Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Endometriosis

যৌন সঙ্গমে সমস্যা? এন্ডোমেট্রিওসিস নয় তো?

সংখ্যাটা আঁতকে ওঠার মতোই! বিশ্বের ১৭ কোটি ৬০ লক্ষ নারী এন্ডোমেট্রিওসিসের ভয়ানক ব্যথায় কাবু। অবশ্য আধুনিক চিকিৎসায় এই অসুখটিকে কব্জা করে রাখা কঠিন নয়। কিন্তু চিকিৎসার ব্যাপারে এখনও সচেতনতার অভাব প্রায় সব দেশেই। মার্চ মাসকে এন্ডোমেট্রিওসিস সচেতনতার মাস হিসেবে পালন করা হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। আমাদের দেশও সামিল। এই যন্ত্রণাদায়ক অসুখটি সম্পর্কে নানা খুঁটিনাটি তথ্য জানালেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। সংখ্যাটা আঁতকে ওঠার মতোই! বিশ্বের ১৭ কোটি ৬০ লক্ষ নারী এন্ডোমেট্রিওসিসের ভয়ানক ব্যথায় কাবু। অবশ্য আধুনিক চিকিৎসায় এই অসুখটিকে কব্জা করে রাখা কঠিন নয়। কিন্তু চিকিৎসার ব্যাপারে এখনও সচেতনতার অভাব প্রায় সব দেশেই।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ১১:৪৭
Share: Save:

আধুনিক চিকিৎসা তো দুরের কথা, সামান্য ব্যথার ওষুধও তখন অধরা। এ দিকে বাড়ির মেয়েদের অনেকেই প্রতি মাসে ব্যথা আর যন্ত্রনায় শয্যাশায়ী। হিপোক্রিটিস ব্যথার উৎস অনুসন্ধান করে এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে একটা অস্পষ্ট ধারনা দেন। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেকার হিপোক্রিটিসের দেখানো পথে কার্ল ভন রকিট্যান্সকি ১৮৬০ সালে প্রথম মাইক্রোস্কোপের নীচে দেখে এই অসুখটির বিজ্ঞান সম্মত ব্যখ্যা করেন। কিন্তু রোগের উপশম জানতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সময় লাগে আরও অনেক বেশি। ইদানীং এন্ডোমেট্রিওসিস রোগটা মহামারির মত ছড়িয়ে পড়েছে। শহর, মফঃস্বল গ্রাম নির্বিশেষে অজস্র নারী এন্ডোমেট্রিওসিস নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন।

অসুখটা ঠিক কী

হিলারি ক্লিন্টন, সেলিনা জেটলি বা হালের ক্যাটরিনা কাইফের মত অনেক সেলিব্রিটিই পিরিয়ডের সময় তলপেটের অসহ্য যন্ত্রনায় কাবু হয়ে পড়তেন। এন্ডোমেট্রিওসিস নামক অসুখের এটাই বৈশিষ্ট্য। অবশ্য আধুনিক চিকিৎসায় এই কষ্টকর রোগটিকে কিছুটা জব্দ করা যায়। মেনার্কি থেকে সূত্রপাত এন্ডোমেট্রিওসিসের, চলতে পারে মেনোপজ পর্যন্ত। আসলে জরায়ু বা ইউটেরাসের এক প্রয়োজনীয় আবরণ হল এন্ডোমেট্রিয়াম। বয়ঃসন্ধির একটি মেয়ে যখন ঋতুমতী হয়, নানান হরমোনের প্রভাবে তার জরায়ু বা ইউটেরাসের অন্দরে ওলট পালট ও পুনর্গঠন চলতে থাকে। সন্তান ধারণ বা ঋতুনিবৃত্তি পর্যন্ত হরমোনের ওঠাপড়ায় ইউটেরাসের নানান পরিবর্তন হয়। প্রত্যেক মাসে পিরিয়ডের পর ইউটেরাসের মধ্যে থাকা এন্ডোমেট্রিয়াম লাইনিংটি ক্রমশ পরিণতি পায়। সেই পিরিয়ডে প্রেগনেন্ট না হলে এন্ডোমেট্রিয়াম লাইনিংটি ধীরে ধীরে খসে যায়। ২৮ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে এন্ডোমেট্রিয়াম ইউটেরাস থেকে খসে গেলেই শুরু হয় মাসিক ঋতুস্রাব। এই ব্যাপারটা স্বাভাবিক। জরায়ু থেকে ছিঁড়ে আসে বলে পিরিয়ডের দু তিনদিন আগে থেকে তলপেটে অল্পস্বল্প ব্যথা হয়। কিন্তু এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ হলে তখন ব্যাপারটা বদলে যায়। ইউটেরাসের ভিতরে ছাড়াও এর বাইরের দিকে, ওভারিতে, ফ্যালোপিয়ান টিউবে এমনকী কখনও কখনও রেক্টাম বা মলাশয়েও এন্ডোমেট্রিয়াম লাইনিং তৈরি হয়। পিরিয়ডের আগে হরমোনের প্রভাবে এই সব অস্বাভাবিক এন্ডোমেট্রিয়াম টিস্যুগুলিও ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে এবং ব্লিডিং হয়। আর এই কারণেই পেটে প্রচন্ড ব্যথা করে।

আরও পড়ুন: নেশার সঙ্গে ডিভোর্স হলেই মুখের ক্যানসার বিদায় নেবে

যে সব টেস্ট করাতে হয়

পিরিয়ড শুরুর আগে অল্পস্বল্প পেট ব্যথা প্রায় সকলেরই হয়। কিন্তু অসহ্য ব্যথা হলে আর ব্যথার কমাতে ওষুধ খেতে হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো দরকার। প্রতি মাসে aযদি একই সমস্যা চলতেই থাকে, তাহলে আল্ট্রাসোনোগ্রাফির সাহায্যে ওভারি ও ইউটেরাস খুঁটিয়ে দেখা হয়। যদি ডিম্বাশয়ে সিস্ট দেখতে পাওয়া যায়, সন্দেহ হলে ল্যাপারোস্কোপির সাহায্যে খুঁটিয়ে দেখা দরকার। কেন না, পলিসিস্টিক ওভারি হলে সিস্টগুলি খুব একটা সমস্যা সৃষ্টি করে না। কিন্তু যদি দেখা যায় যে সেগুলি রক্তে পরিপূর্ণ তা হলে বুঝতে হবে অসুখটা এন্ডোমেট্রিওসিস। রোগীর সঙ্গে কথা বলে সম্ভব হলে একই সিটিং-এ ল্যাপারোস্কোপির সাহায্যে এগুলি নির্মূল করে ফেলতে হবে। নইলে এক দিকে কষ্ট বাড়বে, অন্য দিকে অ্যাডহেশন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। অর্থাৎ ওভারি, ইউটেরাস, ফ্যালোপিয়ান টিউব ইত্যাদি জড়িয়ে গিয়ে জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় ওভারি ও ইউটেরাসে এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে সলিড টিউমার তৈরি হয়। এক দিকে যন্ত্রণাদায়ক, অন্য দিকে বন্ধ্যাত্বের এক অন্যতম কারণ। তাই রোগ নির্ণয়ের সঙ্গে সঙ্গেই ডায়াথার্মি বা লেসারের সাহায্যে এগুলি নির্মূল করা প্রয়োজন। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত চেক আপ করানো দরকার।

হরমোন দিয়ে চিকিৎসা

ওরাল পিল নিয়ে অনেকের মনেই ভুল ধারণা আছে। অসুখের শুরুতে কনট্রাসেপটিভ পিল দিয়ে চিকিৎসা করলে এন্ডোমেট্রিওসিস অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অবিবাহিত মেয়েদের কনট্রাসেপটিভ পিল নেওয়ার ব্যাপারে অনেক মায়েরা কিন্তু কিন্তু করেন। মনে রাখবেন এটা নেহাতই একটি ওষুধ। বাড়াবাড়ি রোগের ক্ষেত্রে সার্জারি করানো দরকার। অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে ভয় পেলে চলবে না। আবার অনেক সময় এন্ডোমেট্রিওসিসের কষ্ট সহ্য করতে করতে ডিপ্রেশন হতে পারে। বাড়ির লোকজনের সহমর্মিতা ও দরকার হলে কাউন্সেলিং করাতে হতে পারে। আর সন্তান ধারণে সমস্যা হলে ইনফার্টিলিটি ফিজিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করানো উচিত।

আরও পড়ুন: নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ, দাঁতের ক্ষয় আর নয়

নিয়ন্ত্রণে রাখুন

এন্ডোমেট্রিওসিসের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখনও বিশ বাঁও জলে। তাই রোগ প্রতিরোধের কোনও উপায়ও জানা নেই। আর এ কথাও মনে রাখা উচিত যে এন্ডোমেট্রিওসিস এমনই এক অসুখ যা সম্পূর্ণ ভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চললে ডায়বিটিস বা হাইপ্রেশারের মতো ওষুধের সাহায্যে রোগটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। টিকা আবিষ্কারের চেষ্টায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। হয়তো আগামী দিনে প্রতিষেধকের সাহায্যে অসুখটাকে আটকে দেওয়া যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Endometriosis Cyst Healthy Living
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE