অলঙ্করণ: শেখর রায়।
সুতোর গয়না আমার বেশ লাগে। পাটের গয়না, কাঠের গয়নাও পরি। ইচ্ছে হলে কখনও রুপোলি ঝুমকো। সোনার গয়না দেখতে বিশেষ ভাল লাগে না। তাই পরি কম। নেইও খুব একটা।
সিন্ধুর কাছে এখন রুপো। নাই বা জুটল সোনার পদক। আমি খুব খুশি। ও আমাদের সোনা মেয়ে। সিন্ধু আমাদের গৌরব। ওর ক্ষিপ্রতা, দৃপ্ত চলা-ফেরা, ব্যক্তিত্ব, প্রত্যয় দেখে আমি মুগ্ধ। কুর্নিশ জানাই ওকে।
আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের নারীদের উপস্থিতি, জয়, এই নিয়ে চর্চা চলছে, চলবে। কারণ দীপা, সাক্ষী, সিন্ধু, প্রত্যেকেই নারী। কারণ কন্যা-ভ্রূণ হত্যা, পণ-প্রথা আজও, ২০১৬-তে বর্তমান। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে, শহরে।
দেখেছি এমন এক শিক্ষিতাকে, যিনি সারাজীবন একতরফা সেবা করেই কাটিয়ে দিলেন। বিনিময়ে কিছু আশা করে উঠতে পারলেন না। আরও এক শিক্ষিতা, তিনি চাকরি না করে শুয়ে বসে, ফোনে পরনিন্দা করে দিন কাটান। তাঁর খেলনা-বাটির সংসার আর আলমারিতে নতুন শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, গয়না সাজান বুক ফুলিয়ে। দেখেছি শিক্ষিতাকে, যিনি তাঁর কন্যাকে পুঁথিগত বা প্রকৃত শিক্ষা, কোনওটাই দিয়ে উঠতে পারেননি। কন্যাকে তত্ত্ব সাজিয়ে বিয়ে দিয়েই তিনি খুশি। খুব শান্তিতে আছেন। নিজেকে এবং কন্যাকে নিয়ে তাঁর খুব গর্ব। আমার চোখে দেখা কলকাতা শহরের নারী এঁরা।
টিভি’র পর্দাতেও আদর্শ নারী চরিত্র হল স্বল্পভাষী, একা দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ। তাঁদের কিছু চাইতে নেই, বলতে নেই। তাঁদের সব মেনে নিতে হয়। সহ্য করতে হয়। একা ঘরে গিয়ে কাঁদতে হয়। কেন? নিজের অধিকার পাওয়ার লড়াই করতে নেই কেন? কেন তেমন নারী চরিত্র দেখি না, যাঁরা আগামীর পথ দেখতে পারে?
আগ্রাসনী সিন্ধু।
মুশকিল হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী গলা তুলে ঝগড়া করে ফেলে...লড়াই সে করতে শেখেনি। ঝগড়া না করেও যে লড়াই জাহির থাকতে পারে, সেই বোধটা তৈরি হয়ে ওঠেনি।
তবে আমি এমন নারীও দেখেছি, যিনি রোজগার না করলেও, সন্তানকে মন-প্রাণ দিয়ে মানুষ করেছেন। দেখেছি সেই নারীকে, যাঁর প্রখর আত্মসম্মান বোধ, যিনি অ্যালিমনি না চেয়েই ডিভোর্সে রাজি হয়েছিলেন। এমন নারীও চিনি, যিনি বিয়েতে দু-তিনটে নতুন শাড়ি ছাড়া আর কিছু কিনতে দেননি কাউকে। পুরনো জামা-কাপড় নিয়েই ঘর বদল করেছেন।
তবু, এখনও অনেকটা পথ বাকি।
বিয়েতে সোনা কেনা বন্ধ যেদিন হবে, সেদিন নারী মুক্ত হবে। সোনা-রুপো না কিনে যেদিন সোনার মেয়ে তৈরি হবে। সে দিন হবে নারীর মূল্যায়ণ। তখন সে সিন্ধু, সাক্ষীর মতো বিশ্ব জয় করার ক্ষমতা রাখবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy