হ্যাপি সিংহ এবং শেখ নিজামুদ্দিন।— ফাইল চিত্র।
প্রেসিডেন্সি জেলে দণ্ডিত বন্দি হ্যাপি সিংহ খুনের মামলায় তদন্তে নামল সিআইডি। তদন্তের স্বার্থে ওই হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শেখ নিজামুদ্দিনকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে এ সপ্তাহেই আদালতে আবেদন জানাতে পারে তারা। ওই ঘটনায় জেল-কর্তৃপক্ষ এবং হাসপাতালের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে সিআইডি।
শনিবার সিআইডি-র তদন্তকারী দল প্রেসিডেন্সি জেলে যায়। সিআইডি অফিসারেরা সেখানে খুনের জায়গাটি ঘুরে দেখেন। দু’-এক জন বন্দি এবং কারারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন। সিআইডি সূত্রের খবর, নিজাম যে মানসিক ভারসাম্যহীন, তা জানা সত্ত্বেও জেলের ভিতরে তাকে অন্য আসামিদের সঙ্গে খোলা জায়গায় কেন রাখা হয়েছিল, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। গোয়েন্দারা এর জবাব পাওয়ার চেষ্টা করছেন। হ্যাপির চিকিৎসায় জেল হাসপাতাল এবং এম আর বাঙুর হাসপাতালের ভূমিকা যথাযথ ছিল কি না, সেই বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছে রাজ্য সরকারের তদন্তকারী ওই সংস্থা।
খাদিম-কর্তা অপহরণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হরপ্রীত সিংহ ওরফে হ্যাপি গত ৫ মে সকালে প্রেসিডেন্সি জেলের ভিতরে খুন হন। হ্যাপির আইনজীবী মন্দিরা বসু সে-দিনই অভিযোগ করেন, তাঁর মক্কেলকে চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। কারা দফতর ও পুলিশি তদন্তের সঙ্গে সঙ্গে হ্যাপি-হত্যার তদন্তভার সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। গত সপ্তাহেই এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। তার পরেই, শনিবার সিআইডি-র তদন্তকারী দলটি তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে।
তদন্তকারী দলের এক কর্তা জানান, হ্যাপির সেলে লাগানো সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে তাঁরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন, সে-দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ৩৪ নম্বর সেলের বাইরে হ্যাপি যোগাসন (ডন) শেষ করে শবাসন করছিলেন। তখনই হ্যাপির যোগাসনে ব্যবহৃত ইট হাতে তুলে নিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে নিজাম। ফুটেজে আরও দেখা গিয়েছে, হ্যাপিকে আঘাত করার পরে নিজাম ইটটিকে ফের তুলে নিয়ে নিজের সেলের সামনে রেখে দেয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই আহত হ্যাপিকে প্রথমে জেল হাসপাতালে এবং পরে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাঙুরে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মৃত্যু হয় হ্যাপির।
হ্যাপি-হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত নিজামুদ্দিন ওই ঘটনার আগে অন্য এক বন্দির কান কামড়ে দিয়েছিল। আর এক বার আক্রমণ করেছিল অন্য এক বন্দিকেও। তদন্তে নেমে এ-সব ঘটনার কথা জেনে জেল-কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে বিস্ময় করেছে সিআইডি। তাদের প্রশ্ন, নিজামের আচরণে অস্বাভাবিকতা থাকা সত্ত্বেও জেল-কর্তৃপক্ষ কেন তাকে অন্য বন্দিদের সঙ্গে রেখেছিলেন? তদন্তে এই প্রশ্নেরও জবাব খোঁজা হচ্ছে বলে জানান এক গোয়েন্দা-কর্তা।
হত্যাকাণ্ডের পরে নিজামের বাবা এবং ভাইয়েরাও প্রশ্ন তুলেছিলেন, জেলে নিজামকে আলাদা রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি কেন? জেলেই তার মানসিক অসুস্থতা ধরা পড়েছিল। কিন্তু জেলে গুরুত্ব দিয়ে তার চিকিৎসা করা হয়নি এবং তাকে ঠিকমতো খাবার ও জল দেওয়া হতো না বলেও পরিবারের অভিযোগ।
খুনে ঘটনার পরে অবশ্য প্রেসিডেন্সি জেলের কর্তৃপক্ষ আর কোনও ঝুঁকি নেননি। জেলের ১০ নম্বর সেলে পৃথক নজরদারিতে রাখা হয়েছে নিজামুদ্দিনকে। তার জন্য আলাদা রক্ষীর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
শনিবার সিআইডি-র তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা কিছু বন্দি এবং কারারক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তদন্তকারীরা জানান, সিসিটিভি-র ফুটেজের সঙ্গে অন্যান্য বন্দি এবং রক্ষীদের বক্তব্য প্রাথমিক ভাবে মিলে গিয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্টেও হ্যাপির মাথায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তা থেকে তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, মানসিক সমস্যা থেকেই নিজাম সেই দিন হ্যাপিকে আচমকা আক্রমণ করেছিল। জেলের ভিতরের ঘটনার পাশাপাশি হ্যাপির চিকিৎসায় ত্রুটি হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে সিআইডি।
গোয়েন্দারা জানান, এই বিষয়ে জেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের তো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবেই। সেই সঙ্গে বাঙুর হাসপাতালেও যাবেন তাঁরা। ঘটনার দিন সেখানকার যে-সব চিকিৎসক হ্যাপির চিকিৎসায় যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে। কারণ, জেল হাসপাতালে চিকিৎসার পরে হ্যাপির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বাঙুরে। সেখানেই হ্যাপি মারা যান। সিআইডি তাই সেখানকার চিকিৎসকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy