Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

স্টিয়ারিং এ বার মেয়েদের হাতে 

সেলাই, বাঁশ-বেতের কাজ বা আচার তৈরির মতো চেনা পথ নয়। ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের মহিলাদের স্বনির্ভর করতে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৬:০৪
Share: Save:

নিজের পায়ে দাঁড়াবেন মেয়েরা। শক্তি জোগাবে হাতের স্টিয়ারিং।

সেলাই, বাঁশ-বেতের কাজ বা আচার তৈরির মতো চেনা পথ নয়। ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের মহিলাদের স্বনির্ভর করতে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন। ঠিক হয়েছে, বাছাই করা কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাকে ছোট গাড়ি ও অ্যাম্বুল্যান্স চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার পর তাঁদের দেওয়া হবে গতিধারা প্রকল্পের গাড়ি। জঙ্গলমহলের এই জেলার শহরাঞ্চলে এক-দু’জন মহিলা টোটো চালক দেখা গেলেও অ্যাম্বুল্যান্স কিংবা ভাড়ার গাড়ি মহিলারা চালাচ্ছেন, এমন দৃশ্য প্রায় বিরল। সেখানে বেলপাহাড়ির মতো প্রান্তিক এলাকায় মেয়েদের স্বনির্ভরতায় এমন ভিন্নধর্মী উদ্যোগ ঘিরে তাই জল্পনা শুরু হয়েছে।

বেলপাহাড়ি মাওবাদীদের পুরনো ঘাঁটি। একটা সময় এই ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম থেকেই একের পর এক মাওবাদী নেত্রী উঠে এসেছেন। বগডুবার জাগরী বাস্কে, বিদরি গ্রামের সুলেখা মাহাতোরা অত্মসমর্পণ করে মূলস্রোতে ফিরেছেন।

মাজুগোড়া গ্রামের যমুনা মাহাতো কয়েক বছর আগে ওড়িশায় নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। আর বহু হামলা-নাশকতার নেতৃত্বে থাকা মাওবাদী নেত্রী জামিরডিহা গ্রামের জবা মাহাতো এখনও ফেরার।

বেলপাহাড়ির ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী গ্রামগুলিতে নতুন করে মাওবাদী সক্রিয়তা শুরু হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। স্থানীয় যুবক-যুবতীদের মগজধোলাইয়ের চেষ্টা হতে পারে বলেও আশঙ্কা। তা ছাড়া, বেলপাহাড়িতে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করেছে আদিবাসী মঞ্চ। এমন আবহে মহিলাদের গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি মানছেন, “এলাকাবাসীকে ঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই এই কর্মসূচি। তাছাড়া, মেয়েরা তো শক্তির আধার। সব কাজই তাঁরা পারেন। বেলপাহাড়ির মহিলারাও যখন গাড়ি চালাতে শুরু করবেন, আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হবেন, তখন আর অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।” মাওবাদীদের থেকে এলাকাবাসীকে বিচ্ছিন্ন করতেই কি এই কর্মসূচি? এ বার জেলাশাসকের জবাব, “প্রশাসনের উদ্দেশ্য, বাইরে থেকে যাতে কেউ ভুল বোঝাতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা।” প্রকল্প রূপায়িত হলে বেলপাহাড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থার হাল ফিরবে বলেও আশা।

তবে যাঁদের জন্য এই উদ্যোগ, সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীরা মহিলারা প্রকল্প নিয়ে কিছুটা দ্বিধায়। আমলাশোলের এক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য রেণুকা সিংহ বলেন, ‘‘সাইকেল চালাতে জানি। গাড়ি চালাতে পারব কিনা, না-শিখলে বলতে পারব না।’’ শিমুলপালে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য শ্রীমতী শবরের কথায়, ‘‘দলের বেশির ভাগ সদস্য বিবাহিত। সংসার সামলে গাড়ি চালানোর সময় বের করা সকলের পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে। তবে কেউ কেউ ডাকাবুকো আছেন। তাঁরা গাড়ি চালাতে পারবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

District Administration Jhargram Training Driving
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE