞ্চায়েত ভোট। তার পরে সম্মেলন-প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া যেতে পারে। বঙ্গ সিপিএমের একাংশের অবশ্য ধারণা, নভেম্বর-ডিসেম্বরে ১৭টি পুরসভার সঙ্গে (যেগুলির ভোট পিছিয়েছে) আরও ৮২টি পুরসভার ভোট এগিয়ে এনে সেরে ফেলতে পারে সরকার। ভোট আর সম্মেলন একই সঙ্গে সামাল দেওয়া মুশকিল। আগামী অগস্টে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে অবশ্য এই নিয়েই সবিস্তার আলোচনা হওয়ার কথা।
দলেরই একটি সূত্রের ইঙ্গিত, সম্মেলন এগোতে না চাওয়ার পিছনে কারাটের অন্য একটি ভাবনাও কাজ করছে। কারাটের ইচ্ছা, আগামী পার্টি কংগ্রেসে তিনি বিদায় নেওয়ার পরে তাঁরই ঘনিষ্ঠ, ৭৬ বছরের এস আর পিল্লাই দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিন। কিন্তু কেরলের বাইরে অন্য কোথাও দলের বিশেষ কেউ যে পিল্লাইকে মানতে রাজি নন, তা এখন অনেকটাই স্পষ্ট। তাই পরবর্তী বিকল্প ঠিক করার জন্য আর একটু সময় হাতে রাখতেই সম্মেলন এগোতে চাইছেন না কারাট। এবং এই টালবাহানায় বঙ্গ সিপিএমের একটি বড় অংশই ক্ষুব্ধ। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “বর্তমান সাধারণ সম্পাদক যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন আমাদের দলের সাংসদ ছিলেন ৪৩ জন। এখন কমতে কমতে ১১! তিন রাজ্যের বাইরে আমরা সব শক্তি হারিয়েছি। হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের আমলের সঙ্গে তুলনা করলেই তফাতটা বোঝা যাবে!”
আর এক বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক বেনজির বিদ্রোহের মধ্যে পড়েও তাদের রাজ্য কাউন্সিল (বিশেষ অধিবেশন) আরও পিছিয়ে দিয়ে ২৮-২৯ নভেম্বর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে! দুই রাজ্য নেতা উদয়ন গুহ ও হাফিজ আলম সৈরানির ইস্তফা মঞ্জুর করা হচ্ছে না বলেও এ দিন রাজ্য কমিটিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে আবার দল ছাড়তে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক বীথিকা মণ্ডল! দলের অস্বিস্তের সঙ্কটে ফ ব পৃথক ভাবে ১৬ জুলাই রাজ্যের সর্বত্র ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’-এর দাবিতে বিক্ষোভ-অবস্থানের কর্মসূচি নিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy