Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Manabi News

রিকশা চালিয়েই তিন সন্তানকে মানুষ করছেন এই মা

যিনি রাঁধেন, তিনি রিকশাও চালান! লোকে তাঁকে ‘ক্রেজি আন্টি’ বলে। তাতে থোড়াই কেয়ার! নিজের লক্ষ্যে অবিচল ‘পাগল আন্টি’। এক চিলতে ঘরের দাওয়ায় রাখা থাকে নীল-লাল-সবুজ রঙা ঝকঝকে রিকশাটা।

মোসাম্মাৎ জেসমিন। বাংলাদেশের একমাত্র মহিলা রিকশাচালক।

মোসাম্মাৎ জেসমিন। বাংলাদেশের একমাত্র মহিলা রিকশাচালক।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ১৪:১১
Share: Save:

যিনি রাঁধেন, তিনি রিকশাও চালান!

লোকে তাঁকে ‘ক্রেজি আন্টি’ বলে। তাতে থোড়াই কেয়ার! নিজের লক্ষ্যে অবিচল ‘পাগল আন্টি’।

এক চিলতে ঘরের দাওয়ায় রাখা থাকে নীল-লাল-সবুজ রঙা ঝকঝকে রিকশাটা। সকাল হলেই শাড়ি পরে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিন সন্তানের মা। তার পরের রুটিনটা ৩৬৫ দিনে বদলায় না এতটুকু। সকাল থেকে রাত রোজ ৮ ঘণ্টা ডিউটি করে বাড়ি ফেরেন মোসাম্মাৎ জেসমিন। বাংলাদেশের একমাত্র মহিলা রিকশাচালক। ‘‘ছেলেদের অনাহারে রাখা সম্ভব ছিল না। ওদের শিক্ষিতও করতে চেয়েছিলাম। আল্লা আমাকে হাত-পা দিয়েছেন। ভিক্ষা তো করতে পারব না। তাই কাজ করি,’’—বললেন গর্বিত মা।

বাহন নিয়ে চট্টগ্রামের রাস্তায় জেসমিন

কিন্তু, হঠাৎ রিকশা চালানোর কথা মাথায় আসল কেন মোসাম্মতের? সংসারের সব দায়িত্ব ছেড়ে অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়ে ঘর ছেড়েছিলেন স্বামী। তিন ছেলেকে নিয়ে যেন অথৈ জলে পড়েছিলেন জেসমিন। একটা কাজ দরকার। যে করেই হোক বাঁচাতে হবে সংসারটা। প্রথমে লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের জেসমিন। কিন্তু সেই টাকায় ছেলেদের খাওয়াই জোটে না ঠিক মতো, পড়াবেন কী ভাবে? ছেড়ে দিলেন। আবারও শুরু হল কাজের খোঁজ। স্থানীয় একটি কাপড়ের কারখানায় কাজে ঢুকলেন ঠিকই, কিন্তু সেখানে হাড়ভাঙা খাটুনি। বেতনও যত্সামান্য। অতএব আবারও বিফল মনোরথ হতে হয় জেসমিনকে। এ বার উপায় বেরোল ঠিকই। কিন্তু তার ব্যবহারিক প্রয়োগ সহজ হল না।

প্রয়োজনে হাত লাগান মেরামতির কাজেও

প্রতিবেশীর রিকশাটি ভাড়া নিতে চাইলেন। নিজেই চালাবেন রিকশা। রিকশা চালিয়েই রোজগার করবেন। সকলেই অবাক তাঁর সিদ্ধান্তে। কিন্তু বদ্ধপরিকর জেসমিন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে। লোকে আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করত। কিন্তু আমি না রোজগার করলে ছেলেদের বাঁচাব কী করে?’’ শুধু তাই নয়, রিকশা চালানো শুধু পুরুষদের পেশা, মেয়েদের এই পেশায় আসার কোনও অধিকার নেই— এমনও শুনতে হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা রিকশা চালক জেসমিনকে। তিনি বলছেন, ‘‘অনেকে বলতেন ইসলাম ধর্ম মহিলাদের ওই ধরনের কাজকে অনুমতি দেয় না। অনেকে রিকশা চড়ে টাকা দিতে চাইতেন না। একই দূরত্ব যাওয়ার জন্য পুরুষ রিকশাওয়ালাদের থেকে কম টাকাও দেওয়া হত আমাকে।’’

কিন্তু হাজার ব্যঙ্গ-কটূক্তিও থামাত পারেনি জেসমিনকে। রিকশার দৈনিক ভাড়া মিটিয়ে ৬০০ টাকা হাতে থাকে তাঁর। এ ভাবেই কেটে গিয়েছে পাঁচ বছর। শাড়ি পরে, লাল হেলমেট মাথায় রিকশা চালিয়ে চট্টগ্রামের রাস্তায় এখন যথেষ্ট জনপ্রিয় এই ‘পাগল আন্টি’।

(ছবি: সংগৃহীত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE