নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংঘাতের প্রশ্নেও এ বার নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে কমিশনের মতো সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, এমন পরিস্থিতি এ রাজ্যে আগে হয়নি।
কলকাতা প্রেস ক্লাবে শুক্রবার ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বুদ্ধবাবুর কাছে প্রশ্ন ছিল, কমিশনের সঙ্গে এখন শাসক দল তৃণমূল যা করছে, বাম জমানাতেই সেই সংস্কৃতির সূচনা হয়েছিল বলে কি তিনি মানবেন? এই তত্ত্ব মানতে তিনি নারাজ জানিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “কিছু ব্যাপারে মতপার্থক্য হয়েছিল। কিছু কথাও হয়েছিল। কিন্তু সব দিক থেকে একেবারে খোলাখুলি কোনও লড়াই হয়নি। কমিশনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক পদাধিকারীকে (বিনোদ জুৎসি) প্রায় দুষ্কৃতী বানিয়ে ছাড়া হল! যে ভাষায় সরকারের সর্বোচ্চ নেত্রী কমিশনকে আক্রমণ করছেন, এ সব কখনও শোনা যায়নি!” বাম জমানায় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এক সময় তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষনকে কটাক্ষ করেছিলেন। সিপিএম নেতা হিসাবে বিমান বসু কমিশনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। বুদ্ধবাবু অবশ্য তাঁর নিজের সময়ের দৃষ্টান্তই দেখাতে চেয়েছেন। বলেছেন, “আমি ১০ বছর দায়িত্বে ছিলাম। কমিশনের বিরুদ্ধে আমার একটা বাক্যও বার করে দেখাতে পারবেন?”
উদাহরণ দিয়ে বুদ্ধবাবু জানান, কমিশন রাজ্যে যখন পাঁচ দফায় বিধানসভা ভোট ঘোষণা করেছিল, তখন কেউ কেউ তাঁর কাছে প্রশ্ন তুলেছিলেন এ জিনিস মেনে নেওয়া হবে কি না? তাঁর উত্তর ছিল, এক দিনের ম্যাচ বা পাঁচ দিনের টেস্ট দু’টোতেই তিনি রাজি! এই সূত্রেই এ দিন বুদ্ধবাবুর মন্তব্য, “কিছু বিরোধ এক জিনিস। আর সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা, এ জিনিস কখনও হয়নি!” একই সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টই জানিয়েছেন, এ বার কমিশনের কাজে তাঁরা মোটের উপরে সন্তুষ্ট। বুদ্ধবাবুর কথায়, “আমি সন্তুষ্ট। তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। আমার সহকর্মীদের সঙ্গেও এই নিয়ে মত বিনিময় হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা প্রতি বারই প্রয়োজনের তুলনায় একটু কম থাকে। এ বারও তা-ই।” বাহিনী মোতায়েন নিয়েও বড় কোনও অভিযোগ নেই, জানান বুদ্ধবাবু।
তৃণমূলের তরফে অবশ্য এ দিনও নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা অব্যাহত ছিল। বর্ধমানে এ দিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছেন, “কমিশনের এখনকার কর্তাব্যক্তিরা জানেন না, ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০১ থেকে ২০০৮ সালের কথা। ওঁরা তাই সিপিএমের কথা শুনে ভাবছেন, এ রাজ্যে ভোটের পরিবেশ নেই!” ওই জেলারই রায়নার উদাহরণ দিয়ে মুকুলবাবুর বক্তব্য, “আজ মানুষ যখন অবাধে ভোট দিতে পারছেন, তখন সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি বলছে, রাজ্যে ভোটের পরিবেশ নেই। আর কয়েকটা সন্ধ্যার আড্ডা চালানো টিভি, কয়েকটা খবরের কাগজ গেল-গেল রব তুলছে!” নৈহাটির এক সভায় ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে আর এক মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে পূর্ণাঙ্গ বিতর্কের দাবিও তুলেছেন।